দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ আজ ফের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখার্জির।
কলকাতা হাইকোর্টের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, হেফাজতে থাকাকালীন প্রতি ৪৮ ঘন্টা অন্তর তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। শেষবার, বুধবার তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জোকা ইএসআই হাসপাতালে। সেখানে দুজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়।
বুধবারের পর গতকাল আর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সুত্রের খবর, আজ, শুক্রবার ফের তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাবেন ইডি আধিকারিকরা।
এদিকে,টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, বেলঘরিয়া, চিনার পার্কের পরে এবার আরও একটি ঠিকানার খোঁজ পেল ইডি ! অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের জেরা যত এগোচ্ছে, ততই যেন একের পর এক ধনসম্পত্তির সিন্দুক খুলে যাচ্ছে। গতকাল রাতেই চিনার পার্কের পাশাপাশি নয়াবাদের পঞ্চসায়রেও হানা দেন ইডির আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রের খবর, এই নয়াবাদেও অর্পিতার আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেই খবর অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চসায়রের একটি আবাসনের ডি ব্লকের বি৩ অ্যাপার্টমেন্ট তল্লাশি চালায় ইডি। সেখানে রাতে চলেছে তল্লাশি। বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে এই অভিযান চলছে। ইতিমধ্যেই সেখানে প্রিন্টার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সিজার লিস্ট তৈরি হবে বলেই মনে করছেন সকলে।
ইডির তল্লাশির খবর আসতেই আবাসনের সামনে এলাকার লোকজন ভিড় করেছেন। গত কয়েকদিনে যে বিপুল টাকার পাহাড় তাঁরা টিভির পর্দায় দেখেছেন, তেমনটা কি এই ফ্ল্যাট থেকেও উদ্ধার হবে, এমনটাই প্রশ্ন সকলের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এই ফ্ল্যাটে সম্প্রতি অর্পিতাকে দেখা যায়নি। তবে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এখানে আসতেন তিনি, এমনকি মাঝরাত পর্যন্ত পার্টিও করতেন। প্রতিবেশীরা বলছেন, বেশিরভাগ দিনই গভীর রাতে এই ফ্ল্যাটে আসতেন অর্পিতা। চলত দেদার খানাপিনা আর হইহই।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, হেফাজতে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতাকে কখনও আলাদা করে, কখনও আবার মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন নথি দেখিয়ে নতুন নতুন প্রশ্ন করা হচ্ছে। টানা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অর্পিতা একসময়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বলেও সূত্রের খবর।
দাবি করেন, তাঁর দু’টি ফ্ল্যাট থেকে বিপুল নগদ মিললেও, এর সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সেটা বিশ্বাস করছেন না তদন্তকারীরা।
গতকালই নয়াবাদের পাশাপাশি চিনার পার্ক এলাকার ন’পাড়ার পূর্ব পাড়ায় রয়্যাল রেসিডেন্সির বি ব্লকের চারতলায় ৯০০ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাটেও হানা দেয় ইডি। ওই আবাসনের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটটি কেনার পর থেকে একবার মাত্র এসেছিলেন অর্পিতা। ২০১৮ সালে, পুজোর সময়ে। তিনি কালো রঙের মার্সেডিজ গাড়ি চেপে এসেছিলেন বলেও মনে করতে পারছেন অনেকে।
তবে ফ্ল্যাটের মেনটেন্যান্স বাবদ যে টাকা প্রতি মাসে দিতে হতো, তা অনেক দিন দেননি অর্পিতা, এমনটাই দাবি আবাসন কর্তৃপক্ষের। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ফ্ল্যাটের মেনটেন্যান্স বাবদ বাকি রয়েছে ৩৮ হাজার টাকা।নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গেও কথা বলেন ইচি অফিসাররা। পার্থ চট্টোপাধ্যায় আসতেন কিনা, খোঁজ নেন।
প্রসঙ্গত, এই শনিবারই টালিগঞ্জে অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ইডি। এই খবরে যখন সারা রাজ্যে আলোড়ন পড়ে গেছে, তখনই বেলঘরিয়ায় অর্পিতার আরেকটি ফ্ল্যাটে ইডি হানা দিয়ে উদ্ধার করে নগদ ২৮ কোটি টাকা এবং চার কোটি টাকা মূল্যের ৬ কেজি সোনা। বৃহস্পতিবার সকালেই আটটি ট্রাঙ্কে টাকা-গয়না ভরে ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরোন ইডির অফিসার ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
এবার চিনার পার্ক বা নয়াবাদেও কি তেমন কিছুই মিলবে, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা সকলের।
রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত শনিবার ইডি গ্রেপ্তার করেছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে। গ্রেপ্তারির ৬ দিন পর, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর হাতে ছিল তিনটি দপ্তর, পরিষদীয়, শিল্প ও বাণিজ্য এবং তথ্য প্রযুক্তি। নতুন করে মন্ত্রিসভা গঠনের আগে পর্যন্ত এই দপ্তরগুলি সামলাবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর পরেই, গতকাল বিকেলেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করে তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি যে কয়েকটি পদে ছিলেন, সবকটি পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে তাঁকে।