দেশের সময়, হুগলি : দুজনের চেহারায় অদ্ভুত মিল৷ মাছবাজারে বসে আছেন তিনি। চারপাশে মাছের সারি। পরনে চেক লুঙ্গি, গেঞ্জি কাপড়ের গেরুয়া ফতুয়া। তাকিয়ে রয়েছেন খানিকটা বেজার মুখেই। গোঁফ থেকে চুলের কাট, এমনকি চাহনিটাও পর্যন্ত মিলে যাচ্ছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই ছবি দেখে নেটাগরিকরা চমকে গিয়েছেন। কারণ, প্রথম জীবনে বাজারে মাছই বিক্রি করতেন বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তাঁর রাজনীতিতে আসা। ফলে, ভাইরাল হওয়া ওই ছবি ঘিরে তৈরি হয় কৌতূহল।
ভালো করে না দেখলে ভিন্ন মানুষ বোঝার উপায় নেই। চেহারায় হুবহু সাদৃশ্য, তাও আবার বীরভূমের অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মন্ডলের সঙ্গে। সম্প্রতি দিল্লী গিয়েছেন অনুব্রত। তাঁকে জেরা করছে ইডি। এখন শুধু তাঁরই ছবি আর খবরে ছেয়েছে যাবতীয় সংবাদ মাধ্যম। ঠিক এমন সময় ভাইরাল হওয়া ছবি নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় শেওড়াফুলির মাছ ব্যবসায়ী
গত ৩০ বছর ধরে শেওড়াফুলি মাছ বাজারে মাছ বিক্রি করছেন সুকুমার হালদার। শেওড়াফুলি নিমাইতীর্থ ঘাট এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি। সম্প্রতি পা ছড়িয়ে বসে আঁশ বটির সামনে মাছ বিক্রি করার সুকুমারের একটি ছবি ভাইরাল হয়। কাকতালীয় ভাবে সকলের নজর পড়ে বীরভূমের অনুব্রত মন্ডলের সঙ্গে তাঁর চেহারার সাদৃশ্য। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে রাতারাতি সুকুমার পৌঁছে যায় চর্চার শীর্ষে।
বর্তমানে মাছের ক্রেতারাও তার কাছে এসে বলেছেন সুকুমার নাকি এখন অনুব্রত হয়ে গেছে। জানা গেছে, অনুব্রত মন্ডলও নাকি এক সময় মাছ বিক্রি করতেন। তাই, তাঁর সঙ্গে সুকুমারের চেহারার সঙ্গে মিল থাকায় মাছ বিক্রির ছবি দুয়ে দুয়ে চার হতে সময় লাগেনি। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এটা কেষ্টর ছোটোবেলার ছবি। ছবি ভাইরাল হতেই ঘরে বাইরে সর্বত্রই বিড়ম্বনায় সুকুমার। শেওরাফুলি বাজারে সুকুমারের পাশেই বসে মাছ বিক্রি করেন রানা পাত্র।
তবু কোনও দিন সুকুমার এবং অনুব্রতর চেহারার সাদৃশ্য তার নজরে পড়েনি। তবে ছবি ভাইরালের পর তারাও ভাবতে শুরু করেছেন।
এ ভাবে স্বামীর ছবি ভাইরাল হওয়ার খবর পেয়ে হতবাক সুকুমারের স্ত্রী শুক্লা হালদার। তাঁর কথায়, ‘‘কী অবস্থা! এটা শুনে কষ্ট পাচ্ছি। ওঁর পা ভাঙা। চিকিৎসার খরচ মেটাতে আমরা নিজেদের দু’টি বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছি। যারা আমার স্বামীর ছবি ভাইরাল করেছে তাদের শাস্তি চাই। এটা জঘন্য কাজ করেছে।’’ অনুব্রতর সঙ্গে তুলনার কথা উঠতেই ফুঁসে উঠলেন শুক্লা, ‘‘৩০ বছর ধরে এই বাজারে উনি মাছ বিক্রি করেন। ওঁকে কখনই অনুব্রত মণ্ডলের মতো দেখতে নয়। গরু পাচারকারী, শয়তান, অপরাধীর সঙ্গে আমার স্বামীর তুলনা! যে এমন করেছে তার মুখে ঝাঁটা মারি।’’ কেষ্ট-নিন্দা করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুক্লা। বললেন, ‘‘দিদি আমাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার দিচ্ছে। তা আমার সংসার চালাতে কাজে লাগে।’’
শেওড়াফুলি বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তাঁর মোবাইলেও এসেছে ছবিটা। যেই করুক, এটা মজার ছলে করা হয়েছে। তিনি ভেবেছেন, শেওড়াফুলিতে আবার অনুব্রত এলো কোথা থেকে।