দেশের সময় : উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় যে বুথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ভোট দেন, সেখানে যে বিজেপি হেরে গিয়েছে, তা জানা গিয়েছিল মঙ্গলবারেই। বুধবার পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ফলাফলও স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর দেখা গেল, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার মতুয়া এলাকায় ‘ধাক্কা’ খেয়েছে বিজেপি। নদিয়ায় তবু গ্রাম পঞ্চায়েতে কিছু মানরক্ষা করার মতো আসন পেয়েছে তারা। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনায় বিজেপির ‘শক্ত’ মাটিতে থাবা বসিয়েছে তৃণমূল।
লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি৷ তার আগে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের ?
বুধবার দুপুর পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ৯ হাজার ৬৮২ আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। সংখ্যাটা তৃণমূলের অনেকটাই পিছনে। তখন এই ফলাফল কি চিন্তায় ফেলছে বিজেপিকে?
প্রাথমিকভাবে হিসেব করে বিজেপি দেখেছে, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ভোট কমেছে ১৫ শতাংশ। দল হিসেব করে দেখেছে ২২ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরকে সবথেকে বেশি চিন্তায় ফেলেছে,বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটার ফলাফল। মতুয়া ভোট সেভাবে পায়নি বিজেপি।
শেষবার লোকসভা ও বিধানসভায় বিজেপি ব্যাপক ভোট পেয়েছিল মতুয়াদের থেকে। এবার পঞ্চায়েতে উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করেছে তৃণমূল। চা বাগানেও ভাল ভোট পায়নি বিজেপি। ঝাড়গ্ৰামে ফল খারাপ, মতুয়া ভোটও পায়নি বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের এলাকাতেও ফলাফল খুব একটা ভাল নয়। সব মিলিয়ে কপালে ভাঁজ বিজেপি নেতৃত্বের। বিজেপি অবশ্য বলছে, এবারের নির্বাচনে জনমতের কোনও প্রতিফলন পড়েনি, ফলে তা নিয়ে বিশ্লেষণ বা সমীক্ষার কোনও প্রশ্নও নেই। সূত্রের খবর, যে সব জায়গায় ফলাফল খারাপ হয়েছে সেই সব কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অবজারভারদের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
২০১৯-এর লোকসভা ভোট থেকেই নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার মতুয়া অধ্যুষিত এলাকাকে নিজেদের ‘গড়’-এ পরিণত করেছিল বিজেপি।
বনগাঁয় শান্তনু এবং রানাঘাটে জগন্নাথ সরকার জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। শান্তনু এখন কেন্দ্রের মন্ত্রীও। তবে দুই সাংসদই বুধবার দাবি করেছেন, পঞ্চায়েতের কোনও প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়বে না।
শান্তনুর কথায়,‘‘পঞ্চায়েতে তৃণমূল ছাপ্পা দিয়ে জিতেছে। যেখানে আমাদের প্রার্থী জেলা পরিষদ আসনে পাঁচ হাজার ভোটে জিতেছেন, সেখানে তাঁকে সার্টিফিকেট না দিয়ে তৃণমূলের হেরোকে জয়ী বলে ঘোষণা করেছে! লোকসভায় এ সব হবে না।’’
শুধু ২০১৯ সালের লোকসভা নয়, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও মতুয়া এলাকা থেকে বেশ কিছু আসন বিজেপির প্রার্থীরা জিতেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বাগদার বিশ্বজিৎ দাস। তিনি আবার তৃণমূলে ফিরেও গিয়েছেন। বুধবার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘শান্তনু ঠাকুর মতুয়াদের দেবোত্তর সম্পত্তিকে পৈতৃক সম্পত্তি ভেবেছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নবজোয়ার যাত্রার সময়ে মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দিতে চেয়েছিলেন। তাঁকে লোক দিয়ে হেনস্থা করিয়েছিলেন শান্তনু। মানুষ তার সপাটে জবাব দিয়েছেন! তিনি আরও বলেন, ‘‘শান্তনু মতুয়াদের রাজনীতিতে ব্যবহার করতে চান। মানুষ ওঁর চালাকি ধরে ফেলেছেন।’’
উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত বিধানসভা চারটি। বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা এবং গাইঘাটা। এই চারটি বিধানসভায় জেলা পরিষদের মোট আসন ৯টি। সবক’টিই জিতেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির ১২৪টি আসনের মধ্যে ১১২টি ঘাসফুল শিবিরের দখলে গিয়েছে।
গত লোকসভার আগে পর্যন্ত মতুয়া ‘ভোট ব্যাঙ্ক’ ছিল তৃণমূলের দখলেই। কিন্তু ও বাংলাদেশ ছেড়ে-আসা মানুষের যন্ত্রণাকে কিছুটা উস্কে দিয়েই বিজেপি নাগরিকত্বের ইস্যু নিয়ে তাঁদের কাছে পৌঁছেছিল।
অনেকের মতে, যে প্রত্যাশা বিজেপি তৈরি করেছিল, তা অনেকাংশেই পূরণ হয়নি। পঞ্চায়েতে মতুয়া গড়ে এই ‘ধাক্কা’ বিজেপি লোকসভায় সামলাতে পারবে কি? সেটাই এখন দেখার।