Bangladesh বাংলাদেশকে চার ধরনের ঋণ ও ১ বিলিয়ন ডলার দেবে চীন, ২১ টি সমঝোতা ও সাত ঘোষণা দুই দেশের

0
77
জাকির হোসেন, ঢাকা:

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে ২১টি সমঝোতা স্বাক্ষর ও সাতটি ঘোষণা এসেছে। এই সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে চার ধরনের ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে চীন। বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।

১০ জুলাই বুধবার বিকেলে বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি এ সময় বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় অব্যাহতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি।

হাছান জানান, ‘বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন চার ধরনের লোন দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশকে। এই প্যাকেজ বাস্তবায়নে একটি টেকনিক্যাল কমিটি‌ শিগগির বাংলাদেশ সফর করবে। এর আগে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে সাতটি ঘোষণাপত্র ও ২১টি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আবারও ঢাকাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বেইজিং।

একই সাথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা সমাধানে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সাথে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পায়রা বন্দরসহ দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নে চীন সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে৷’ এই সফরকে শতভাগ সফল দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের পঞ্চাশ বছরে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ককে পরের ধাপে নিয়ে যেতে চায়।’

তিনি আরও জানান, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সুবিধা নিয়েও নানা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করতেও রাজি হয়েছে চীন।’ টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতাভার গ্রহণ করার পর গত মাসে ভারত সফরে করেছিলেন শেখ হাসিনা। এর দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি চীন সফরে গেলেন। ১০ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সাথে বৈঠকের পর বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বরাদ্দ করেছে উল্লেখ করে হাসিনা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও চীনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।

এ ছাড়াও ব্রিকসে যেকোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করেন হাসিনা৷ এই অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সমর্থনের আশ্বাস দেন চীনের প্রধানমন্ত্রী। ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণের পর বাংলাদেশ যাতে কমপক্ষে তিন বছর এলডিসি সুবিধা লাভ করতে পারে এ বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চান তিনি। বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার বিষয়েও এই সফরে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাছান৷ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর।

যে ২১টি সমঝোতা ও ডকুমেন্টস স্বাক্ষরিত হলো- ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার, চায়না ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএফআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকিং এবং বিমা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই, বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রফতানিতে প্রটোকল সই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তা, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহায়তা, বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ বিষয়ে আলোচনার একটি সাইনিং অব মিনিটস (কার্যবিবরণী) সই, চীনের সহায়তায় ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ-চায়না মৈত্রী সেতু সংস্কার প্রকল্পের চিঠি বিনিময়, নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা পার্ক প্রকল্পে চায়না-এইড কনস্ট্রাকশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বিষয়ে চিঠি বিনিময়, চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প বিষয়ে চিঠি বিনিময়, মেডিকেল সেবা এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতা শক্তিশালী করতে সমঝোতা স্মারক, অবকাঠামোগত সহযোগিতা জোরদারে সমঝোতা স্মারক, গ্রিন অ্যান্ড লো-কার্বন উন্নয়ন বিষয়ে সহযোগিতায় সমঝোতা স্মারক সই, বন্যার মৌসুমে ইয়ালুজাংবু (ব্রহ্মপুত্র) নদীর হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বাংলাদেশ দেওয়ার বিধি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, চীনের জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন প্রশাসন এবং বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে পৃথক সমঝোতা সই, চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এবং বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে পৃথক সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই, চীনের শিক্ষা মন্ত্রক এবং বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে সমঝোতা নবায়ন, টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়৷ এছাড়া সাতটি ঘোষণাপত্রে রয়েছে- চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্তি, চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি ত্বরান্বিতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরুর ঘোষণা, ডিজিটাল কানেক্টিভটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণের সমাপ্তি, ডাবল পাইপ লাইন প্রকল্পের সঙ্গে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং এর ট্রায়াল রান সমাপ্তি ঘোষণা, বাংলাদেশের রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু, চীনের শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, বাংলাদেশে লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণের ঘোষণা। উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় যাওয়ার পর এটি শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মতো চীন সফর ছিল৷

Previous articleMadhuparna Thakur মায়ের সরকারি গাড়ি নিয়ে বুথ ভিজিটে!বিতর্কে বাগদার  তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা!
Next articleBagdah’জয়ের আবির আমরাই খেলব’, বাগদায় শান্তিপূর্ণ ভোট শেষে ‘কনফিডেন্ট’ মধুপর্ণা: দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here