দেশের সময় ওয়েবডেস্ক : উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত গ্রাম বাঁশঘাটার বাসিন্দা মাহতাব মণ্ডল ১০৭ ব্যাটালিয়নের সীমান্ত চৌকি সুটিয়ার কোম্পানি কমান্ডারকে জানান, তাঁর ভাই জুলফিকার আলি মণ্ডল, যিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক, তিনি মারা গেছেন।
তাঁর তিন বোন এবং আত্মীয়স্বজন সকলেই সীমান্তের ওপারে, বাংলাদেশে থাকেন। বিএসএফ যদি সাহায্য করে, তবেই ভাইয়ের শেষ দেখা পাবেন বোন ও আত্মীয়রা।
আন্তর্জাতিক সীমান্তের পবিত্রতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সীমান্তবাসীর মানসিক ও সামাজিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) তাদের ডিউটি পালন করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিএসএফ-এর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার আবারও মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
মৃতের তিন বোন খায়রণ মণ্ডল (৬২), ফিরদোসি মণ্ডল (৫০), খোদেজা মণ্ডল (৬৫) এবং খালা আখিরা মণ্ডল (৬৫), ফাতেমা মণ্ডল (৬২) এবং মামা মাহুদিন মণ্ডল (৬১) বাংলাদেশের সীমান্ত গ্রাম বাহাদুরপুর, যশোর জেলায় বসবাস করেন। যা আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁকে শেষ দেখার সুযোগ দিয়ে বিএসএফ শুধুমাত্র মানবতার ধর্মই পালন করেনি, আবারও প্রমাণ করেছে তাদের আদর্শ বাক্য – ‘জীবনের জন্য কর্তব্য’।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই ঘটনাটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সীমান্ত এলাকার ঘটেছে। যেখানে ১৬ এপ্রিল সকাল ১০টা নাগাদ এমন একটি সংবেদনশীল পর্ব প্রকাশ্যে আসে। সীমান্ত গ্রাম বাঁশঘাটার বাসিন্দা মাহতাব মণ্ডল সেখানে মোতায়েন ১০৭ ব্যাটালিয়নের সীমান্ত চৌকি সুতিয়ার কোম্পানি কমান্ডারকে জানান, তাঁর ভাই জুলফিকার আলি মণ্ডল মারা গেছেন। তাঁর তিন বোন ও আত্মীয়স্বজন সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে থাকেন।
তিনি বিএসএফকে অনুরোধ করেন যে তাঁর বোনেরা যদি তাঁর ভাইয়ের শেষ দেখা দেখতে পান, তবে তাঁরা খুব খুশি হবেন। এরপর কোম্পানি কমান্ডার অবিলম্বে মানবিক ও আবেগের দিকটি মাথায় রেখে কোনও বিলম্ব না করে এ বিষয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বিএসএফের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবিও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বিবেচনা করে এগিয়ে যায়। তাই উভয় দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী পারস্পরিক সহযোগিতার কথা মাথায় রেখে মানবতাকে সর্বাগ্রে রেখে বাংলাদেশে অবস্থানরত তিন বোনকে বেলা সকাল ১১.১০ টা নাগাদ আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে জিরো লাইনে তাঁদের ভাইকে শেষ দেখার ব্যবস্থা করে।
এভাবেই তিন বোন ও আত্মীয়স্বজনের পক্ষে ভাইয়ের শেষ দেখা সম্ভব হয়। সেই সময়ে, বোনেরা যখন তাঁদের ভাইয়ের শেষ দর্শন করছিলেন, তখন সেখানকার পরিবেশ খুব অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে শেষ দর্শন শেষে সকল স্বজনরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই উদ্যোগের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের মানবিকতার কারণে আমরা আমাদের ভাইয়ের শেষ দর্শন পেয়েছি।’
বিএসএফ-এর এক আধিকারিকের কথায়, বিএসএফ জওয়ানরা দিনরাত সীমান্তে পলক না ফেলে মোতায়েন রয়েছে এবং দেশের নিরাপত্তার পাশাপাশি সীমান্তের বাসিন্দাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও তাঁদের ধর্মীয় সুখ-দুঃখের দিকটিও যত্ন নিয়ে দেখে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থাকলেও মানবতা এবং মানবিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে সর্বদা প্রস্তুত থাকে।