দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতার রবীন্দ্র সরণিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা, এমনই অভিযোগ।। বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র চেহারা নিল। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে ছুটে আসে দমকল। আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তারই চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, একদল লোক পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রথমে গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয় তার পর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে গাড়িটি। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। সেই আতঙ্কে আশেপাশের দোকান বন্ধ করে কার্যত এলাকা ছাড়েন ব্যবসায়ীরা।
এদিন সকাল থেকেই বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ চারদিক থেকে ব্যারিকেড দিয়ে অভিযান আটকানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা সেই ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনই পুলিশ প্রথমে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা শুরু করে। কাজ না হওয়ায় কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ছোড়া হয়। সঙ্গে শুরু হয় লাঠিচার্জ।
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে তিনটে পেরিয়ে গেলেও এখনও উত্তেজনা একফোঁটাও কমেনি। মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে পরিস্থিতি। উত্তেজিত কর্মী সমর্থকেরা। অভিযোগ সেই সমর্থকদের পাল্টা হামলায় এই আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আরও জানা গেছে, যখন আগুন লাগানো হয়, তখন এখানে পুলিশ ছিল না।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পাঁচ-ছজন এসে আগুন লাগিয়ে যায়। তারা বিজেপির মিছিলের কেউ কিনা খোঁজ করছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলেই স্পষ্ট হবে বলে জানা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে দমকলের দুটি ইঞ্জিন রয়েছে।
ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর ২টো পেরিয়েছে। সাঁতরাগাছিতে বিজেপি কর্মী, সমর্থকদের রুখতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, জলকামান ব্যবহার করছে পুলিশ। হাওড়া ব্রিজের উপর দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বাধীন মিছিলও আটকে গিয়েছে। বাধা পেয়ে হাওড়া ময়দানে রাস্তায় বসে পড়েছেন সুকান্ত মজুমদার।
এমন সময় চতুর্থ একটি মিছিল বের হয় বিজেপির রাজ্য সদর দফতর থেকে। নেতৃত্বে জগন্নাথ। মুরলীধর সেন লেন থেকে বেরিয়ে সেই মিছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে এগোতে থাকে। তখন অনেকেরই প্রশ্ন, সব মিছিল আটকে যাওয়ায় কি চতুর্থ মিছিল এগোবে নবান্নের পথে?
কিছু ক্ষণ পর জানা যায়, বিজেপির চতুর্থ মিছিলটি চলেছে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর, লালবাজার। বিজেপির অভিযানের কারণে হাওড়া এবং গোটা কলকাতা পুলিশে ছয়লাপ থাকলেও লালবাজারের নিরাপত্তা তুলনায় ঢিলেঢালা ছিল বলে দাবি বিজেপি নেতাদের একাংশের। তারই সুযোগ নিয়ে জগন্নাথের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মী, সমর্থকেরা পৌঁছে যান একেবারে লালবাজারের দোরগোড়ায়।
এই সময়ই খবর পাওয়া যায়, রবীন্দ্র সরণি ও এমজি রোডের সংযোগস্থলের কাছে পুলিশের গাড়িতে আগুন। সেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে লালবাজার অভিমুখে যাওয়া চতুর্থ মিছিলেও। যদিও ভিতরে ঢুকতে পারেননি তাঁরা। পুলিশ লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গ্রেফতার করা হয় জগন্নাথ, দীপাঞ্জন গুহ-সহ অন্যান্য নেতাকে।
পুলিশের বাধা পেয়ে মিছিলটি আবার উল্টো পথে আসতে শুরু করে। বিজেপি সদর দফতরের কাছে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপর শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন কর্মী-সমর্থকেরা। সেখানেও চলে আসে পুলিশ। লাঠিচার্জ করে মুরলীধর সেন লেনের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বিজেপি কর্মীদের।
এদিন বিজেপি-র নবান্ন অভিযান একটা সময়ের পর কার্যত লালবাজার অভিযানে পরিণত হয়। নবান্ন অভিযান নামক বিজেপির মেগা ইভেন্টের দুটি পক্ষ, পুুলিশ বনাম বিজেপি-সংঘর্ষে একটা নজিরবিহীন চিত্র ধরা পড়ে এমজি রোডে। বেলা তিনটের পর থেকে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে থাকে এমজি রোড। বিজেপি কর্মীরা সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তা হঠানোর চেষ্টা করতে থাকেন পুলিশ কর্মীরা। লাঠি উঁচিয়ে বিজেপি কর্মীদের দিকে তেড়ে যেতেও দেখা যায়। এমন একটা পরিস্থিতিতে বেলা সাড়ে তিনটের সময়ে এম জি রোডের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশের পিসিআর ভ্যান।
সেই ভ্যানটিতে আগেই ভাঙচুর চালিয়েছিলেন বিজেপির উত্তেজিত কর্মীরা। এক কর্মী গাড়ির ছাদে উঠে লাফালাফি করতে থাকেন। দেখা যায়, কয়েকজন গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে কাপড় পেঁচিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। গাড়ির মধ্যেই রাখা ছিল পুলিশের টুপি। কয়েকজন যুবক কলকাতা পুলিশের সেই টুপিতেই আগুন ধরিয়ে দেন। একই সময়ে পুলিশের গাড়িতে পেট্রল ঢালতে থাকেন কয়েকজন। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন।
ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় এলাকায়। গোটা এলাকা ব্যবসায়ী মহল্লা। দোকানিরা দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যেতে থাকেন। ঘিঞ্জি এলাকায় দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল প্রচুর। যে কোনও সময়েই বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতেই পারত। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে পৌঁছয় দমকল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
যদিও বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে আগুন লাগানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, “পুলিশ কিংবা তৃণমূলের কেউ আগুন ধরিয়েছে।”