দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ ৫০ বছর পরে চাঁদে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে নাসা ৷ মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এই চন্দ্রাভিযানের নাম আর্টেমিস। এই মিশনের জন্য বিশাল উদ্যোগ-আয়োজন চলছে। এই মিশনের পাঁচটি ভাগ রয়েছে, যার মধ্যে মানুষ নিয়ে চাঁদে ল্যান্ড করার পরিকল্পনাও আছে। নাসা জানিয়েছে, আর্টেমিস-২ মিশনে ১০ দিনের জন্য চাঁদে পাড়ি দেবেন মহাকাশচারীরা। চার থেকে পাঁচ জন নভশ্চরকে নিয়ে যাওয়া হবে চাঁদে। তাঁদের মধ্যে একজন অ্যাস্ট্রো-ক্রিস্টিনা ওরফে ক্রিস্টিনা কচ ।
মিশিগানে জন্ম ক্রিস্টিনার। বেড়ে ওঠা উত্তর ক্যারোলিনায়। নর্থ ক্যারোলিনা স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথেমেটিক্স থেকে স্নাতকের পরে নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যা ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন ক্রিস্টিনা। পদার্থবিদ্যায় একাধিক গবেষণা আছে তাঁর। কিন্তু পেশায় ছিলেন ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার।
২০০১ সালে নাসার অ্যাকাডেমি প্রোগ্রাম থেকে মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন ক্রিস্টিনা। ২০১৩ সালে নাসার স্পেস-মিশনে যোগ দেন। গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করেছেন ক্রিস্টিনা। নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিক স্পেস-মিশনের। অজানার খোঁজে পাড়ি দেওয়াই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।
২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্টার্কটিক প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ছিল ক্রিস্টিনা কচ। সাড়ে তিন বছর কাটিয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দুর্গম এলাকায়। নাসার দক্ষিণ মেরুর স্পেস স্টেশনে হাড়হিম ঠাণ্ডায় দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়েছেন ক্রিস্টিনা।
পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্পেস স্টেশনে ছ’মাসের বেশি কোনও নভশ্চর থাকেন না। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন দীর্ঘসময় স্পেস স্টেশনে কাটালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়। তবে ক্রিস্টিনা বলেন, “প্রাণের ঝুঁকি থাকলেও ঐতিহাসিক স্পেসওয়াক যে কোনও নভশ্চরের জীবনেরই মূল লক্ষ্য।
ক্রিস্টিনার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল তাঁর স্পেস-ওয়াকের রেকর্ড। ১১ মাসে অন্তত ছ’বার মহাশূন্যে হেঁটেছেন ক্রিস্টিনা কচ। ‘All Women Spacewalk’-এর লাইভ স্ট্রিমিং সামনে এনে নাসা জানিয়েছিল ৭ ঘণ্টা ১৭ মিনিট মহাকাশে হেঁটে রেকর্ড করেছেন অ্যাস্ট্রো-ক্রিস্টিনা।
নাসার রেকর্ড বলছে, এই ১১ মাসে অন্তত ৫,২৪৮ বার পৃথিবীকে পাক খেয়েছেন ক্রিস্টিনা। যা ২৯১ বার চাঁদে গিয়ে ফিরে আসার সময়ের সমান।
পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চষে ফেলেছেন দক্ষিণ মেরুর বিপদসঙ্কুল এলাকা। দক্ষিণ মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাকেন্দ্র আমুন্ডসেন-স্কট স্টেশনে তিনি যখন কাজ করতেন, সেখানকার তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নীচে ১১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুর্গম পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার মানসিকতা ও সাহস তখনই তৈরি হয়ে যায়।
মহাকাশ-অভিযানের লিঙ্গভেদ নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। এই অভিজ্ঞতা অনুপ্ররেণা দেবে বাকিদের। আরও অনেক মহিলাই অজানাকে জানতে, অচেনা চিনতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।”
চাঁদে যখন তখন পাড়ি দেওয়ার জন্য স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) রকেট বানিয়েছে নাসা। এই প্রোগ্রামের ম্যানেজার জন হানিকাট বলেছেন, আর্টেমিসের সবকটি মিশনই খুব জটিল হবে। চাঁদে মানুষ নিয়ে যাওয়ার বড় পরিকল্পনা আছে। ৫৫ বছর আগে নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স আর এডুইন (বাজ) অলড্রিনের মতো খুব অল্প সময়ের জন্য চাঁদের বুকে পা পড়বে না মানুষের। হয়ত টানা এক সপ্তাহের জন্য চাঁদের বুকে গবেষণা চালাবেন নভশ্চররা। সেই দলে থাকবেন মহিলা মহাকাশচারীও। তার জন্য ক্রিস্টিনাই আদর্শ বলে মনে করছেন নাসার মহাকাশবিজ্ঞানীরা।