দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ জানুয়ারির তৃতীয় রবিবারটা দেশের শিল্প সংস্কৃতির জগতে বিরাট শূন্যতা ছড়িয়ে দিয়ে গেল। রবিবার রাতে শাঁওলি মিত্রের চলে যাওয়ার খবর পাওয়া গেল তাঁর ইচ্ছাপত্র অনুসারে শেষকৃত্য সারা হয়ে যাওয়ার পর। সোমবার সকালে আরও এক দুঃসংবাদ। রবিবার রাতে জীবনাবসান হয়েছে প্রবাদপ্রতিম কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজের। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে জীবনপ্রদীপ নিভে গেল ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্যের জগতের এক মহীরূহের।
জানা গিয়েছে, নাতিদের সঙ্গে মজা করছিলেন, খেলছিলেন তিনি। আচমকা বুকে ব্যাথা, শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। জ্ঞান হারান মহারাজ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয় তাঁকে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্প-সঙ্গীতের দুনিয়ায়।
শুধু তো নৃত্য নয়, সঙ্গীতের প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রায় অনায়াস যাত্রা ছিল তাঁর। নিজে যেমন দারুণ গাইতেন, ঠুমরী, দাদরা, ভজন, গজল সবেতেই যেমন গভীর ভাবে ডুবে যেতেন গাইতে গাইতে, তেমনই কী দাপট তবলা, নালে। তাঁর হাতে তবলার বোল যেন কথা বলত, দুহাতে ঝড়় উঠত। মুখে বোলবাণীও বলতেন দারুণ, আর তাকেই প্রাণ দিতেন তবলায়। বাজাতে পারতেন আরও হাজারটা বাদ্যযন্ত্র। আসলে শৈশব থেকেই যে সঙ্গীতে নিবেদিত, উত্সর্গ করা প্রাণ!
তবে পারফর্মার হিসাবে দীর্ঘদিন হল মঞ্চ থেকে সরে গিয়েছিলেন বয়সজনিত অসুস্থতার কারণ। মাত্র কয়েকদিন আগে কিডনির অসুখ ধরা পড়ে, ডায়ালিসিস চলছিল।
পন্ডিতজি বা মহারাজজি বলে ভালবেসে তাঁকে ডাকতেন গুণগ্রাহীরা। পেয়েছেন অজস্র সরকারি, বেসরকারি সম্মান। সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন অসংখ্য শিষ্য, ছাত্র-ছাত্রীর নিখাদ ভালবাসা, সম্মান। তিনি কত্থক নৃত্যশিল্পের আঁতুড়ঘর মহারাজ পরিবারের বংশধর,যে পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করতেন তাঁর দুই কাকা শম্ভু মহারাজ, লাচ্ছু মহারাজ ও তাঁর বাবা ও গুরু অচ্চন মহারাজ।
নৃত্যের সমঝদাররা বলেন, কত্থক নৃত্য আসলে গল্প বলা। বিরজু মহারাজের ক্ষেত্রে সেই গল্পের উত্স বা খনি ছিল তাঁর নিজের জীবন। ছোটবেলার নানা ঘটনা, বড় হয়ে ওঠা-এক অর্থে তাঁর নিজের জীবন যেন মিলেমিশে ছিল তাঁর নাচের মধ্যে। গল্প বলতেন যখন, পারিপার্শ্বিক , রোজকার জীবনের নানা অভিজ্ঞতাকেও মিশিয়ে দিতেন তাতে। তাঁর গল্প হয়ে উঠত এক সজীব চালচিত্র।
সেই জীবন শিল্পী চলে গেলেন জীবনের মঞ্চকে চিরবিদায় জানিয়ে।