দেশের সময় , কলকাতা: বাংলায় একাধিক দুর্নীতির মামলায় তদন্ত চালাচ্ছে ইডি-সিবিআই। পাশাপাশি বিভিন্ন মামলার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আদালতে বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে অভিযুক্তদের শারীরিক অসুস্থতার তত্ত্ব। এবার ফের একবার সেই অসুস্থতার কথাই শোনা গেল আদালতে। বনগাঁর তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য ‘ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসকে ইতিমধ্যেই রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছে ইডি। আর গ্রেফতার হতে না হতেই বিশ্বজিতের আইনজীবীর গলাতেও সেই অসুস্থতার তত্ত্ব।
বুধবার যখন বিশ্বজিৎ দাসকে বিশেষ ইডি আদালতে পেশ করা হয়, তখন অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডির আইনজীবীর যুক্তি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে বিশ্বজিতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সেই কারণে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে বিশ্বজিতকে আট দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় ইডি।
সেই সময়েই বিশ্বজিৎ দাসের আইনজীবী বলে ওঠেন, একাধিক রোগ রয়েছে তাঁর মক্কেলের। ফলে তাঁর যেন সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়, সেই বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। একইসঙ্গে আদালতের কাছে আইনজীবীর আরও আর্জি, ইডি হেফাজতে যেন অত্যাচার না করা হয় তাঁর মক্কেলকে।
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত বিশ্বজিৎ দাসের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, গতকাল থেকে সল্টলেকে বিশ্বজিৎ দাসের বাড়িতে ও অফিসে তল্লাশি চালিয়েছেন ইডির তদন্তকারী অফিসাররা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল যখন বিশ্বজিতের বাড়িতে ও অফিসে তল্লাশি চালাচ্ছিল, তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। জানা যাচ্ছে, তিনি ছিলেন বাংলাদেশে। ইডির অফিসাররা গতকালই বিশ্বজিতকে ফোন করেন এবং তারপর রাতেই বিমানে কলকাতায় ফেরেন বিশ্বজিৎ। এরপর বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিশ্বজিৎকে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত মঙ্গলবার সকালেই বিশ্বজিৎ দাসের সল্টলেকের বাড়িতে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকরা। তল্লাশি চালানো হয় সেখানে। একইসঙ্গে কৈখালিতে এই মামলায় ইতিমধ্যেই ধৃত বাকিবুক রহমানের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হানিস তোসিবালের ফ্লাটেও চালানো হয় তল্লাশি। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সেখানে তল্লাশি চালান ইডি আদিকারিকরা। হানিসের বিরুদ্ধে জীবনকৃষ্ণ সাহার মতো একই কায়দায় ফোন ছুড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে।
কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, বিশ্বজিৎ দাস আদতে বনগাঁর বাসিন্দা। শংকর আঢ্য এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই বিশ্বজিৎ দাসের নাম উঠে আসে তদন্তকারীদের কাছে। রেশন দুর্নীতি মামলায় যে কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে সে সংক্রান্ত বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার অভিযান চালায় ইডি। কোন টাকা কোথায় এবং কী ভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থার অফিসারেরা।
যদিও সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের ওই অভিযান শুধুমাত্র রেশন দুর্নীতির তদন্তের জন্য ছিল না, পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ সংক্রান্ত বিষয়েও খোঁজখবর নেন তদন্তকারীরা। ধৃত বিশ্বজিৎকে আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে চাইতে পারে ইডি। সেক্ষেত্রে দেখার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কী কী তথ্য উঠে আসে তদন্তকারীদের হাতে।