দেশের সময় , কলকাতা : আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তার-ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় একমাস ধরে রাজ্যসহ দেশজুড়ে আন্দোলন চলছে। এদিকে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোর হাতে গোনা কয়েকটি দিন বাকি।
এবার সেই উৎসবে ফেরার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্ন সভাঘরে পুজো সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বলেন, তদন্ত এখন সিবিআইয়ের হাতে। ওরা বিচার দেবে।
ওরা যাতে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে দ্রুত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে তা দেখুক। তবে এবার পুজোটা ভালো করে দেখতে হবে। পুজোতে ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন।
প্রসঙ্গত, আর জি কর কাণ্ডের পর বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি সরকারি অনুদানের টাকা নিতে অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে, রাজ্যজুড়ে অশৌচ পালনের দাবিতে অনেকে উৎসব বয়কটের আওয়াজ তুলছেন।
এই অবস্থায় মমতার দাবি, পুজোটা ভালো করে দেখতে হবে। মমতা বলেন, ডাক্তারদের সমস্ত দাবি মানা হয়েছে। সেইদিনই সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। দুজনকে আমরা সাসপেন্ড করেছি। তা সত্ত্বেও যারা কুৎসা করছে, তারা কী চায়! তারা বিচার চায় নাকি ঘুলিয়ে দিতে চায়।
মমতা বলেন, এই পুজোকে কেন্দ্র করে অনেক গরিবলোকের রুজি-রোজগার হয়। মনে রাখতে হবে অনেক বিদেশি অতিথিরা আসেন। সারা দেশ থেকে অনেক মানুষ আসেন। তাঁদের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয়। মমতা জোর দিয়ে বলেন, ধর্ম যার যার, মনে রাখবেন উৎসব কিন্তু সবার। দুর্গাপুজো আমাদের সেরা উৎসব। এই উৎসবে যেন কোনও ভুলভ্রান্তি, অপপ্রচার, কুৎসা, ষড়যন্ত্র না হয়।
কিছু প্রচারমাধ্যমকে নিশানা করে মমতা আরও বলেন, তারা ভুলে গেছে বাংলায় একটা উৎসব আসছে। এই সময় কিছু গরিবমানুষ করে খায়। ঢাকি থেকে হকার এই সময় অনেক টাকার ফ্লো হয়। অনেকে চাইছে অর্থনৈতিক ধ্বংস করতে। সে বিষয়ে উৎসবের মরশুমে সতর্ক থাকার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তিনি আরও বলেন, সিপিএম আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে, আর বিজেপি আমাকে মানসিক নির্যাতন করছে।
পাশাপাশি পুলিশকে বারংবার কাঠগোড়ায় তোলা নিয়েও এ দিন উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ প্রতিবাদ মিছিল করতে পুলিশের অনুমতি নেওয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ উপর তলা থেকে অনুমতি আদায় করে নিচ্ছে। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে না? ভাগ্যিস এই ক’দিন পুলিশ সামলেছে। মার খেয়েছে। নিজেদের রক্ত দিয়েছে। কিন্তু কারও রক্ত নেয়নি।’ মমতার সংযোজন, ‘পুলিশও মানুষ। তাঁদেরও সংসার রয়েছে। যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে বলে যাচ্ছে কিছু মানুষ।’
সোমবার নবান্নের সভাঘর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কলকাতার পুলিশ কমিশনার আমার কাছে অনেকবার এসেছেন পদত্যাগ করার জন্য। সামনে পুজো। আপনারাই আমাকে বলুন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যে মানুষটার উপর দেব তাঁকে তো জানতে হবে কোন পাড়ায় কী পুজো, সেখানে কী থিম, কোথায় কত পুলিশ পোস্টিং রয়েছে? এটা পুজোর সময়। কিছুদিন ধৈর্য ধরলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?’
আরজি করের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বারংবার প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। গত ১৪ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তাণ্ডব চালায় কিছু দুষ্কৃতী। অভিযোগ ওঠে, হামলা ঠেকাতে পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি। এরপরেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বিনীত গোয়েলের ইস্তফার দাবি আরও জোরাল হয়। এমনকী, জুনিয়র চিকিৎসকদের লালবাজার অভিযানের অন্যতম দাবি ছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনারের ইস্তফা। কিন্তু, এখনই পুলিশ কমিশনারকে সরানোর বিষয়ে তিনি ভাবছেন না, তা জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।