Business অশান্ত বাংলাদেশ, সুতোয় ঝুলছে পেট্রাপোলে সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ

0
144

পাকিস্তানের করাচি থেকে ফের একটি পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশের চট্রগ্রামে আসছে। গত মাসে পণ্য নিয়ে প্রথম এসেছিল পাক জাহাজ। বাংলাদেশে এর আগে পাকিস্তানের জাহাজ নোঙর করেনি।অশান্ত বাংলাদেশ। সুতোয় ঝুলছে সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ। ব্যাঙ্ক থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আমদানি-রফতানির ব্যবসায় নেমেছেন যাঁরা, তাঁদের আশঙ্কা বাংলাদেশের পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয় এবং সেক্ষেত্রে আচমকা সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে তখন কী হবে?

পার্থ সারথি নন্দী , দেশের সময়

বাংলাদেশে আটকে থাকা ব্যবসার টাকা আদৌও কতদিনে পাবেন তাঁরা? এদিকে, ব্যবসা বন্ধও করে দিতে পারছেন না আমদানি-রফতানিকারকরা। কারণ, ব্যবসা চালু না রাখলে বকেয়া টাকা পেতে অসুবিধা হতে পারে। কিংবা পরবর্তীতে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ফলে চরম উদ্বেগের মধ্যেই পেট্রাপোল, ঘোজাডাঙা সহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে আগের তুলনায় বাণিজ্যের গতি কমেছে অনেকটাই।

পেট্রাপোল সীমান্ত সূত্রে খবর, এপার থেকে দিনে চারশোর মতো ট্রাকে পণ্য যাচ্ছে বাংলাদেশে। স্টিল ও আয়রন ছাড়া মোটামুটি সব ধরনের পণ্যই বাংলাদেশে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ওপার বাংলা থেকে দিনে দু’শোর মতো ট্রাকে পণ্য আসছে। বাংলাদেশ থেকে আসা সামগ্রীর মধ্যে পাট, পাটজাত দ্রব্য এবং কাপড়ের পরিমাণ বেশি। চলতি মাসের প্রথমে সীমান্ত বাণিজ্যে অশনি সঙ্কেত দেখা দিয়েছিল। তলানিতে ঠেকেছিল ব্যবসা।

কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি একটু উন্নতি হয়েছে। তবুও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না সীমান্তের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, উগ্র মৌলবাদী কার্যাকলাপে বাংলাদেশের পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ব্যবসা নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও উপায় নেই। বাংলাদেশে প্রচুর টাকা বকেয়া রয়েছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। না হলে ওই টাকা ফেরত পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন,

বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির প্রভাব সীমান্ত বাণিজ্যে পড়েছে। আগের তুলনায় পণ্য আমদানি-রফতানি অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবুও ব্যবসা চালু রাখা হয়েছে। না হলে ব্যাঙ্ক থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে। 

তবে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি, এটাই সৌভাগ্যের।

পেট্রাপোল এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সমিতির সদস্য রামকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন,

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সত্যিই আমরা উদ্বিগ্ন। তবে এখনও পর্যন্ত সীমান্ত বাণিজ্যে এর তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশে চারটি ব্যাঙ্কে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা ওপার বাংলায় যাদের সামগ্রী পাঠাচ্ছি, তাদের স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, যে ব্যাঙ্কে সমস্যা হবে না, তার মাধ্যমেই যেন লেনদেন করা হয়। তাঁরা সেইমতো ব্যবস্থা করছেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা তো আছেই, কিন্তু সেকথা ভেবে হাতগুটিয়ে বসে থাকলে তো না খেয়ে মরতে হবে। তাই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রামকৃষ্ণর দাবি, বাংলাদেশে কাঁচামালের জোগানে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেকারণে ওপার বাংলা থেকে আসা পণ্যের পরিমাণ কমেছে। কিন্তু এপার থেকে যাওয়া সামগ্রীর পরিমাণ ঠিকই আছে। রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, ওপার বাংলায় হিন্দুদের উপর যে নির্যাতনের ঘটনা তাঁরা প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারছেন, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন তাঁরা। সীমান্ত বাণিজ্যে যদি কোনওভাবে এর আঁচ লাগে, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা ভেবেই দিশেহারা আমদানি-রফতানিকারকরা।

সিয়াম লজিস্টিকস্ এর কর্ণধার সুমন রায় বলেন , ভারত সরকার এখন ১৮০টি দেশের সঙ্গে বণিজ্যে যুক্ত । তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে । তবে কোন ভাবে যদি ইউনুস সরকার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে সেটা মোদী সরকারের কাছে অনেকটা এক বস্তা সরষে থেকে ১টা সরষে পড়ে যাওয়ার মতন ঘটনা । সম্প্রতি অশান্ত বাংলাদেশ, সুতোয় ঝুলছে পেট্রাপোলে সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ ।

পেট্রাপোল এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য দেবব্রত সেন ওরফে পাপ্পু বলেন,

চরম আশঙ্কা নিয়ে আমাদের সীমান্ত বাণিজ্য চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আগে বাংলাদেশ থেকে যে সংখ্যক ট্রাকে পণ্য আসত, তা কার্যত অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এপার থেকেও ট্রাক যাওয়ার সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। সবসময় আমাদের একটাই উদ্বেগ তাড়া করে নিয়ে বেড়াচ্ছে, এভাবে কতদিন চলবে? এক্সপোর্টারদের টাকাপয়সা ওপারে আটকে থাকছে। নতুন এলসি ওপেন হচ্ছে না। আমরা চাই, সীমান্ত বাণিজ্যে যে অশনি সঙ্কেত তা দ্রুত কেটে যাক।

মহম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্য বাড়াতে নেওয়া পদক্ষেপগুলির মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য অন্যতম। দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে চার মাসের মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গেই ইউনুস দু’বার সাক্ষাৎ করেছেন। আগামী বছরে গোড়ায় ঢাকা সফরে যেতে পারেন পাক প্রধানমন্ত্রী।  ১৯৭১-এর সংঘাত, যুদ্ধের   অতীত পাশ কাটিয়ে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সম্প্রতি হয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকার সরকারি সূত্রের খবর, মাত্র সাড়ে চার মাসে দুই দেশের সম্পর্ক এতটাই রকেট গতিতে এগিয়েছে যে, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি ২৭ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে, ৫ অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পালা বদলের পর ভারতের সঙ্গে শুধু সম্পর্কের অবনতির জেরে কমেছে রপ্তানি। ঢাকার বাণিজ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী পাকিস্তান অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ১৭৯.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সামগ্রী।  গত বছরের তুলনায় এই পরিমান ২৭ শতাংশ বেশি। 

অন্যদিকে, ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ২,০৫২.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় অনেকটা কম।

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পোশাক ও শিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক এবং পেঁয়াজ-আলু আমদানি করত। এখন বিপুল পরিমাণে চিনি-আমদানি শুরু করেছে। সেই সঙ্গে আগের তুলনায় সব পণ্যই পাকিস্তান থেকে বেশি পরিমাণে আমদানি করছে। 

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মহম্মদ ইউনুস পণ্য আমদানিতে ভারতের উপর নির্ভরতা কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পরিবর্তে পাকিস্তান থেকে আমদানি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ফলে জিনিসপত্রের দামও বেশি। ভারতের পরিবর্তে পাকিস্তান থেকে আমদানির খরচ বেশি। সময়ও বেশি লাগছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে স্থল বন্দর দিয়ে সহজেই পণ্য আমদানি সম্ভব। স্বভাবতই, পাকিস্তান থেকে আনা নিত্যপণ্যের জন্য সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি মূল্য চোকাতে হচ্ছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে শুধু বাণিজ্য নয়, শিক্ষা, সংস্কৃতিতেও মৈত্রী স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছে ইউনুস সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট বৈঠকে সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে শিক্ষা সংক্রান্ত সব ধরনের যোগাযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Previous articleRahul Gandhi: রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের এফআইআর ,বিজেপির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কী  তাঁর জেল হতে পারে?
Next articleWeather Update বছরের শেষে টানা তুষারপাতের আভাস দার্জিলিং, সিকিমে! কলকাতায় কবে ফিরবে শীত? বড় আপডেট দিল আবহাওয়া দপ্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here