বুধবারের পরে ফের বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি ভাষণ শেখ হাসিনার। আওয়ামি লিগের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আসেন তিনি। বুধবার রাতে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবর রহমানের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার নামে অকথ্য অত্যাচার করা হচ্ছে বলেও তোপ দেগেছেন তিনি।
ইউনুস সরকারের আপত্তি কানে তুলল না ভারত সরকার। পূর্ব নির্ধারিত সূচি মতোই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯’টায় দলের আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লিগের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘দায়মুক্তি’-তে যুক্ত হয়ে হাসিনা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে। সেই অনুষ্ঠানেই কান্না জড়ানো গলায় হাসিনা ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ভাঙার ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার প্রার্থনা করেন। বলেন, আমার বাবা দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আমি দেশের জন্য জীবনের সব কিছু ত্যাগ করেছি। প্রিয় দেশবাসী আপনারাই বিচার করুন, কী অপরাধ করেছি আমরা।
বুধবার রাতভর হামলা চালিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এ দিন শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতদিন সূর্য-চন্দ্র উঠবে…যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি থাকবে।’ বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে তার জন্য দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন হাসিনা।
বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফের ভারতের কাছে ক্ষোভ জানায় ইউনুস সরকার। বৃহস্পতিবার ঢাকায় অবস্থিত ভারতের হাই কমিশন অফিসে পাঠানো কূটনৈতিক নোটে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বুধবারের ভাষণকে উসকানিমূলক আখ্যা দিয়ে ইউনুস সরকার নয়াদিল্লির উদ্দেশে বলে, আওয়ামী লিগ নেত্রীকে যেন ফের ভাষণ দিতে না দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকালেই ঢাকার পররাষ্ট্রমন্ত্রক এক বিবৃতিতে এই কথা জানায়। হাসিনা গত বছরের পাঁচ অগাস্ট থেকে দিল্লিতে আছেন।
হাসিনাকে নিয়ে ইউনুস সরকারের আপত্তি কেন কানে তুলল না ভারত সরকার? পররাষ্ট্রমন্ত্রক সরকারিভাবে এই ব্যাপারে কিছু জানায়নি। তবে মন্ত্রকের একাধিক সুত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লিগ নেত্রী একজন রাজনীতিক। তিনি তাঁর দলের সঙ্গে কথা বলছেন। এতে ভারত সরকারের আপত্তি করার কিছু নেই। তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমালোচনা করছেন। দেশ বিরোধী কিছু বলছেন না।
এদিকে, বিকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশে অস্থিরতা উস্কে দেওয়া মিথ্যা এবং মনগড়া মন্তব্য এবং বিবৃতির বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার গভীর উদ্বেগ, হতাশার সঙ্গে জানাচ্ছে, এসব মন্তব্য বাংলাদেশে মানুষের অনুভূতিতে আঘাত হানছে। মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে যে, তার এসব কার্যকলাপ বাংলাদেশে বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করছে এবং দুই দেশের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টার পক্ষে সহায়ক নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে, পারস্পরিক সম্মান এবং বোঝাপড়ার প্রতি মর্যাদা দিয়ে বলা হয়েছে, হাসিনা যখন ভারতে আছেন, তখন তাঁকে মিথ্যা, মনগড়া এবং উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে যেন বিরত রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে যথারীতি ভাষণ দেন হাসিনা। তিনি দেশের চলতি পরিস্থিতির জন্য প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে দায়ী করেন।
বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল মিটিংয়ে আওয়ামি লিগের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। ৫ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আওয়ামি লিগের একাধিক নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে, একাধিক নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। আক্রান্তদের সঙ্গে, নিহত নেতা-কর্মীর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘এই তাণ্ডব যারা করছে, তারা বেশিদিন টিকতে পারবে না।’ আওয়ামি লিগের কর্মীদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘দেশকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। ধৈর্য ধরো, তৈরি হও।’ পাল্টা লড়াই করার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। ‘সব জবাব নেব, বেঁচে যখন গিয়েছি জবাব নেব’, হুঁশিয়ারি শেখ হাসিনার। অত্যাচারে আহত ও নিহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার বার্তাও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।