Bongaon BJP: শান্তনুর লড়াই থামাতে কৌশলী বিজেপি ! হঠাৎ নীরব মন্ত্রী! দিল্লি কী বকে দিয়েছে?

0
623

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দলের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য বঙ্গ বিজেপির দুই চেনা মুখ জয়প্রকাশ মজুমদার এবং রীতেশ তিওয়ারিকে সাময়িক সাসপেন্ড করেছে ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ রাজ্যের বিজেপির বিদ্রোহী শিবিরের অন্যতম মুখ বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও কি সম্প্রতি দিল্লির বকুনি খেয়েছেন?

বুধবার ঠাকুরনগরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল মতুয়া মহাসঙ্ঘের উদ্যোগে। সেখানে গিয়েছিলেন মন্ত্রী শান্তন ঠাকুর। কিন্তু সংবাদমাধ্যম দেখেই কার্যত দ্রুত বিপরীতদিকে হাঁটতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। হাঁটতে হাঁটতেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বললেন, ‘আপনারা সবসময় বিরক্ত করেন, আমি কিছু বলব না৷

সম্প্রতি শান্তনু কলকাতায় পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসে বিদ্রোহী বিজেপি নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। তারপর বাইরে এসে মিডিয়ার সামনেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেছিলেন, একজন ব্যক্তি রাজ্য বিজেপিকে কুক্ষিগত করতে চাইছে। শুধু তাই নয়, শান্তনু জানিয়েছিলেন, তাঁদের এই লড়াইয়ের পাশে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষও।

শান্তনু যখন পোর্টের গেস্ট হাউসের বাইরে এসব বোমা ফাটাচ্ছেন, তখন তাঁর পাশেই ছিলেন জয়প্রকাশ। পরে সেই জয়প্রকাশের উপরেই কোপ পড়েছে। এমনিতে বিজেপির অন্দরেও প্রশ্ন রয়েছে, তথাগত রায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়রা ধারাবাহিক ভাবে দলবিরোধী মন্তব্য করলেও তাঁদের কেন শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে দিলীপ ঘোষও বলেছেন, ‘আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। যাঁরা এটা করছেন তাঁরা এটা বলতে পারবেন।

তবে যে শান্তনুসব সময় সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলতে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করেন,কিন্তু এদিন তিনি এমন ভাবে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়া যাওয়ায় বিজেপির মধ্যেই জল্পনা, তাহলে কী দিল্লির চাপ এসেছে ? নাকি সোজাসুজি বকে দিয়েছে?

অন্যদিকে , বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়কদের এবার পুর নির্বাচনের কনভেনার অর্থাৎ আহ্বায়ক ঘোষণা করে পদ্ম শিবির দিন কয়েক আগেই শান্তনু ঠাকুরের (বিজেপি সাংসদ) কৌশলের পাল্টা চাল দিয়েছে বিজেপি মনেকরছেন রাজনৈতিকমহল৷।

দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, যে সব বিধায়করা শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে মতুয়া আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের এবার কনভেনারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিক্ষুূব্ধদের সামাল দিতে এবার কৌশলী পদক্ষেপ নিচ্ছে বিজেপি। বিশেষ সূত্রের খবর, কনভেনারদের তাঁদের দায়িত্ব ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিতে শুরু করেছে দল।

উল্লেখ্য, বনগাঁ  সাংগঠনিক জেলায় ৬ জন বিধায়ক রয়েছেন। পাঁচটি পৌরসভার পাঁচ জন কনভেনার হলেন বিক্ষুব্ধ পাঁচ বিধায়ক। তাঁরা হলেন, গাইঘাটায় বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার, কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায় এবং রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী।

তবে বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদারের এলাকাতে কোনও পৌরসভা নেই। আর স্বপন মজুমদার প্রথম থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মতুয়া হলেও শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে নেই। বাকি পাঁচ বিধায়ককেই কনভেনার হিসাবে ঘোষণা করেছে বিজেপি। বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের দায়িত্বও।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুব্রত ঠাকুরকে এখনও তাঁর পৌরসভা অর্থাৎ গোবরডাঙা পৌরসভার কার্যভার গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। সূত্রের খবর, সুব্রত ঠাকুর দলকে জানিয়েছেন. যতক্ষণ পর্যন্ত না রামপদ দাসকে সভাপতির পদ থেকে সরানো হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি পৌরসভার কোনও দায়িত্ব নেবেন না। কিন্তু বাকি ৪ বিধায়ক দলকে সহযোগিতা করছেন বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

বনগাঁ লোকসভার সাংগঠনিক জেলার ইনচার্জ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সুব্রত ঠাকুর বাদ দিয়ে বাকি বিধায়করা তাঁদের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন পৌরসভা ভোটের আগে। জানা যাচ্ছে, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দায়িত্ব নিয়ে প্রত্যেক বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের ক্ষোভ, অভাব অভিযোগ মেটানোর চেষ্টা করেছেন।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে শান্তনু ঠাকুরের পাল্টা বিজেপির এই কৌশলী চাল কতটা কার্যকরী?

উত্তর হচ্ছে, তার ফল মিলেছে গত রবিবারই। রবিবারই শান্তনু ঠাকুর যে বনভোজনের আয়োজন করেছিলেন, তাতে সুব্রত ঠাকুর ছাড়া আর কোনও বিজেপি বিধায়ককে দেখা যায়নি। তবে শান্তনু ঠাকুরের আয়োজিত আগের পিকনিকেই উপস্থিত ছিলেন বিজেপির  প্রথম সারির বহু পুরনো নেতারা। ছিলেন সায়ন্তন বসু, রিতেশ তিওয়ারি, জয়প্রকাশ মজুমদাররা। ছিলেন বাঁকুড়ার পাঁচ বিক্ষুব্ধ বিধায়কও। ছিলেন মুকুটমনি অধিকারী, অম্বিকা রায়ের মতো বনগাঁ বিক্ষুব্ধ বিধায়করাও।

শনিবার রাতেই পাঁচ বিধায়ক জানতে পেরেছেন, তাঁদেরকে সামনে রেখেই পৌর নির্বাচন হবে। তাঁদেরকে পৌর কনভেনার করে দেওয়া হয়েছে, তারপরের দিন অর্থাৎ রবিবার তাঁরা আর শান্তনু ঠাকুরের পিকনিকে সামিল হননি। গোবরডাঙায় শান্তনু ঠাকুরের পিকনিকে বিধায়কদের অনুপস্থিতি সেদিক থেকে অনেকটা বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

বিজেপি নেতৃত্ব জানাচ্ছেন. বিধায়কদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন দলের সঙ্গেই রয়েছেন। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাঁরা তাই পালন করবেন। শান্তনু ঠাকুর যে কৌশলে মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রতিনিধিত্ব করতে উদ্যত হয়েছিলেন, তা কিছুটা থিতিয়ে পড়ল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এরপর বুধবার সংবাদমাধ্যমের সামনে হঠাৎ মন্ত্রী শান্তুনুর নীরব মনোভাব আরও অনেকটাই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দিল্লির চাপ বাড়ছে ৷

Previous article26 January Republic Day Live: প্রজাতন্ত্র দিবস: দেশবাসীকে শুভেচ্ছাবার্তা প্রধানমন্ত্রীর, সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleRepublic Day: ‌দেশের ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন দিল্লির রাজপথ থেকে সীমান্ত শহর বনগাঁ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here