দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ লড়াই শেষ হল অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানল যাবতীয় প্রেম, পূজা,প্রার্থনা। সকলকে চোখের জলে ভাসিয়ে চলে গেলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা ৷
রবিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হয় ঐন্দ্রিলার। সেদিন থেকেই হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। মাথায় অস্ত্রোপচার হয়েছিল। জানা গিয়েছিল, যেদিকে অস্ত্রোপচার হয়েছিল, তার বিপরীত দিকে রক্ত জমাট বাঁধে। বুধবার সকালে পরপর হার্ট অ্যাটাক হয়। ভেন্টিলেশনের মাত্রা বাড়ানো হয় সেই সঙ্গে। এরপর শনিবার সন্ধেয় এবং রাতে পরপর ১০ বার হার্ট অ্যাটাক হয় অভিনেত্রীর। রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ প্রয়াত হন ঐন্দ্রিলা।
দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্রেন স্ট্রোক নিয়ে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন দু’বার ক্যানসারজয়ী এই অভিনেত্রী। অস্ত্রোপচারও হয়েছিল তাঁর মাথায়। কিন্তু ধকল সইতে পারল না শরীর। শনিবার রাতে পরপর দশবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তিনি। শেষমেশ রবিবার দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে সব শেষ।
গত সোমবারই সন্ধেয় ঐন্দ্রিলার প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী পোস্ট করেছিলেন, সকলে যেন ঐন্দ্রিলার জন্য প্রার্থনা করেন, যেন কোনও মিরাকেলের জন্য প্রার্থনা করেন। তখনই অশুভ আশঙ্কায় কেঁপে উঠেছিল ভক্ত-অনুরাগীদের মন।
একবার নয়, দু’বার ক্যানসার থাবা বসিয়েছিল ঐন্দ্রিলার শরীরে। ২০১৫ সালের পর ২০২১। গত বছর ডিসেম্বরেই দ্বিতীয়বার ক্যানসার জয় করে সুস্থতার পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছিলেন টেলিভিশনের পর্দার এই পরিচিত মুখ। একবছরের মধ্যেই ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
২০১৭ সালে ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের হাত ধরেই ছোটপর্দায় অভিষেক ঐন্দ্রিলার। সেই ধারাবাহিকে ঐন্দ্রিলার বিপরীতে ছিলেন অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী। কাজের মাঝেই গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। পরে সেই বন্ধুত্ব প্রেমে বদলে যায়।
সবসময় ইতিবাচক কথা বলা সব্যসাচী কেন এমন বলছেন! প্রার্থনা, উদ্বেগ, শুভকামনায় ভরে যায় ফেসবুক। কিন্তু অসুখের কাছে হার মানে সে সব।
গত বুধবার সকালে দ্বিতীয়বারের জন্য হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। সিপিআর দেওয়া হয় অভিনেত্রীকে। শনিবার সন্ধেবেলা আবার হার্ট অ্যাটাক হয়। রাতে পরপর হার্ট অ্যাটাকের পরই ডাক্তাররা প্রমাদ গুনতে শুরু করেছিলেন। যদিও শেষ অবধি চেষ্টা জারি ছিল। কিন্তু রবিবার দুপুরে জানা গেল, আর প্রাণ নেই ঐন্দ্রিলার শরীরে। মারা গিয়েছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার অভিনেত্রীর স্ক্যান রিপোর্টে ধরা পড়েছিল, ঐন্দ্রিলার ব্রেন স্ট্রোকের পর মাথার যেদিকে অস্ত্রোপচার হয়েছিল, ঠিক তার বিপরীত দিকে নতুন করে রক্ত জমাট বেঁধেছে, যা চিন্তা বাড়িয়েছিল চিকিৎসকদের। তাঁরা জানিয়েছিলেন, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর যেহেতু অস্ত্রোপচার হয়েছিল অভিনেত্রীর, তাই নতুন করে এই মুহূর্তে আর কোনও অস্ত্রোপচার করা যাবে না। তাই ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা হচ্ছিল ঐন্দ্রিলার। পুরনো ওষুধ বদলে দিয়ে চালু করা হয়েছিল নতুন অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু একের পর এক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন চিকিৎসকরা। অবশেষে আশঙ্কা সত্যি করেই এল চরম দুঃসংবাদ।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১ তারিখে হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ক্যানসারজয়ী অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মাকে। এরপরই কোমায় চলে যান তিনি। হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয় তাঁকে। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই অনেকেই তাঁর আরোগ্য কামনা করেন। ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী থেকে অনুরাগীরা তাঁর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আশায় দিন গুনছিলেন নিরন্তর।
গত কয়েক বছর ধরে জীবন-মরণ যুদ্ধের পর ক্যানসারকে জয় করেছিলেন তিনি। মারণরোগকে হারিয়ে আবার অভিনয় দুনিয়ায় ফিরেওছিলেন। আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ ছিলেন ঐন্দ্রিলা। এ মাসে ব্যক্তিগত কাজে বাইরে যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই হঠাৎ ছন্দপতন।
ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে বরাবরই ফেসবুকে আপডেট দেন সব্যসাচী। অভিনেত্রীর ক্যানসার জয়ের লড়াই সব্যসাচীর কলমেই জেনেছিলেন সকলে।
গত সপ্তাহেই সব্যসাচী ফেসবুকে লিখেছিলেন , ‘…ভাল আছে বলতে আমার ভয় লাগে, কিন্তু ঐন্দ্রিলা আছে। প্রচণ্ডভাবে আছে। আমার সামনে শুয়ে থেকেও হয়তো কয়েক সহস্র মাইল দূরে আছে কিন্তু ঠিক ফিরে আসবে। ওর একা থাকতে বিরক্ত লাগে।’ কিন্তু এবার আর পারলেন না। থেমে গেল সবটুকু। নিভে গেল ঐন্দ্রিলার জীবনদীপ।
প্রসঙ্গত, ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিক শেষ হওয়ার পর ২০১৯ সালে ঐন্দ্রিলাকে দেখা যায় ‘জিয়ন কাঠি’ ধারাবাহিকে। এই বাংলা ধারাবাহিকের হাত ধরেই ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পান অভিনেত্রী। সম্প্রতি ক্লিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘ভাগার’ ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছিলেন ঐন্দ্রিলা।