দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আন্দোলনের মাঝে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কপ্টারে দেশ ছেড়েছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে আসা হতে পারে দিল্লিতে। লাখ লাখ মানুষ হাসিনার বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন বলে খবর।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন। বোন রেহানাকে নিয়ে তিনি ঢাকার বাসভবন তথা ‘গণভবন’ ছেড়েছেন বলে খবর। তাঁকে কপ্টারে করে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের উদ্দেশে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ বায়ুসেনার কপ্টারটি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার উদ্দেশ্যে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন এয়ার কমোডর আব্বাস। তিনি ১০১ স্কোয়াড্রনের সদস্য।
বাংলাদেশের গণভবন এখন জনগণের দখলে। গণভবন হল সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অফিস ও বাড়ি। সেই বাড়িতে হু হু করে লোক ঢুকে পড়েছে। সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ কেউই তাদের বাধা দেয়নি বলে এখনও পর্যন্ত খবর। জানা যাচ্ছে দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পর কাছে পদত্যাগ পত্র পেশ করেছেন।
তিন দিন আগে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তখন জানানো হয় হাসিনা ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন কোটা আন্দোলনের নামে শ্রীলংকা মডেলে তাকে ক্ষমতা থেকে গদিচ্যুত করার চেষ্টা হয়েছিল।
https://x.com/AdityaRajKaul/status/1820387381121347673?t=nZgCUZpw8Ji3_O_XDimyOQ&s=19
দেখা গেল আন্দোলনের দ্বিতীয় দফাতে সেই শ্রীলঙ্কা মডেলেই গণঅভ্যুত্থান সম্পন্ন হল বাংলাদেশে। দু বছর আগে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন শাসক রাজাপক্ষে পরিবারকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানের কারণে। তবে হাসিনা তথা আওয়ামী লিগের জন্য চরম লজ্জা ও দুর্ভাগ্যের হল বাংলাদেশের স্থপতির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি একাধারে শেখ হাসিনার পিতা এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর ডাকেই পূর্ববঙ্গের মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশের দাবিতে পাকসেনার যুদ্ধ করে। ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হন। উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয় এক কোটি মানুষকে। সেই মুজিবকে হত্যার মাস শোকাবহ অগাস্টে দেশ ছাড়তে হল তাঁর দুই কন্যা হাসিনা ও রেহানাকে।
https://x.com/sidhant/status/1820389654593732790?t=7tICJwQxWccPyVq7kf-j0w&s=19
বাংলাদেশে সেনার অধীনে অন্তর্বর্তী তদারকি সরকার গঠিত হচ্ছে। একটি সূত্রের দাবি, তার আগে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ইস্তফা দেওয়ার জন্য। ৪৫ মিনিট সময় তাঁকে দেওয়া হয়েছিল বলে একটি সূত্রের দাবি। তবে অন্য একাধিক সূত্রের দাবি, পুরো বিষয়টিই হয়েছে সেনাবাহিনী এবং দিল্লির সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে। তার পরেই হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ গণমাধ্যমের একাংশের দাবি, দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগও পাননি। একটি সূত্রের দাবি, তাঁকে সেই সুযোগ নাকি দেয়নি সেনাবাহিনী। যদিও এই দাবির সরকারি সূত্রে কোনও সত্যতা স্বীকার করা হয়নি।
কপ্টারে বাংলাদেশ ছেড়েছেন হাসিনা। একটি সূত্রের দাবি, হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে উদ্ধারের জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশে বিমান পাঠানো হবে না বলে জানিয়ে দেয় নয়াদিল্লি। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের আকাশসীমায় ভারত কোনও বিমান পাঠাতে পারে না। কারণ, তাতে আইন লঙ্ঘিত হতে পারে। ভারত থেকে জানানো হয়, হাসিনাকে আগে ভারতে পৌঁছতে হবে। তার পর সেখান থেকে তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কপ্টারে ঢাকা থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে তাঁর নিকটবর্তী অবতরণ স্থান হতে পারে আগরতলা বিমানবন্দর। সেখান থেকে তাঁকে বিশেষ বিমানে করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। অন্যান্য সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, কলকাতা বিমানবন্দরে এবং শিলিগুড়ির কাছে বাগডোগরা বিমানবন্দরেও নামতে পারেন হাসিনা। তবে সেগুলি ঢাকা থেকে দূরে। হাসিনার সবচেয়ে নিকটবর্তী বিমানন্দর ত্রিপুরার আগরতলা।
হাসিনার পুত্র সাজিব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় থাকেন। কন্যা সাইমা ওয়াজেদ থাকেন দিল্লিতে। সেই কারণেই মনে করা হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে হাসিনার গন্তব্য হতে চলেছে দিল্লি।
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। হাসিনা বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করার পর তাঁর ভাষণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সংসদের স্পিকারকে আপাতত ক্ষমতা হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে খবর। তার পরে তদারকি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বাংলাদেশে তদারকি সরকার গঠিত হবে। বছর খানেক পরে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। তবে এ সবই এখন খুবই প্রাথমিক স্তরের বক্তব্য।
বাংলাদেশের জনতার কাছে সেনাপ্রধানের আর্জি, ‘‘ভাঙচুর, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকুন। ধৈর্য হারাবেন না। আমি নিশ্চিত, আপনারা যদি আমাদের কথামতো চলেন, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তা হলে আমরা একটা সুন্দর পরিণতির দিকে এগোতে পারব।’’
সেনা প্রধান বললেন, ‘‘আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি। আপনারা এখনই আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে, তা আমরা পূরণ করব এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব।’’
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বললেন, ‘‘আমরা এর আগে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর উপর আস্থা রাখুন। সশস্ত্র বাহিনীর উপর আস্থা রাখুন আমরা সমস্ত দায় দায়িত্ব নিচ্ছি।’’
প্রতিটি হত্যার বিচার হবে জানালেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। তবে একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের জনতাকে বলেছেন হিংসা পরিহার করে সংযত হওয়ার এবং শান্তি বজায় রাখার।
বাংলাদেশের সেনা প্রধান বললেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ চালাব’’। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।