দেশের সময় , অশোকনগর : উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের দৌলতপুর এলাকায় ১৫ বিঘা জমির ওপর তৈরি হয় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন কেন্দ্র। সেই জায়গাতেই শনিবার শুরু হল তেল ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য বোরিং এর কাজ। এদিন স্থানীয় বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী সমস্ত জায়গা ঘুরে দেখেন।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানাগিয়েছে অশোকনগর জুড়ে আগামী দুবছরে ১৪ টি জায়গায় বোরিং করে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল খনন চলবে। অশোকনগর বাইগাছির পর দৌলতপুর এলাকায় বোরিং এর মাধ্যমে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান চালানোর কাজ শুরু হয়ে গেল।
আপাতত চারটি জায়গায় চলবে এই কাজ। ওএনজিসি তরফ থেকে জানা যায় গ্রুপ-বি, সি ও ডি যে সমস্ত কর্মী প্রয়োজন তা এলাকা থেকেই নেওয়া হবে। এছাড়া যে সমস্ত জমি কৃষকদের থেকে নেওয়া হচ্ছে তার সঠিক মূল্যায়নের পয়সা দেওয়া হবে কৃষকদের।
পাশাপাশি সরকারি জমি যদি থাকে সেখান থেকে সরকারের সঙ্গে কথা বলে তেল ও গ্যাস খনন করা হবে। অশোকনগর জুড়ে খুবই উন্নত মানের তেল ও গ্যাস পাওয়ায় ওএনজিসির বিরাট সাফল্য বলেই দাবি তাদের। পাশাপাশি অশোকনগরের আশেপাশে যে সমস্ত জায়গা থেকে কৃষকদের সঙ্গে জমি নেওয়া হবে তাদের সঙ্গেও কথা চলছে।
এদিন দৌলতপুর এলাকা থেকে যে ব্ল্যাক গোল্ড তোলা হয় তা উপহার স্বরুপ স্থানীয় বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী কেউ দেওয়া হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও এই স্যাম্পেল পাঠানো হবে এমনটাই সূত্রের খবর।
অশোকনগরের বিধায়ক জানান এত উন্নত ধরনের তেল এবং গ্যাস এখানে রয়েছে যে ভারতবর্ষের ইতিহাসে অশোকনগরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই তৈল ও এবং গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র চালু হওয়ার পরে এখানে বিভিন্ন অনুসারী শিল্প তৈরি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন এবং ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি অনুরোধ করেন তারা যেন স্থানীয় মানুষদের এখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
একমাত্র এই শর্তেই অশোকনগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাবে বলে বিধায়ক আশাবাদী। নারায়ন বাবু আরও জানান প্রথম থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশ মেনেই এই প্রকল্পের পাশেই আছেন তিনি।
সূত্র জানাচ্ছে, এই তেল-গ্যাস ক্ষেত্রটি বেঙ্গল বেসিনের অঙ্গ। এমন বেসিন বা অববাহিকায় হাইড্রোকার্বন জমা থাকার ফলে সৃষ্টি হয় গ্যাস ও তেল পাওয়ার সম্ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, সুন্দরবন-সহ কিছু এলাকা ছাড়াও বেঙ্গল বেসিনের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশের একাংশ।
পড়শি দেশ ইতিমধ্যেই সেখান থেকে তেল, গ্যাস উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। ওএনজিসির সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর এবং সংস্থার কর্পোরেট কমিউনিকেশনের এক প্রাক্তন কর্তার কথায়, ‘‘অশোকনগরে প্রকল্পটি গড়ে ওঠার ফলে পশ্চিমবঙ্গ এই প্রথম দেশের হাইড্রোকার্বন এলাকার মানচিত্রে স্থান পেতে চলেছে, যেখানে তেল এবং গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’
প্রসঙ্গত, অশোকনগরে প্রায় ১০ বছর আগে অনুসন্ধান শুরু করে ওএনজিসি। তিনটি অনুসন্ধান কুয়ো (এক্সপ্লোরেশন ওয়েল) খোঁড়ার পরে ২০১৬ সালে প্রথম পাওয়া যায় গ্যাসের সন্ধান। তেল পাওয়ারও স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে।
এর জন্য আগেই অনুসন্ধান কুয়ো খোঁড়ার পরিকল্পনা ছিল সংস্থার। এক সূত্রের খবর, গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পরে তার উত্তোলন শুরুর জন্যও কুয়ো (ডেভেলপমেন্ট ওয়েল) খোঁড়া শুরু হয়েছে। এটি শেষ করার কাজ চলবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। এখান থেকেই তোলা হবে গ্যাস।
উল্লেখ্য, দেশে মোট ২৬টি হাইড্রোকার্বন বেসিন রয়েছে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৭টি থেকে গ্যাস এবং তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে। অশোকনগরেরটি অষ্টম। আটটি বেসিনের মধ্যে ৭টি ওএনজিসির এবং একটি অয়েল ইন্ডিয়ার।