দেশের সময় , বনগাঁ: নজিরবিহীন সততার দৃষ্টান্ত মিলল বনগাঁয় ৷
বেশ কিছুদিন আগে উত্তর ২৪ পরগনার জেলার পানিহাটিতে আইফোন ১৪ কেনার জন্য শিশুকে বেচে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু মঙ্গলবার সম্পূর্ণ অন্য এক ছবি ধরা পড়ল বনগাঁয়।
বুদ্ধির জোরে রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া আইফোন মালিকের হাতে ফিরিয়ে দিল বনগাঁ হাই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তৌফিক মণ্ডল। এই ঘটনা জানাজানি হতেই রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে।
রাস্তাঘাটে,বাসে, ট্রেন, বাস থেকে মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয় ৷ পুলিশের চেষ্টায় অনেকক্ষেত্রে সেই ফোন উদ্ধার করে ফোনের মালিককে সেই ফোন ফিরিয়ে দেওয়ার খবরও প্রকাশ্যে আসে অহরহ ৷ তবে এবারের ঘটনাটি সম্পূর্ণ আলাদা। এ এক নজিরবিহীন সততার দৃষ্টান্ত মিলল বনগাঁয় ৷ দেখুনভিডিও
মঙ্গলবার টিউশন পড়ে বাবার সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিল ছোট্ট মহম্মদ তৌসিফ মন্ডল। বনগাঁর চাঁপাবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা তৌসিফ বনগাঁ হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। এদিন সে বনগাঁর দত্তপাড়া এলাকায় অঙ্কের শিক্ষকের কাছে টিউশন পড়তে গিয়েছিল।
দুপুর তখন ১২ টা। দত্তপাড়া রোড ধরে বাবার সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ করেই তৌসিফ দেখতে পায় যে, তার সামনে একটি টোটোরিক্সায় বসে থাকা এক যাত্রীর প্যান্টের পকেট থেকে একটি মোবাইল ফোন পড়ে যায়।
সাইকেল থেকে নেমে মোবাইল ফোনটি রাস্তা থেকে তুলে সে বাবাকে বলে, জোরে সাইকেল চালাতে। যার ফোন পড়ে গেছে, তাকে ফোনটি ফেরত দিতে হবে। সাইকেল চালিয়েও যখন টোটোর কাছাকাছি পৌঁছানো যাচ্ছিল না, তখন ওই খুদে ছাত্র সাইকেল থেকে নেমে টোটোর পেছনে দৌঁড়াতে থাকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর টোটোর নাগাল পায় না সে।
অবশেষে সে বাবাকে বলে যে, এখনই ফোনটি থানায় জমা করতে হবে। তার বাবা আগে বাড়ি পৌঁছে যার ফোন তাকে ফোন করে সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বললেও সে কথা শুনতে রাজি হয় না তৌসিফ। ছেলের কথামতো এরপর তারা ফোনটি বনগাঁর সাইবার ক্রাইম থানায় গিয়ে জমা করেন।
থানায় থাকাকালীনই কুড়িয়ে পাওয়া ফোনটিতে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে থানার আইসি জানান যে, ফোনটি বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানায় রয়েছে। যার ফোন তিনি যেন উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে ফোনটি নিয়ে যান।
এর কিছুক্ষণ পর ফোনের মালিক দিবাকর মন্ডল থানায় এলে তার হাতে ফোনটি তুলে দেওয়া হয়। ফোনটি একটি নামী কোম্পানীর দামী ফোন। জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদেরকে নিতে বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকায় এসেছিলেন ঠাকুরনগরের বাসিন্দা দিবাকর মন্ডল। টোটোতে করে বনগাঁ স্টেশনে যাওয়ার পথে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটি রাস্তায় পড়ে যায়।
ছোট্ট ছেলের এই বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে পুলিশের দারস্ত হয়ে হারিয়ে যাওয়া ফোন মালিকের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে রীতিমতো নজির গড়ল বলেই মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরাও। এই কাজের জন্য থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুদীপ্ত রায় ওই পঞ্চম শ্রেণির পডুয়াকে পুরস্কৃত করেন। সততার নজিরের পাশাপাশি শিশুটির বুদ্ধিমত্তাকেও বাহবা দিচ্ছে স্থানীয় এলাকার মানুষজনও।
ফোন ফিরে পেয়ে মালিক দিবাকর মন্ডলের আবেগে চোখে জল চলে আসে। এমন ঘটনা তাঁকে যথেষ্ট অবাক করেছে। ছেলের এমন মানসিকতায় গর্বিত তৌসিফের বাবা মহম্মদ রফিকও৷