দেশের সময়, বনগাঁ: পলাশের বন এলোমেলো করে পাগল হাওয়া যেন হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ! সে হাওয়া পাগল করে দিয়েছে কবিকেও। শ্রীজাত-র কলমে তাই পাওয়া যায় পলাশ-শিমুল-গুলালের ঘ্রাণ। বসন্তের মন-কেমন সকালে শ্রীজাত তাই লিখতে পারেন, ‘ইচ্ছে তো হয় হঠাৎ করে জড়িয়ে খুব ধরি/আকস্মিকের বায়না তোমার সতত সঞ্চরী,…’

পাতা ঝরে গিয়ে ফের কোনও এক বসন্ত সকালে পাতা বিহীন গাছগুলোতে দেখা দেয় কুঁড়ি,তারপর ফুলে ফুলে পূর্ণ হয় গাছগুলো।বিভূতিভূষণের বনগাঁ’র প্রকৃতি ও জানান দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে… !
দোলের আগেই শুরু হয়ে যায় বসন্ত উৎসবের প্রস্তুতি।বনগাঁ বিভূতিভূষণ বিএড কলেজ সেজে ওঠে শান্তিনিকেতনের আদলে৷উৎসবের দিন দুয়েক আগে থেকেই শুরু হয় কলেজ -ছাত্র-ছাত্রীদের নৃত্য-সংঙ্গীতের মহড়া। দেখুন ভিডিও :

এবার সপ্তম বছরে পা দিল বিভূতিভূষণ বিএড কলেজের ব্সন্ত উৎসব। বৃহস্পতিবার বসন্তোৎসবের টানে প্রতি বছরের মতো অসংখ্য মানুষ ভীড় করেন কলেজ প্রাঙ্গণে৷ অনেকেই সময়ের অভাবে যেতে পারেন না শান্তিনিকেতনে তাঁদের কাছে এই কলেজপ্রাঙ্গন হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতন ৷ গোবরডাঙা থেকে মা,বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন নিবেদিতা হালদার এমনটাই জানালেন তিনি৷

এঁদের মধ্যেই আরও একদল মানুষ এসেছিলেন যাঁরা বসন্তোৎসবের সকালে মঞ্চের অনুষ্ঠানে ‘‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো এবার…’’ গান এর সাথে আবির ছড়িয়ে রঙিন করে তুলেছিলেন বিভূতিভূষণের আঙিনা৷, এমন একটা জায়গায় বসন্তোৎসব দেখতে এবং উপভোগ করতে এসে তাঁরা ‘শুভ বসন্তোৎসব’ বলে আবিরে রাঙিয়ে দেন অন্যদের।

বসন্তোৎসবের সকালে হলুদ শাড়ি পরার রীতি রয়েছে এখানে। কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের আক্ষেপ, ইদানীং কিছু মানুষ এমন পোশাকে দেখতে পাওয়া যায়, যা বসন্তোৎসবের মননের সঙ্গে বেমানান। এ কথা ঠিক যে অনেকেই শাড়ি সামলাতে পারেন না কিংবা হলুদ শাড়ি হয়তো সঙ্গে আনেননি। তার পরিবর্তে অন্য রংয়ের শাড়ি কিংবা চুড়িদার পরা যেতেই পারে।

সেই ১৯৩১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল…’’ গানের সঙ্গে মন দুলে ওঠে। সকালের অনুষ্ঠান শেষে কিছুক্ষণ আবির খেলে নিয়েই পড়ুয়ারা তাঁদের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের পায়ে আবির স্পর্শ করেন।

এদিন বসন্ত উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ মহকুমার একাধিক কবি-সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতি মনভাবাপন্ন অসংখ্য মানুষ৷ কলেজ সভাপতি মিজানুর মন্ডল এবং প্রদীপ দে জানান, বিভিন্ন স্কুলের থেকে শুরু করে বনগাঁর বিভিন্ন নাট্যসংস্থা যেমন শ্রদ্ধাঞ্জলি, নিক্কন সহ বিভিন্ন নৃত্য সংস্থা এবারের বসন্ত উৎসবে সামিল হয়েছে।
ছাত্র- ছাত্রীদের জন্য মিষ্টিমুখের আয়োজনে কোনও খামতি রাখেন না তাঁরা। এই হল বনগাঁ বিভূতিভূষণ বি এড কলেজের বসন্তোৎসব। সীমান্তের কাঁটা তারের কাছের গ্রাম ছয়ঘরিয়া,যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বসন্ত উৎসবে বনগাঁর বিভূতি ভূষণের আঙিনা যেন গোটা দেশের সম্প্রীতির পীঠস্থান৷
