
তৃপ্তি মিত্রর পরিচালনায় ‘রক্তকরবী’ নাটকে নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল।
তারপর ২০২৩ সালে পরিচালক-নির্দেশক গৌতম হালদারের প্রয়াণের পরে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই ‘রক্তকরবী’ নাটকটি মঞ্চস্থ করেন চৈতি।
এ বারে সম্পাদনা এবং নির্দেশনার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন তিনি। এর আগে হিন্দি নাটকের নির্দেশনার কাজ করেছেন চৈতি।শনিবার (২২.০৩.২০২৫) প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় সাংবাদিক সম্মেলন। প্রকাশ্যে আসে নাটকের পোস্টার।নাটকের সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে দেবজ্যোতি মিশ্র। রাজার চরিত্রে অভিনেতা দেবেশ রায়চৌধুরী সহ আরও অনেকেই এদিন উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবে।

দেশের সময়-কে চৈতি বললেন‘এই নাটকের পরিচালনা না করে উপায় ছিল না।’ এই ‘যুদ্ধ’-এর পৃথিবীতে ভালোবাসা ছড়াতে চান চৈতি। নন্দিনীর সংলাপ আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক চৈতির কাছে।
চৈতি বলেন , এ এক নতুন জার্নি শুরু করলাম। ভাষায় প্রকাশ করা একটু মুশকিল। অনুভূতি জড়ো করছি। এ এক পরম পাওয়া।
বাংলার ক্ষেত্রে এই নাটককেই বেছে নিলেন কেন? চৈতি বললেন, ‘‘. ‘‘কারণ নাটকটি এখনও প্রাসঙ্গিক এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়, আগামী একশো বছর ধরেও ‘রক্তকরবী’ প্রাসঙ্গিক থাকবে।’’
চৈতির কথায় , ‘রক্তকরবী’ নাটকের মঞ্চসজ্জা থেকে শুরু করে সঙ্গীত এবং নন্দিনীর গয়না নিজের হাতে তৈরি করতেন গৌতম। তবে ‘রক্তকরবী’র ক্ষেত্রে গৌতমকে তিনি অনুসরণ করছেন না। নির্দেশক হিসেবে অনেক কিছুই বদলেছেন তিনি। চৈতি জানান, ‘‘নাটকের সম্পাদনা থেকে শুরু করে প্রথম দৃশ্য, সবের মধ্যেই নতুনত্ব থাকছে। গান, অভিনেতা, মঞ্চসজ্জা, আলো, পোশাক পরিকল্পনা প্রচুর পরিবর্তন করেছি।’’

‘‘দাদা যে গয়নাগুলো আমাকে তৈরি করে দেন, সেগুলো আমার কাছেই যত্ন করে রেখে দিয়েছি।’’
তবে গৌতমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই নাটকের তাঁর ব্যবহৃত কিছু প্রপ্স এবং সঙ্গীতকে রাখার ইচ্ছা থাকলেও কপিরাইট সংক্রান্ত কারণে অনুমোদন না পাওয়ায় সে সব ব্যাবহার করা যাবে না ।
তৃপ্তি মিত্র ও গৌতম হালদারের জন্য যে নন্দিনী হয়ে উঠেছিলাম, সেই চ্যাপ্টার ক্লোজ়়ড। এটা সত্যিই নতুন চৈতি। ফলে তৃপ্তি মিত্র ও গৌতম হালদারের শিক্ষাকে অস্বীকার করতে পারি না। সেই শিক্ষাকে অন্তরে বহন করে চলেছি। গৌতমদার প্রযোজনার সঙ্গে এই ‘রক্তকরবী’র কোথাও কোনও মিল নেই। পরিচালক হিসেবে আমি যেমনটা মনে করেছি, তেমনটাই করেছি। ভাবনা পৃথক। দেবজ্যোতি মিশ্র সঙ্গীতের দায়িত্বে। তিনি অন্য আঙ্গিক তুলে ধরেছেন। মঞ্চসজ্জার দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত গুণী একজন ব্যক্তি, যাঁর নাম দেবব্রত মাইতি। সেটে থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। রাজার চরিত্রে অভিনয় করছেন দেবেশ রায়চৌধুরী। এই প্রথম ‘রক্তকরবী’তে রাজার ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। অশোক মজুমদার অধ্যাপকের ভূমিকায়। আগের ‘রক্তকরবী’তেও অশোকদা ছিলেন। আরও অনেকে আছেন। নৃত্য পরিকল্পনা করেছেন সুকল্যাণ ভট্টাচার্য।
এই নাটক নিয়ে উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল দেবজ্যোতির কণ্ঠেও।এই নাটকের সঙ্গীতকেও অন্য ভাবে ভেবেছেন তিনি । দেবজ্যোতির কথায় , ‘‘লোভ, ঘৃণা, দাসত্ব এবং সর্বোপরি বর্তমান যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর নিরিখে ‘রক্তকরবী’র সঙ্গীতকে ভাবার চেষ্টা করেছি। অন্য ধরনের বহু বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেছি।’’ এরই সঙ্গে তিনি যোগ করলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা প্রত্যেকেই তো আগুনের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি! সেখানে মনে হয়, ‘রক্তকরবী’ একটা বিশ্ব-আবেদন তৈরি করে।’’
নাটকে রাজার চরিত্রে রয়েছেন দেবেশ রায়চৌধুরী। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন জীবন সাহা, পার্থ মুখোপাধ্যায়, পবিত্র কুমার প্রমুখ। প্রায় দু’মাস ধরে নাটকের মহড়ায় ব্যস্ত শিল্পীরা। আগামী ৫ এপ্রিল অ্যাকাডেমিতে ‘রক্তকরবী’র প্রথম শো।