Abhishek in Seoul সিওলে কবিগুরুর স্মৃতি তুলে ধরে ভারত-কোরিয়া ঐক্যে জোর অভিষেকের , সন্ত্রাসবাদ দমনে দিলেন কড়া বার্তা

0
36
  • ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ভারতের অবস্থান বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে জাপান সফরের পরে কোরিয়ায় গিয়েছে অভিষেকদের সর্বদলীয় টিম।

১৯২৯ সালে জাপান সফরে গিয়ে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন কোরিয়া‍র একদল ছাত্র। গুরুদেবকে এই ছাত্ররা কোরিয়ায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথের কোরিয়া সফর সম্ভব হয়নি।
কোরিয়া যেতে না পারলেও কবিগুরু ওই বছর ‘দ্য ল্যাম্প অব দ্য ইস্ট’ কবিতাটি লিখেছিলেন। সেই সময়ে জাপানের ঔপনিবেশিক শাসনে থাকা কোরিয়ার মানুষ গুরুদেবের এই কবিতার কথা জানতে পেরে উদ্বেলিত হয়েছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতা এখনও অবশ্যপাঠ্য। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষমূর্তির সৌধে ‘দ্য ল্যাম্প অব দ্য ইস্ট’ কবিতাটি খোদাই করা রয়েছে। রবিবার সোলে সে দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, থিঙ্কট্যাঙ্কদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কোরিয়ার এই আত্মিক সম্পর্কের কথা উঠে এসেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়।

বিশ্বের দরবারে ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী পদক্ষেপ এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর গুরুত্ব তুলে ধরতে বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলে রয়েছে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। সেখানেই রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সিওলের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কোরিয়ার গভীর সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তুলে ধরলেন তিনি। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার অটল অঙ্গীকারের কথাও জোরের সঙ্গে বলেন।

সিওলের ওই সভায় অভিষেক তাঁর বক্তৃতায় রবিঠাকুরের ‘দ্য ল্যাম্প অব দ্য ইস্ট’ কবিতার উল্লেখ করেন। পরে নিজেই সেকথা জানান এক্স হ্যান্ডেলে। লেখেন, ‘কোরিয়ানদের সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা আমার বক্তব্যে তুলে ধরেছি । ‘দ্য ল্যাম্প অব দ্য ইস্ট’ এখনও কোরিয়ানদের হৃদয়ে এক বিশেষ জায়গা করে রয়েছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় যে তাঁর লেখা আজও কোরিয়ার স্কুলে পড়ানো হয় এবং তাদের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে সভ্যতাগত বন্ধনের এক জীবন্ত নিদর্শন।’

প্রসঙ্গত, ‘দ্য ল্যাম্প অব দ্য ইস্ট’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোরিয়ার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের কথা অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন। সেই সূত্রেই অভিষেক এদিন কোরিয়ানদের সঙ্গে বাঙালির আত্মিক সম্পর্কের কথা বলেন।

এদিন সিওলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন ভাইস মিনিস্টার, রাষ্ট্রদূত এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন অভিষেকরা। মূল বিষয় ছিল শান্তি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করা। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে অভিষেক জানান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া এই সমস্যা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এশিয়ার এই দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।

https://x.com/abhishekaitc/status/1926635168434905115?t=aOHQpkoHQDKgr2caprux4Q&s=19

সর্বদলীয় টিমের সদস্য হিসেবে জাপান সফরের সময়ে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অভিষেক। টোকিওর তামা সমাধিস্থলে রাসবিহারী বসুর স্মৃতিসৌধে অভিষেক যাওয়ার পরে সেখানে সঞ্জয় ঝা, সলমন খুরশিদের মতো সর্দলীয় টিমের অন্য সদস্যরাও যান।


রবিবার ছিল রাসবিহারী বসুর জন্মদিন। অভিষেক সোশ্যাল মিডিয়ায় রাসবিহারী বসুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন। রাসবিহারীর স্মৃতিসৌধের দ্রুত সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জাপানে কর্মরত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এস জর্জ এবং টোকিওয় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও অভিষেক এ দিন এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন।

বিদেশের মাটিতে ভারতের মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এই রেশ বজায় রেখেই সোলে কোরিয়ার সঙ্গে কবিগুরুর আত্মিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কোরিয়ার প্রাক্তন মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, থিঙ্কট্যাঙ্কদের সঙ্গে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মতবিনিময় করার পাশাপাশি কোরিয়ায় থাকা প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গেও এই সর্বদলীয় টিম সাক্ষাৎ করেছে।

কোন প্রেক্ষাপটে ‘অপারেশন সিঁদুর’ হয়েছে, তা প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে ব্যাখ্যা করেছেন অভিষেক–সহ সর্বদলীয় টিমের অন্য সদস্যরা। সলমন খুরশিদ বলেছেন, ‘জাপানকে টপকে আমরা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়েছি। এই অগ্রগতির পথে কেউ বাধা সৃষ্টি করবে, এটা আমরা মানব না। ভারতের ক্ষতি করতে এলে আমাদের অধিকার রয়েছে নিজেদের রক্ষা করার। পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ছাড়া আর কোথাও আক্রমণ করা হয়নি।’

সোলে এ দিন প্রথমে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অমিত কুমারের সঙ্গে সর্বদলীয় ডেলিগেশনের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। সেখানে কোরিয়ায় এই টিমের কর্মসূচি ব্রিফ করা হয়। এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক বলেছেন, ‘কোরিয়াতে কোন কোন অনুষ্ঠানে আমরা অংশগ্রহণ করব, তার রূপরেখা অমিত কুমার তুলে ধরেন।

এরপরে সোলে কোরিয়ার প্রাক্তন মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, থিঙ্কট্যাঙ্ক, বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আমাদের মতবিনিময় হয়। সন্ত্রাসের মোকাবিলায় বহুমুখী প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করা, আঞ্চলিক (উপমহাদেশের) স্থিতাবস্থা ও শান্তি প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।…সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’

অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সঞ্জয় ঝা মন্তব্য করেছেন। সংবাদসংস্থাকে তিনি বলেছেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ছ’শো কোম্পানি ভারতে বিনিয়োগ করেছে। কোরিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। আজ, সোমবার কোরিয়ার মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হবে। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদের উৎস, এটা সবাই বুঝতে পারছেন।’

এর আগে অভিষেক প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে জাপান সফরে গিয়েছিলেন। সেখানেও পাকিস্তানকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। পাশাপাশি টোকিওয় গিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও বিচারপতি রাধাবিনোদ পালের স্মৃতিসৌধে। ওই সফরেও বাঙালি আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মঞ্চে ভারতকে তুলে ধরতে দেখা যায় তাঁকে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ওই প্রতিনিধি দল যাবেন সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায়। এই সফরের মূল লক্ষ্য— ভারতের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক প্রচার।

Previous articleFIR ‘মা আমি চুরি করিনি’, পাঁশকুড়ার সেই ঘটনায় কিশোরকে কান ধরে ওঠবস করানো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দায়ের এফআইআর
Next articleWeather Update ভয়ংকর বজ্র-ঝড় বাংলাজুড়ে ! ঝড়বৃষ্টির আঘাতে বিপদের আশঙ্কা চরমে: দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here