দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে জ্বলছে আগুন। ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশের একাংশ। সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে যে শর্তের কথা বলা হয়েছে এই প্রকল্পে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না চাকরিপ্রার্থীরা। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভের আঁচ।
বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, তেলঙ্গনা সহ একাধিক রাজ্যে লাগাতার বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে গত কয়েকদিন ধরে। জ্বলছে একের পর এক ট্রেন।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, রাজ্যগুলির নিরাপত্তা কড়া করার নির্দেশ দিয়েই রাজ্যের মুখ্যসচিবদের চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র। স্টেশন, জাতীয় সড়ক এবং সরকারি অফিসগুলিতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করার কথা বলা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রেল পরিষেবায়। যেখানে সেখানে স্টেশন, ট্রেন জ্বালিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল পুরী ৷
অনিল পুরী বলেছেন, যাঁরা স্টেশনে, ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে, সেনায় নিয়োগের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বিক্ষোভে যারা সামিল হয়েছে তাঁদের ভারতীয় সেনায় জায়গা হবে না।
গত বুধবার ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই প্রকল্পে ভারতীয় সেনায় ‘অগ্নিবীর’দের নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। চার বছরের চুক্তির ভিত্তিতে অগ্নিবীররা নিযুক্ত হবেন সেনায়।
তারপর ২৫ শতাংশ পাকাপাকিভাবে চাকরি পাবেন, বাকিদের এককালীন ভাতা নিয়েই অবসর নিতে হবে। অনেকেই বলছেন সেনা খাতে খরচ কমাতে কেন্দ্র এমন নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল পুরী একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, খরচ কমানো সরকারের লক্ষ্য নয়। বরং এই প্রকল্পে আগামীদিনে খরব আরও বেড়ে যেতে পারে।
সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত জওয়ানদের গড় বয়স কমিয়ে আনাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য বলে জানান অনিল পুরী। ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে ১৭ থেকে ২৩ বছর বয়সি যুবকরা আবেদন জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
ভারতের সশস্ত্র সেনায় যোগ দেওয়ার গড় বয়স আপাতত ৩২ বছর। ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প চালু হলে এই গড় বয়স দাঁড়াবে ২৬ বছর, জানিয়েছেন অনিল পুরী।
‘অগ্নিপথ’ নিয়ে অবশ্য প্রাক্তন সেনাকর্তাদের মত ভিন্ন। তাঁরা বেশিরভাগই বলছেন এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে পাইলট প্রজেক্টের দরকার ছিল।
আরও ভাবনাচিন্তার দরকার ছিল। মাত্র ৪ বছরের জন্য সেনায় যাঁরা নিযুক্ত হবেন, দেশের জন্য জান লড়িয়ে তাঁরা যুদ্ধ করবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এদিকে ‘অগ্নিপথ’ বিরোধী আন্দোলন ক্রমে তীব্র হচ্ছে। বিহার থেকে যা শুরু হয়েছিল তা ক্রমে তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। রেল অবরোধ, ট্রেনে অগ্নি-সংযোগ জারি আছে। বাংলাতেও এই বিক্ষোভের আঁচ এসে লেগেছে।
অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদে দেশের অবস্থা ভয়াবহ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত ভারতের ১৩টি রাজ্যে। বিক্ষোভের আঁচে সবথেকে বেশি পুড়েছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ। রিপোর্ট বলছে শুধু বিহারেই বিক্ষোভে ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকার রেলের সম্পত্তি। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তিন সেনা প্রধানকে নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বৈঠকে বসেছেন ইতিমধ্যে।
হাওড়া-শিয়ালদহ শাখা থেকে একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন বাতিলকরে দিতে হয়েছে। যাঁরা এমন হিংসাত্মক আন্দোলন করে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছেন ভবিষ্যতে তাঁদের চাকরি পেতে সমস্যা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সেনাকর্তা অনিল পুরী।