দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বুধবার সাধারণ বাজেট পেশ করেছেন। রাজস্ব আদায় বাড়াতে বাজেটে বেশি কিছু সামগ্রীর উপর অন্তঃশুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, আবার রফতানিতে উৎসাহ দেওয়া, উৎপাদন বাড়ানো ইত্যাদি কারণে কিছু সামগ্রীর উপর কর কমানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি। কোন কোন পণ্যের উপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে নীচে রইল বিস্তারিত:

বাজেটে দাম কমল:

টিভি প্যানেলের ওপেন সেলের উপর অন্তঃশুল্ক ২.৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

মোবাইল ফোন তৈরির জন্য বেশ কিছু সামগ্রীর উপর আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছেন নির্মলা সীতারমন।

ল্যাবরেটরিতে তৈরি হিরের উপর অন্তঃশুল্ক কমানো হয়েছে।

চিংড়ি রফতানিতে উৎসাহ দিতে তার চারার উপর অন্তঃশুল্ক কমানো হয়েছে।

বাজেটে দাম বাড়ল:


সিগারেটের উপর ১৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

কম্পাউন্ডেড রাবার আমদানির উপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

গোল্ড বার থেকে তৈরি সামগ্রীর উপর অন্তঃশুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন নির্মলা।

রান্নাঘরে ইলেকট্রিক চিমনির উপর অন্তঃশুল্ক ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।


আগামী বছর লোকসভা ভোট। তার আগে বুধবার বর্তমান মেয়াদের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেছে মোদী সরকার। সেদিক থেকে বাজেটে শুল্কের হারে খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং ব্যক্তিগত আয়করে বড় ছাড় ঘোষণা করে মধ্যবিত্ত সুরাহা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নির্মলা সীতারামন।

এদিকে, বীরভূমে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় কেন্দ্র। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে হওয়া শেষ বাজেটকে তীব্র কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, এই বাজেটে আশার কোনও আলো নেই। পুরোপুরি অমাবস্যার অন্ধকার।

এদিন বক্তব্যের মাঝেই বাজেট নিয়ে সরব হন মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

আন্দাজ করা গিয়েছিল কী হতে পারে। তাই হল। চব্বিশের লোকসভার আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটকে কার্যত বিশেষণে ভরিয়ে দিয়ে তুলোধোনা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

সরাসরি এই বাজেটকে ধিক্কার জানিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা সুবিধাবাদী বাজেট। কোনও আশার আলো নেই। শুধু অমাবস্যার অন্ধকার। আমি এই বাজেটকে ধিক্কার জানাই।’

অতীতে রেলমন্ত্রী হিসেবে বহুবার রেল বাজেট পেশ করার অভিজ্ঞতা আছে মমতার। সেসব বাজেটে জনমুখী ঘোষণাও করেছিলেন তিনি। এমনকি কলকাতায় এখন যখন মেট্রো সম্প্রসারণ বাস্তবায়িত হচ্ছে তা সবই দিদির সময়ের ঘোষণা। এত সব কথার অবতারনা না করলেও এদিন মমতা বলেন, ‘আমায় দিতেন বাজেট করতে, দেখিয়ে দিতাম কীভাবে গরিব মানুষের স্বার্থে বাজেট করা যায়। কীভাবে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’

বুধবার বাজেটের একাধিক ঘোষণা নিয়ে তীব্র সমালোচনায় মুখর হন মমতা। তাঁর কথায়, ‘আগের বছর ১০০ দিনের কাজের টাকার বরাদ্দ স্যাট করে কমিয়ে দিয়েছিল। এবার আরও কমিয়ে দিয়েছে। তার মানে আপনারা আগামী দিনে আর ১০০ দিনের কাজের টাকা পাবেন না।’ সেইসঙ্গে খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি হ্রাসের কথা তুলে মমতা সরাসরি বলেন, বাজেটে জালিয়াতি হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘বাজেটে একটা বড় কেলেঙ্কারি করেছে। খাদ্যে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওখান থেকে টাকা মেরে দেবে। একদিন দেখবেন রেশনটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’

মমতার সাফ কথা, এই সরকারের সময়ে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ ক্রমশ দুর্দশাগ্রস্থ হয়েছেন আর কিছু লোকের সম্পদ বেড়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কারও নাম করেননি মমতা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ”বাজেটে একশ্রেণির মানুষই সুবিধা পেয়েছে। গরিব-মধ্যবিত্তদের জন্য কোনও লাভ নেই। বঞ্চিত হয়েছে দরিদ্ররা। মুদ্রাস্ফীতি আকাশে কর ছাড় দিয়ে কী হবে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, সেল্ফ হেলফ গ্রুপ, আইসিডিএস-এর জন্য কী করেছে কেন্দ্র বলে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রশ্ন তোলেন সেল্ফ হেলফ গ্রুপ, আইসিডিএস-এর জন্য কী করেছে কেন্দ্র বলে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সম্মিলিত জনতার কাছে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”বিনামূল্যে গ্যাস দেওয়ার জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে উজ্জ্বলা প্রকল্প চালু করে, কিন্তু কেউ পেয়েছেন গ্যাস? ওঁরা নাকি গ্যাসের দাম কমিয়েছেন! গ্যাস বেলুন বোঝেন সেই গ্যাস বেলুন এটা। গ্যাসের দাম বেড়ে এখন ১১৭০ টাকা।”

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, চব্বিশের ভোটের আগে এই বাজেটে যেমন মধ্যবিত্তের মন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন নরেন্দ্র মোদী, নির্মলা সীতরামনরা তেমন মমতাও যেন পঞ্চায়েতের আগে গ্রামের মানুষের সামনে পাল্টা ধারণা তৈরি করতে চাইলেন। সন্দেহ নেই কোভিড পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড হয়ে গিয়েছে ১০০ দিনের কাজ। এদিন মমতা সেই মানুষের সামনেই বোঝাতে চান, বিজেপি আস্তে আস্তে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পটাই লাটে তুলে দেবে। সেইসঙ্গে রেশন দোকানে লাইন দেওয়া এখনও যে গ্রামীণ মানুষের মাসিক রুটিন, মমতা বোঝাতে চান এই বাজেটে তাও সংশয়ের মুখে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here