শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান নিয়ে বড়সড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া সরকারের লক্ষ্য। বাংলার মানুষের হাতে কাজ তুলে দেওয়াটাই আমারও লক্ষ্য। তাই আমার এখন সফর শুরু হল শিল্পায়নের।” একই সঙ্গে শিল্পপতিদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘বাংলায় থাকলে মনে রাখবেন আপনারা আমাদের পরিবারেরই একজন৷’ এ দিনই নিউ টাউনে বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের সূচনা হল৷ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজ্যপাল৷ পাল্টা বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যপালকে ধন্যবাদ জানান৷
করোনার কঠিন পরিস্থিতি পার করে ফের শিল্পমুখী হয়ে ওঠার বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,”দু’বছর পর এই প্রথম এই ধরনের বিজনেস সামিট আমরা করছি। সারা দেশে আমরাই প্রথম এই ধরনের সামিট করার ক্ষমতা রাখি। ৪২টি দেশ প্রতিনিধিত্ব করছে। আমরাই পারি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভাষণে আরও তুলে ধরেন, কীভাবে রাজ্য সরকার বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প ছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ তাদের দরজাতেই সরকারের সুবিধা পায়। কৃষকদের জন্যও কিষাণ ক্রেডিট কার্ড করা হয়েছে বলে জানান। উল্লেখ করেন দুই বোন পলিসির কথা, যেখানে এক বোন কৃষি হলে অপর বোন শিল্প।
এ রাজ্যে শিল্পের বিনিয়োগ কেন লাভজনক তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মমতা আরও বলেন, “সারা দেশের জিডিপি বৃদ্ধি যেখানে ঋণাত্বক, আমাদের সেখানে পজিটিভ। আবাসন, গ্রামীণ রাস্তা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, সংখ্যালঘু উন্নয়নে আমরা সারা দেশে প্রথম। এ রাজ্যের ১.৩৬ কোটি মানুষ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।”
তবে এসবের পাশাপাশি বারবারই তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে কাজ দিতে হবে। তাঁর কথায়, “সামাজিক সুরক্ষায় আমার যা করার ছিল আমি করেছি। এবার আমার লক্ষ শিল্পায়ন।” মন্ত্রী এই প্রসঙ্গে এই দিন দেউচা পাচামি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন।
বলেন, “দেউচা পাচামিতে আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাব্লক হতে চলেছে। একলক্ষ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করব। সে জন্য আমরা ওখানে পুনর্বাসনের প্যাকেজও ঘোষণা করেছি।”
মুখ্যমন্ত্রী বিজিবিএস মঞ্চ থেকে আরও জানান, “অশোকনগরে তেল উত্তোলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ রাজ্যে তিনটে মেগা টেক্সটাইল পাওয়ার পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এখানে পর্যটন শিল্পেরও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্গাপুজো ইতিমধ্যেই ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। যোগ্য প্রশাসনিক স্ট্রাকচারও রয়েছে, রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ। এ রাজ্যের যুব সম্প্রদায় যথেষ্ট ট্যালেন্টেড।”
এখানেই শেষ নয়, এ রাজ্যে শিল্পের অনুকূল পরিস্থিতির কথা নিশ্চিত করে তিনি আরও বলেন, “এখানে শান্তি বিরাজ করে, জাতপাত নিয়ে অসহিষ্ণুতা নেই। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা আছে। আমাদের এখানে কোনও শ্রমবিরোধ নেই।”
মনে করিয়ে দেন, উন্নয়নের আটটি স্তম্ভ রয়েছে, সব ক’টিই এরাজ্যে মেনে চলা হয়। সেগুলো হলো বিশ্বমানের পরিকাঠামো, শিক্ষা, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ক্যাপিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্রিয়েশন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস, ইজ অব গভর্নেন্স, নো স্ট্রাইক নো বনধ্।
সবশেষে মমতা শিল্পপতিদের উদ্দেশে বলেন, “বাংলা শুধু উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে নয়, বাংলা উত্তর-পূর্ব এশিয়ারও গেটওয়ে। যদি বাংলায় বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনাদের সামনে এইসব জায়গা খুলে যাবে। আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন।
আমার সরকার আপনাদের সব রকম সহযোগিতা করবে। আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন বোর্ড করেছি বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার জন্য। রাজনৈতিক ভাবে আমাদের হয়তো বিভিন্ন দলের ফারাক রয়েছে। কিন্তু যখন আপনি বাংলায় থাকবেন, জানবেন আপনি আমাদের পরিবারের অংশ। আগামী পাঁচ বছরে আমরা এখানে এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থান করব।”
এদিন নিজের বক্তব্যে তাজপুর বন্দর, দেউচা পাচামি কয়লা খনি প্রকল্প, সিলিকন ভ্যালির কথা উল্লেখ করেও পরিকাঠামো উন্নয়নে তাঁর সরকার কতটা জোর দিয়েছে, তা বোঝানোর চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷