দেশের সময়: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গাইঘাটায় পা রাখতেই তোলপাড় ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ি ৷নবজোয়ার কর্মসূচিতে উত্তর ২৪ পরগনায় পৌঁছেছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ৷ রবিবার তাঁর ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে আসার কথা ৷তার আগেই শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদককে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন অভিষেক ঠাকুরবাড়িতে আসছেন তা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি৷ একইসঙ্গে সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ঠাকুরবাড়িকে সামনে রেখে কোনওরকম রাজনীতির হাওয়া তুলতে দেওয়া হবে না ৷ অভিষেক ঠাকুরবাড়ি থেকে ঘুরে গেলে গোবরজল দিয়ে ঠাকুরবাড়ি শুদ্ধ করা হবে ৷ দেখুন ভিডিও
শান্তনুর এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোড়ন ছড়িয়েছে ৷ এদিকে অভিষেক আসার আগেই মতুয়াদের নামে পোস্টার পড়েছে ঠাকুরবাড়িতে ৷ সেখানে সম্প্রতি একটি জনসভা থেকে হরিচাঁদ গুরুচাঁদের নামে ভুল উচ্চারণ করার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলা হয়েছে ৷ রবিবার অভিষেকের কনভয়ের সামনে মতুয়াদের একটি অংশ বিক্ষোভও দেখাতে পারেন বলে খবর৷ শান্তনু ঠাকুরও বলেছেন, বিক্ষোভ হতেই পারে ৷ সেটা মতুয়াদের বিষয় ৷ অভিষেকের নবজোয়ার কর্মসূচি নিয়ে ব্যঙ্গ করে শান্তনু বলেন, গোটা গাইঘাটা জুড়ে যেভাবে সাজগোজ হয়েছে, দেখে অবাক লাগছে ৷ প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরবাড়িতে আসার সময়েও এত কিছু হয়নি৷
আর অভিষেক কে? ও তো রাজ্যের মন্ত্রী না, কেন্দ্রের মন্ত্রী না ৷ স্রেফ একজন সংসদ ৷ তাহলে ওর জন্য এসব কেন? এটা তো ওর লোকসভা কেন্দ্র নয়৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে ওঁর কী দাম আছে? সূর্যের আলোয় যেমন চাঁদ আলোকিত হয়, ও সেরকম ৷ শান্তনু বলেন, ঠাকুরবাড়ি সবার জন্য অবারিত ৷ আমরা কখনোই বলব না, ঠাকুরবাড়িতে এ আসতে পারবে না, ও আসতে পারবে না৷ যে কেউ আসতেই পারে৷ কিন্তু ভোটের মুখে অভিষেক কেন এখানে আসছেন তা আমরা খুব ভাল করে বুঝি৷ এখানে এসে একটা মতুয়াদের সমবেদনা পাওয়ার চেষ্টা ৷ কিন্তু তা হবে না ৷ ঠাকুরবাড়িকে সামনে রেখে আমরা কাউকে রাজনীতি করতে দেব না ৷এর আগে একজন ছিল ৷ তাঁকে বিদায় করা হয়েছে৷ আবার এ শুরু করেছে| একেও মতুয়ারা জবাব দেবেন ৷ শান্তনু বলেন, তৃণমূলে যত চোর, তোলাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত সবার ছায়া পড়েছে অভিষেকের উপর ৷ ফলে ও ঠাকুরবাড়ি ঘুরে গেলে গোবরজল ছিটিয়ে শুদ্ধ তো করতেই হবে ৷ কারণ মতুয়াদের কাছে ঠাকুরবাড়ি খুব পবিত্র ৷ শান্তনুর তোপ, অভিষেকের পিসি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়াদের আরাধ্যদের নামে বিকৃত উচ্চারণ করেছেন ৷ এতে মতুয়াদের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে ৷ এর জন্য ক্ষমা তো চাইতেই হবে ৷আর সেই দাবিতে পোস্টার তো পড়তেই পারে ৷ এটা মতুয়াদের বিষয় ৷ দেখুন ভিডিও
https://fb.watch/l4pA65r-EW/?mibextid=Nif5oz
এনিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন সংসদ মমতাবালা ঠাকুরের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে গিয়ে স্লিপ হয়েছে ৷ এটা যে কারো হতেই পারে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনোই হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরকে অসম্মান করেননি৷ তাহলে তিনি তাঁদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় দিতেন না৷
মতুয়া গড়ে অভিষেকের নবজোয়ার কর্মসূচি নিয়ে তুমুল বিতর্ক দানা বেঁধেছে। অনেকেরই অভিযোগ, মতুয়াদের মন পেতেই তিনি ঠাকুরনগরে এই কর্মসূচি নিয়েছেন। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, অভিষেকের নবজোয়ার কর্মসূচি চার হাজার কিমিরও বেশি পথ পেরিয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় রয়েছেন অভিষেক। এতেই ভয় পেয়ে গিয়েছে বিজেপি সহ বিরোধীরা। তাই এসব বলছেন তাঁরা। ওরা তো পঞ্চায়েতে সব জায়গায় প্রার্থীই দিতে পারবে না। সেকারণেই রামধনু জোট গড়ার চেষ্টা করছে আর আদালতে ছুটছে।
শনিবার বিকেল তিনটে নাগাদ গাইঘাটার হাঁসপুর থেকে জনসংযোগ যাত্রা শুরু করেন অভিষেক। সেখান থেকে জলেশ্বর হয়ে যশোর রোড ধরে আসেন গাইঘাটা মোড়ে। গাইঘাটা মোড় থেকে যশোর রোড ধরে চাঁদপাড়ায় রোড শো করেন তিনি। রাত্রিবাস করেন রামচন্দ্রপুরে।
আজ, রবিবার তাঁর ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে যাওয়ার কথা। তিনি বড়মা বীণাপাণি দেবীর ঘরেও যাবেন। ঠাকুরবাড়িতে তাঁর এই কর্মসূচি নিয়েই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থেই অভিষেকের এই কর্মসূচি বলে তোপ দেগেছে বিজেপি।
যদিও তা নস্যাৎ করে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেছেন, বীণাপাণি দেবী আমাদের কাছে একটা আবেগ। তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ছিল মা ও মেয়ের। মতুয়াদের জন্য আজ যা উন্নয়ন হয়েছে, তা তৃণমূলই করেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচির সঙ্গে ভোটব্যাঙ্কের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, মতুয়ারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছেন। অভিষেকের কর্মসূচি ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই বনগাঁ মহকুমা জুড়ে সাজসাজ রব। রাস্তার দু’ধারে অভিষেকের ছবি দেওয়া কাটআউট ও তোরণ বসানো হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উন্মাদনা তুঙ্গে।
তিনদিনের কর্মসূচিতে উত্তর ২৪ পরগনায় পা রেখেছেন অভিষেক। মছলন্দপুরের শিমুলপুর ও বারাসত কাছারি ময়দানেও জনসভা করবেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে তাঁর এই কর্মসূচি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গাইঘাটা বিধানসভায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া অধ্যুষিত তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে চারটি কেন্দ্রে হেরে গিয়েছে তৃণমূল। সেখানে ফের সবুজ ঝড়ের লক্ষ্যেই এখন থেকে দলকে চাঙ্গা করতে চাইছেন অভিষেক। আর একারণেই মতুয়াদের মন পেতে বিশেষ জোর দিয়েছেন তিনি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, শিমুলপুরের সভা শেষ করে যশোর রোড ধরে গুমা চৌমাথায় পৌঁছবেন অভিষেক। হাবড়া-২ ব্লক অফিস থেকে ২ কিমি পদযাত্রা করবেন তিনি। তারপর দত্তপুকুরের হাটখোলা হয়ে নবজোয়ার কর্মসূচি পৌঁছবে বারাসত কাছারি ময়দানে। সেখানেই রাত্রিবাস করবেন তিনি। ১২ জুন ফের সেখান থেকে নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু হবে। বারাসত থেকে বসিরহাটে যাবেন অভিষেক।
এদিকে, কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে বিজেপি নেতাদের আঁতাত নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর তোপ, এজেন্সিকে দেওয়া গোপন তথ্য হামেশাই বিজেপি নেতাদের কাছে চলে যাচ্ছে। আর তারপর বিজেপির ‘মাথা’দের কথা মতো একে ওকে তলব করছে ইডি, সিবিআই। বিষয়টি তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নজরে আনবেন বলেও জানিয়েছেন। অভিষেকের অভিযোগ, তিনি চিঠি লিখে কিংবা ই-মেল করে এজেন্সিকে যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তা পৌঁছে যাচ্ছে বিজেপি নেতাদের কাছে। পরে বিজেপি নেতারা সেটা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলছেন। এনিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আমি সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হচ্ছি। একইসঙ্গে বিজেপিকে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, ইডি, সিবিআই ছেড়ে জনতার দরবারে লড়াই করুন।
ইডি, সিবিআইকে যে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই অভিযোগ বিরোধীদের নতুন নয়। গোটা দেশের বিরোধীদের এক সুর, বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও কথা বললেই তাকে চুপ করিয়ে দিতে ইডি, সিবিআইকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এই এজেন্সিরাজের বিরুদ্ধে তৃণমূল ছাড়াও একাধিক বিরোধী দল সরব হয়ে রাস্তায় নেমেছে বিভিন্ন সময়ে। নবজোয়ার কর্মসূচি চলাকালীন এজেন্সি যেভাবে তাঁকে বারবার তলব করছে, তাতে রীতিমতো অসন্তুষ্ট তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড।
এর আগে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে কর্মসূচি ছেড়ে নিজাম প্যালেসে এসে এজেন্সির প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গিয়েছেন অভিষেক। ফের তাঁকে আগামী মঙ্গলবার তলব করেছে ইডি। যদিও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়ে দিয়েছেন, সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। ফলে এখন কর্মসূচি ছেড়ে এজেন্সির প্রশ্নের উত্তর দিতে যাওয়ার মতো মোটেই সময় নেই তাঁর হাতে। ভোট মিটলে তিনি যাবেন। তার আগে নয়।