আবারও পথে বাংলাদেশের পড়ুয়া, যুবসমাজ। তাঁদের এ বার দাবি একটাই, শেখ হাসিনা সরকারের অপসারণ। রবিবার থেকে সে দেশে শুরু হল অসহযোগ আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শাসকদল আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেন আন্দোলনকারীরা। বন্ধ করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা।
আশঙ্কায় সত্যি হল। আন্দোলন পাল্টা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে ফের বাংলাদেশে হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শাহবাগ, মুন্সীগঞ্জ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একদফা সংঘর্ষ শুরু হয়। তাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি।
বাংলাদেশে আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হল ১১। ‘প্রথম আলো’ দাবি করেছে, মুন্সিগঞ্জে দু’জন, বগুড়ায় তিন জন, মাগুরায় দু’জন, পাবনায় দু’জন, রংপুরে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বার সিলেটেও বিক্ষোভ। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে অভিযোগ। বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন বলে দাবি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বলে দাবি করেছে ‘প্রথম আলো’। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন গুলিবিদ্ধ। ঢাকার শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজার-সহ বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এসেছেন বলে দাবি সংবাদ সংস্থার। ঢাকায় পরিবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর কাউন্সিলর মহম্মদ আসাদুজ্জামানের কার্যালয়ে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়েছেন বলে অভিযোগ।
মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ৪জি ইন্টারনেট পরিষেবা।
বাংলাদেশে নিহত ছাত্রনেতা। মাগুরায় পুলিশ, শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান (রাব্বি)। মাগুড়ার এক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয় তাঁকে। সেখানে চিকিৎসার সময় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের প্রধান মহসিন উদ্দিন জানিয়েছেন, ওই যুবকের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। আরও ১০ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় শাসকদল আওয়ামী লীগ এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। ‘প্রথম আলো’ দাবি করেছে, আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালান শাসকদলের নেতা-কর্মীরা। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আট জন আহত বলে জানিয়েছে ওই সংবাদ সংস্থা।
ঢাকায় পরিবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর কাউন্সিলর মহম্মদ আসাদুজ্জামানের কার্যালয়ে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়েছেন বলে অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, রবিবার হলেও বাংলাদেশে কিন্তু এটি পূর্ণাঙ্গ কাজের দিন। সরকারি অফিস-সহ বেসরকারি ক্ষেত্রও খোলা থাকে। কারণ, বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার। কিন্তু রবিবার থেকে ফের অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। ফলে রাজধানী ঢাকা-সহ সারা দেশ নতুন করে অচল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জরুরি পরিষেবা অর্থাৎ হাসপাতাল, দুধ সরবরাহের গাড়ি ছা্ড়া অন্য সবক্ষেত্রে প্রশাসনের সঙ্গে অসহযোগিতার ডাক দিয়েছেন আন্দোললনকারীরা।
রবিবার থেকে পাল্টা পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লিগও। ফলে রবিবার থেকে নতুন করে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা ছিল। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, নতুন করে দেশে অরাজকতার পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।
শনিবার সন্ধ্যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকার শহিদ মিনারের জমায়েতে ঘোষণা করেন, আন্দোলন এখন থেকে এক দফার। সেই এক দফা দাবি হল, শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের অপসারণ। জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা এখন আর ছাত্র আন্দোলন নেই, এটা একটা রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কারণ, তাঁদের দাবি ছিল, সরকারি চাকরিতে কোটা বিলোপ। সেটা সরকার খুব দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর করেছে। অর্থাৎ ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এমনকী যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁদের দফায় দফায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে গণভবনে আলোচনায় বসতেও রাজি, তারপরও আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে। তারই প্রতিবাদে পথে নেমে আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।
দু’তরফের এই কর্মসূচি পাল্টা কর্মসূচি ঘিরেই নতুন করে হিংসার পরিবেশ বাংলাদেশে। যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।