অর্পিতা বনিক, বনগাঁ : স্বপ্ন ছিল চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হওয়ার কিন্তু বাবার অসুস্থতার জন্য পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়িনি ৷ বছর সাতচল্লিশের কবিতা বিশ্বাস। ৯২ সালে বিয়ে হয়ে চলে আসেন বনগাঁর মতিগঞ্জে অপূর্ব বাবুর সঙ্গে ঘর বাঁধেন ৷ তারপরে যা হয় ৷ শ্বশুর বাড়ির দেখভাল আর সংসারের চাপে হয়ে গিয়েছিল নিজের স্বপ্নটা ৷ হয়তো তা চাঁপাই পড়ে যেত কিন্তু ২০০০ সালে স্বামীর ছোট্ট ওষুধের দোকানটা যখন ইছামতির সেতু তৈরির জন্য ভাঙা পড়ল, তখন খানিকটা বাধ্য হয়েই ব্যবসায় নেমে পড়লেন কবিতা৷ সামান্য জ্ঞান নিয়েই শুরু করলেন ওষুধের পাইকারি ব্যবসা ৷ দীর্ঘ ২৫ বছরের লড়াইয়ের পরে স্বনির্ভর তো বটেই, বনগাঁ এলাকার একজন বড় ব্যবসায়ী বললেও ভুলবলা হয় না ৷

বেহালার মেয়ে কবিতা নিজেই এখন একটা ছোটখাট প্রতিষ্ঠান তার কথায় “বি কম পাস করার পরে যখন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই বাবা অসুস্থ হলেন আর পড়াশোনা হলো না ৷ বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছিল ৷ অবসরের খুব হতাশ লাগতো ৷ ভাবতাম কি করা যায় স্বামীর সঙ্গেও আলোচনা করতাম, ভেবেছিলাম সরকারি চাকরির চেষ্টা করব ৷ কিন্তু ২০০০ সালে ইছামতির উপর সেতু তৈরির জন্য স্বামীর ছোট্ট ওষুধের দোকানটা ভাঙা পড়ল অবশ্য তখন দোকানে বিক্রিও কম ছিল৷ আবার নতুন করে শুরু করতে হলো ৷ আর সেই শুরুটাই এখন আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে ৷ দেখুনভিডিও

যখন ব্যবসা শুরু করেছিলেন তখন পুজি বলতে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ধার করা ৮০ হাজার টাকা ৷ ধীরে ধীরে ব্যবসা বনগাঁ শহরের সীমা ছাড়িয়ে বাগদা, গাইঘাটা, চাকদহ সহ গোটা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলাতেই ছড়িয়ে পড়ে ৷ বর্তমানে বছরে প্রায় কোটি টাকা লেনদেন হয় ব্যবসায় ৷ সাফল্যের পিছনে পরিশ্রমও কম নেই সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে সাংসারিক কাজকর্ম সামলে কবিতা চলে আসেন বাড়ির এক তলার ছোট্ট দোকান ঘরে। অনেক সময় কারিগরদের হাত দিয়ে ওষুধ পৌঁছে দেন বিভিন্ন দোকানে ৷অনেকেই আবার দোকানে আসেন ৷ ব্যবসার পাশাপাশি সংসারকেও নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি ৷

ছেলে অর্ক মাধ্যমিকে বনগাঁ মহকুমায় প্রথম হয়েছিলেন ৷ ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র হিসেবেও তৃতীয় হয়ে এখন সে সরকারি চাকরী করছে ৷

স্ত্রীর কৃতিত্বে গর্বিত আপূর্ব বাবুও৷ তিনি বলেন, কবিতার জন্যই সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে ৷ কাজের মধ্যে থেকে কবিতাও মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছে। আর কবিতাদেবীর কথায় প্রতিটি মহিলারই আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া উচিত তাতে সংসারের সুরাহা হয় ৷ নিজেরও মর্যাদা বাড়ে৷ কবিতার এই উদ্যোগে উজ্জীবিত এলাকার মেয়েরাও ৷

এক প্রতিবেশির জানান, উনি তো সব সময় ব্যস্ত ৷ একজন মহিলার এমন ব্যস্ততা দেখতেও ভালো লাগে ৷আজকাল মেয়েরা চাকরিই বেশি করেন ৷ কিন্তু ব্যবসায় অনেক ঝুঁকি আছে। সেই ঝুঁকি নিয়েও যে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো যায় তা দেখিয়েছেন কবিতাদেবী ৷

পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আপ্লুত কবিতা ৷ আর কবিতা দেবীর কথায় ব্যবসায় মহিলারা সেভাবে আসতে চান না ৷ ভাবেন , এতে হয়তো সামাজিক সম্মান নষ্ট হবে। শ্বশুরবাড়ি থেকেও প্রতিবন্ধকতা থাকে অনেকের ৷ কিন্তু পরিস্থিতির মোকাবিলা করে যদি নিজের মতো করে কিছু করে দেখানো যায়, তবে মনে হয় জীবন থেকে নিজেরও কিছু পাওয়ার ছিল ৷ কথায় কথায় এদিন বাজেট ঘিরে প্রত্যাশার কথাও জানান৷ আজ সংসদে পেশ করা হবে কেন্দ্রীয় বাজেট 2023। এই বাজেটই দেশকে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির রাস্তা দেখাবে। এবারের বাজেটে বেকারত্ব ও চাকরি কী পয়েন্ট হতে চলেছে। বেকারত্ব দূর করতে কেন্দ্র কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে সারা দেশের মানুষ। এছাড়া আয়কর স্ল্যাবের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তনের আশা করছে মধ্যবিত্ত। এই ইস্যুতে নির্মলা সীতারমন কতটা আশা দেখাতে পারেন তার দিকে তাকিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here