বাংলাদেশে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হতে চলেছে নতুন রাজনৈতিক দলের। মহম্মদ ইউনুসের অনুগামী ছাত্র নেতৃত্ব বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নতুন দল ঘোষণা ঘিরে দেশে অশান্তি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ-প্রশাসন।
আগামী শুক্রবার নতুন দলটির সূচনা হবে। অপর সামাজিক মঞ্চ জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে মিলিত ভাবে এই রাজনৈতিক দল গঠন করছে তারা। কোন পক্ষের কারা কোন সাংগঠনিক পদে থাকবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃত্বের।
গত বছর জুনে জন্ম নিয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে নতুন ছাত্র সংগঠনের, যারা কোনও রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন নয়। শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধিতা করা ওই সংগঠনের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে উৎখাতের অভিযানে গড়ায়।
গণ অভ্যুত্থানের সাত মাসের মাথায় সেই ছাত্ররা শুক্রবার নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করতে চলেছে। এই উপলক্ষে ঢাকায় বড় সমাবেশের ডাক দিয়েছে তারা। যদিও সংগঠনটি সুত্রে খবর সোমবার বেশি রাত পর্যন্ত দলের নাম এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ দূর হয়নি।
নতুন দলের আহ্বায়ক হওয়ার কথা অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেশষ্টা নাহিদ ইসলামের। তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। দলের বাকি নেতৃত্ব নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। নাহিদ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে কারা আসছেন মঙ্গলবার বিকালে দল ঘোষণার পর জানা যাবে। তারপর অশান্তির আশঙ্কা করছে প্রশাসন। পদ না পেলে অনেকেরই বিদ্রোহী হওয়ার সম্ভাবনা।
নতুন দলের নাম রাখা নিয়েও নেতৃত্বের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। একাংশ চাইছে দলের ইংরিজি নাম হোক। আর এক দলের তাতে আপত্তি। দলের নাম জনশক্তি বা বাংলাদেশের জনশক্তি রাখার ভাবনা আছে। জনশক্তি নামে মহন্মদ ইউনুস একটি দল গড়েছিলেন। অধূনা অস্তিত্বহীন সেই দলের পুনরুজ্জীবনের ভাবনা আছে। ছাত্রদের একাংশের মতে, ‘বৈষম্যহীন’ কথাটি দলের নামের সঙ্গে থাকা জরুরি, কারণ, বৈষম্যের অবসানের কথা বলেই তারা ময়দানে নেমেছে।
ইউনুস অনুগামী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতির দল নিয়ে চিন্তায় আছে অন্যতম দল বিএনপি। আওয়ামী লিগ সেভাবে ময়দানে না থাকায় তারা ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিন্তে ছিল। কিন্তু ছাত্রদের দল গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে নতুন দল বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হতে চলেছে।
খালেদা জিয়ার দলও মনে করছে, ছাত্রদের নতুন দলকে নানাভাবে সহযোগিতা করবে সরকার ও প্রশাসন। নতুন দলটির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামির পরোক্ষে নির্বাচনী বোঝাপড়া হতে পারে বলেও মনে করছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার দলের আশঙ্কা, তাদের ক্ষমতায় ফেরা আটকে দিতেই নতুন দলটির আত্মপ্রকাশ হতে চলেছে।
সোমবারই প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের মার্চে। নতুন দলের ভোটে লড়াইয়ের জন্য হাতে থাকছে বছর খানেক সময়। যদিও তাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি শেষ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আওয়ামী লিগের থেকে বিএনপি-কে তারা আলাদা চোখে দেখছে না। দুটি দলই পরিবারকেন্দ্রীক এবং তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতায় অপব্যবহারের অভিযোগ উনিশ আর বিশ।