কলকাতা: স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মনোস্কোপ এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে অ্যাসিড আক্রান্তদেরকে নিয়ে। কলকাতার কলাকুঞ্জে সম্প্রতি ছ’জন অ্যাসিড আক্রান্তদেরকে একত্রিত করে তাদের জীবন কাহিনী তুলে ধরা হলো সকলের সামনে। আক্রান্তরা তাদের চাপা দেওয়া কষ্ট এবং জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলতে শুরু করেন অবলীলায়।কারো পরিচিত কাছের মানুষের দৌরাত্ম্য হয়ে উঠেছিল মাত্রাছাড়া। কারো বা আসে কুপ্রস্তাব । প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁরা। তাঁদেরকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। সেই প্রতিবাদের এমন ‘শাস্তি’ পেয়েছিলেন,ঝুমা সাঁতরা, কল্পনা দাস’রা । যার জেরে জীবনটাই অন্ধকারে ডুবে যায় তাঁদের । যা মনে থাকবে চিরকাল। দেখুন ভিডিও
দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মনোস্কোপের হাত ধরে ফের বাইরে বেরোন তাঁরা। শুরু হয় স্বনির্ভর হওয়ার লড়াই।
জীবনের প্রতি নতুন করে ভরসা খুঁজে দেওয়ার জন্য পথ প্রদর্শক হিসাবে ঝুমা,কল্পনাদের মতন অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মনোস্কোপ । অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসা এক ঝাঁক তরুণ – তরুণীদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আলোর পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়েছে এই মনোস্কোপ সংস্থা ।
মনোস্কোপের কর্ণধার সোমদত্তা ব্যানার্জি বলেন, তাদেদের এই সংস্থা চার বছর আগে তৈরি হয়েছিল। এটা একটা মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন। আমরা বিভিন্ন সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে কাজ করি। এবার যে দিকটা তুলে ধরেছি সেটা নিয়ে সচরাচর কাজ হয় না। অ্যাসিড আক্রান্তদের মধ্যে ফাইট করার ক্যাপাসিটি আমাদের থেকে অনেক বেশি। এ রকমই কিছু মানুষকে এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আমাদের পাশে ছিল ইন্ডিয়ান সাইক্রিয়াটিস্ট সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ব্রাঞ্চ ও ব্রেভসোল ফাউন্ডেশন যেখান থেকে কিছু ভিকটিম এবং সারভাইভার্স পেয়েছিলাম। তাছাড়া আমার পাশে আছে মেন্টাল হেলথ সোসাইটি এবং আমার গোটা টিম। আশা করছি ভবিষ্যতে আমরা আরও ভালো কাজ করবো।’
সম্প্রতি মনোস্কোপের অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদীপ প্রজ্জ্বোলনের পর অ্যাসিড আক্রান্তদের মঞ্চে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর একে একে মনের কথা বলে। কিভাবে তারা এই পরিস্থিতির শিকার। সমাজ তাদের কতটা মেনে নিয়েছে। সরকার থেকে কতটা সাহায্য পেয়েছে। যদিও প্রত্যেকের কথাতেই উঠে আসে সরকার সেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি। বরং বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের সংস্থা মীর ফাউন্ডেশন তাদের একের পর এক অপারেশনে সাহায্য করেছে। এমন কি অনেকের ক্ষেত্রে দোষীরাও উপযুক্ত শাস্তি পায় নি। তারা সবাই এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই লড়াইয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে অনেক সংস্থা। তবে ওই দিন সবার কথাতেই সরকারের প্রতি আর্জি ছিল বাজারে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।
মনোস্কোপ বিভিন্ন সময় কখনও ট্রান্সজেন্ডার কখনও সেক্স ওয়ার্কার আবার কখনও নানা রকম সমস্যাজড়িত মানুষদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে চলেছে। অ্যাসিড হামলা সারা বিশ্বে ঘটে, জানা গেছে এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ভারতবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ এই ঘটনার স্থান হিসেবে ওপরের দিকে আছে। শুধুমাত্র মহিলারাই নয় পুরুষরাও এই ঘটনার শিকার। অ্যাসিড সারভাইভার্স ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনাল ( এএসটিআই)এর পরিসংখ্যান বলছে যে বিশ্বব্যাপী ৮০% এর শিকার নারী।