দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ উত্তরাখণ্ডে ৪০০ কোটির প্রকল্প নিয়ে হাজির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সাতসকালে কেদারনাথ মন্দিরে পুজো দিলেন। আদি শঙ্করাচার্যের সমাধিসৌধের উন্মোচন করলেন। কেদারপুরী-সহ একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধনে নির্বাচনী কৌশল দেখছেন অনেকে।
দু’দিন আগে গ্লাসগো। দেশে ফিরেই জম্মু উপত্যকায় পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । নওশেরায় সেনা ছাউনিতে প্রতিবারের মতো জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলি উদযাপন করেছেন। তারপর শুক্রবার, দীপাবলির ঠিক পরের দিনটিতে সকালেই উত্তরাখণ্ড। প্রথমেই কেদারনাথ মন্দিরে যান প্রধানমন্ত্রী। পুজো দেন। জলাভিষেক এবং রুদ্রাভিষেকে অংশ নেন। আরতি করেন।৮ বছর আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল সমগ্র কেদারনাথ-সহ উত্তরাখণ্ড। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল শঙ্করাচার্যের সমাধিক্ষেত্রটিও। মোদি এদিন মন্দির চত্বরে আদি শঙ্করাচার্যের সমাধিসৌধের উন্মোচন করলেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বেশ কয়েকবারই কেদারনাথ সফরে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এটা ছিল তাঁর পঞ্চমবারের সফর। ২০২২ সালের আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যার বিশেষ রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে বৈকি।২০১৩-র প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর মোদি কেদারনাথের পুণনির্মাণের জন্য বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, তখন অনুমতি মেলেনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবারই কেদারনাথ সফর করেছেন এবং বহু কোটি টাকা ব্যয়ে নয়া কেদারপুরী নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছেন। মোদীর ঐকান্তিক চেষ্টায় কেদারপুরী নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে।
আদি গুরু শঙ্করাচার্যের মূর্তি সংস্কার কাজের পেছনে রয়েছে অজানা গল্পঃ
২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের বন্যায় ভেসে যায় কেদারনাথের অনেকাংশ। সেই তালিকায় ছিল আদি গুরু শঙ্করাচার্যের মূর্তিও। তারপর থেকেই পুরনো স্থানে আবার তাঁর মূর্তি সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সেই মূর্তির এদিন উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মূর্তি তৈরি পিছনে ছিল ৯ জন শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রম।
একবছর আগে থেকে এই সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ৩৫ টনের এই ১২ ফুটের মূর্তি তৈরি হয়েছে। ক্লোরাইড পাথর দিয়ে এই মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। এই পাথরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল রোদ, বৃষ্টির মতো প্রতিকূল পরিবেশও কোনও ক্ষতি হয় না।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই মূর্তি তৈরির আগে ১৮টি নমুনা তৈরি করা হয়। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শে একটিকে বাছাই করা হয়। সেই মূর্তিই শোভা পাবে কেদারনাথ মন্দির চত্বরে।
৮ বছর আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল সমগ্র কেদারনাথ-সহ উত্তরাখণ্ড। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল শঙ্করাচার্যের সমাধিক্ষেত্রটিও। মোদী এদিন মন্দির চত্বরে আদি শঙ্করাচার্যের সমাধিসৌধের উন্মোচন করলেন। একটি পাথর কেটে ১২ ফুট উচ্চতার এই মূর্তি মাইসুরুর শিল্পী অরুণ যোগিরাজ-সহ ৯ জন শিল্পী গত এক বছর ধরে তৈরি করেছেন। শঙ্করাচার্যের এই মূর্তির ওজন ৩৫ টন। আদি গুরু শঙ্করাচার্যের ১৮টি মূর্তি তৈরি করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে একটি মাত্র মূর্তি বাছাই করা হয়। ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডে বিধ্বংসী বন্যায় আদি শঙ্করাচার্যের মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা পুনরায় নির্মাণ করা হল। অষ্টম শতাব্দীর দ্রষ্টা আদিগুরু শঙ্করাচার্য কেদারনাথেই মোক্ষ লাভ করেছিলেন।
অন্যদিকে, শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কেদারনাথ মন্দিরের দরজা। তার আগেই কেদারনাথ সফর সেরে নিলেন প্রধানমন্ত্রী।এদিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ দেরাদুন বিমানবন্দরে পৌঁছন মোদী। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) গুরমিত সিং এবং মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। দেরাদুন থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার থেকে হেলিকপ্টারে কেদারনাথ যাত্রা করেন মোদী। রুদ্রাভিষেক এবং মূর্তি উন্মোচনের পাশাপাশি ৪০০ কোটি টাকার কেদারনাথ ধাম পুনর্গঠন কর্মসূচির অগ্রগতির পর্যালোচনা করেন তিনি। নতুন প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন। মোদী বলেছেন, ‘‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কেদারনাথ তীর্থক্ষেত্র পুনর্গঠনের কথা বার বারই আমার অন্তর বলেছে। কথা দিয়েছিলাম। কথা রাখলাম। বাবা কেদারনাথের ইচ্ছেয় সব সম্ভব হল।’’