আবারও বিপুল বিনিয়োগ এসেছে বাংলায়। বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বি টু বি তথা ব্যবসায়িক সংগঠনের মধ্যে এবং বি টু জি তথা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে বেশ কিছু পার্শ্ব বৈঠকের সঙ্গে মউ সাক্ষর হয়। তার পর এদিন বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি সবাই একটাই কথা জানার অপেক্ষায় রয়েছেন। তা হল, কত কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এল। সাংবাদিকরা তা শুনতেই এখানে বসে আছেন।’
অষ্টম বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলায় সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এসেছে বলে বৃহস্পতিবার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিন অর্থাৎ গতকাল শিল্পপতিরা যে সব অঙ্গীকার করেছেন, তা আমি এখনই হিসাবে ধরছি না। মুকেশ আম্বানি নিজেই বলেছেন, ১ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ করবেন। মুকেশজি ও সজ্জন জিন্দলের সঙ্গে পৃথক ভাবে আমার কথা হয়েছে। সজ্জন জিন্দল আরও একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের কথা জানিয়েছেন। অন্ডাল বিমানবন্দরের ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্টেও তাঁদের আগ্রহ রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সম্মেলন থেকে বাংলার এখনও পর্যন্ত প্রাপ্তির প্রসঙ্গ তুলে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত সাতটি বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ১৯.৫ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। তার মধ্যে ১৩ লক্ষ কোটি টাকার কাজ ইতিমধ্য সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। আরও ৬ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তার পর এবারও বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব এসেছে।
তাঁর কথায়, এবারের বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ২১২টি মৌ সাক্ষর হয়েছে। ৫ হাজার লগ্নিকারী এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন ২০টি দেশের প্রতিনিধি।
নিউটাউন কনভেনশন সেন্টারের মঞ্চ থেকে অশোকনগরে ONGC-এর প্রজেক্টের অগ্রগতির রিপোর্টও দেন। তিনি জানান, অশোকনগর থেকে তেল উত্তোলনের জন্য ১৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে। ভারতের পেট্রোলিয়াম মানচিত্রেও জায়গা করে নেবে বাংলা।
একইসঙ্গে তিনি আরও জানান, গত সাত বারের বাণিজ্য সম্মেলনের খতিয়ানও এ দিন পেশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘গত সাতটি BGBS-এ মোট ১৯ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছিল। তার মধ্যে ১৩ লাখ কোটির প্রজেক্টের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ। গত ১৪ বছরে আমাদের রাজ্যের পরিকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। বাংলার মতো এরকম সুযোগ সুবিধা কোথাও পাবেন না। একই জায়গায় বিশ্বমানের কনভেনশন সেন্টার, ইকো ট্যুরিজ়ম পার্ক, হর্টিকালচার টু পোলট্রি, স্মল টু বিগ স্কেল ইন্ডাস্ট্রি।’
বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর সরকার যেমন বেকারত্ব কমিয়েছে, তেমনই ১.৭২ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য সীমা থেকেও বার করে এনেছে। বাংলার পরিবেশ কাজের জন্য অত্যন্ত সুযোগ্য। কারণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘আমরা ভাগাভাগির রাজনীতি করি না। মন্দির, মসজ়িদ, গির্জা, গুরুদুয়ারা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলি। বাংলা সবসময় একতার মন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই এখানে সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ। যে কারণে শিল্পে জন্যেও নিরাপদ বাংলা।’
বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে এ বার পাঁচ হাজারেরও বেশি বিনিয়োগকারী যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাণিজ্য সম্মেলনে আসা ২০ দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদেরও ধন্যবাদ জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলায় আরও কর্মসংস্থান ও নতুন নতুন প্রজেক্টের হওয়ার আশা নিয়েই এ বারের মতো শেষ হলো অষ্টম বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলন এমনটাই জানালেন বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বনগাঁর ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তপন চক্রবর্তী , রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ,সুমন রায় ও প্রদীপদে প্রমুখ।