বাংলার আমায়ন ও আমকৃষি ভারতের মূল্যবান সংস্কৃতি
মিলন খামারিয়া, কলকাতা : বইয়ের নাম ‘কৃষি ও কৃষ্টিতে আম’। যৌথভাবে লিখেছেন ড. মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। যে বইয়ের পাতায় পাতায় আমচাষ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য পরিবেশন করার পাশাপাশি রয়েছে আম কেন্দ্রিক শিকড় সংস্কৃতির কথা। ফলে বইটির সুখপাঠ করে কৃষক কেবল ‘চাষা’ হয়ে থাকবেন না, তিনি উত্তরাধিকারী হবেন আমচাষের কয়েক হাজার বছরের ঐশী ঐতিহ্যের৷ ড. বন্দ্যোপাধ্যায় একজন প্রথিতযশা লোকসংস্কৃতিবিদ, আর ড. চক্রবর্তী একজন স্বনামধন্য কৃষিবিদ।
ফলে কৃষিতে-কৃষ্টিতে সম্পৃক্ত হয়ে আছে তাদের জীবনবোধ। পাশাপাশি ফুটে ওঠে আমচাষীদের জীবনচর্যা ও মানসচর্চা। এই বইয়ে আমচাষ নিয়ে আধুনিক তথ্য পাবার পর উপরিপাওনা হল এক মৃত্তিকাশ্রয়ী জীবনবোধ। বইটির দাম তিনশো টাকা। বাংলার সমস্ত সরকার পোষিত গ্রন্থাগারে, স্কুল কলেজের লাইব্রেরিতে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পঠনগৃহে বইটি সংরক্ষিত থাকার আবশ্যিকতা রয়েছে।
এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক বইটিতে কী কী বিষয় স্থান পেয়েছে। রয়েছে আমচাষের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস, রয়েছে আমের উৎপত্তি, বিস্তারণ; রকমারি আমের জাতবৈচিত্র্য, আমের উদ্ভিদবিদ্যাগত তথ্য, আম সম্পর্কিত লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি, আম-নাম। আমচাষের উপযোগী মৃত্তিকা, জলবায়ু, আমের বাগিচা-রোপন পদ্ধতি, সার প্রয়োগ, জলসেচ, অন্তবর্তী ব্যবস্থাপনা, সাথীফসল, রোগপোকা এবং আম থেকে তৈরি কিছু লোকখাদ্যের বিষয়ও বইটিতে স্থান পেয়েছে। বইটির নিবিড় পাঠ করে কেবল আমচাষীই সমৃদ্ধ হবেন, তা নয়, সমৃদ্ধ হবেন আম-ব্যবসায়ী, শখের আমবিলাসী, উদ্যানপ্রেমী, কৃষিবিদ্যার ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক এবং সর্বোপরি আম-জনতা।
বইটির ভাষা এবং ছন্দে অনুপম গতি থাকায় তা পড়তে শুরু করলে শেষ না করে পারা যায় না। সহজ বাংলাভাষায় কৃষকের উপযোগী বইয়ের সংখ্যা এ রাজ্যে সত্যিই কম। এই অভাব পূরণ হতে পারে ভবিষ্যতে এই দুই লেখকের যৌথ অবদানে। কৃষি সংস্কৃতি নিয়ে তারা বিগত দুই দশক ধরে গবেষণা করছেন। অনেক প্রবন্ধ একসঙ্গে লিখেছেন। চাষীর জন্য লেখার ভাষা যদি সাবলীল না হয়, তবে শত উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। কিন্তু এইরকম সুখপাঠ্য বই লেখা হলে, তারজন্য পাঠককে অপেক্ষা করে থাকতে হয়। বইটি প্রকাশ করেছে মেদিনীপুরের ‘কবিতিকা’ প্রকাশন।