লিখছেন – অর্পিতা দে
প্রতিদিনের কাজের ব্যস্ততা, বাড়ি কিংবা অফিস, সারাদিন কংক্রিটের জঙ্গলে থেকে শহুরে দৈনন্দিন জীবন যাত্রার ফলে আমাদের সুযোগই হয় না একটু খোলা আকাশ দেখার কিংবা প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার; আমরা সবাই একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ি নিজেদের এই রোজনামচায়৷ আর সেই ক্লান্তি কাটাতেই এখন জেন্ ওয়াই বেছে নিয়েছে উইকেন্ড ট্রিপ। আর তাদের কথা ভেবেই তৈরী হয়েছে দেশের সময়ের বাউন্ডুলে৷ বাউন্ডুলে বলে কাজকর্ম অনেক হয়েছে এবার ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ার পালা।
এক যে আছে মৌসুনি দ্বীপ
সুন্দরবন বদ্বীপ এর অন্তর্গত মৌসুনি একটা ছোট্ট দ্বীপ। যেখানে দিগন্ত বিস্তৃত নীল আকাশের ক্যানভাসে দেখা যায় সাদা কালো মেঘের বিচিত্র রূপ। মেঘ এখানে নিজেই চিত্রকর৷ সাদা বালির চরে দু একটা নৌকো নোঙ্গর করা৷ বটতলা নদী এখানে সাগরে মেশার আগে যেন সমুদ্রের ন্যায় বড় বড় অবিশ্রান্ত ঢেউ তুলে তার আকার ধারণ করেছে।
সেই চর ধরে হাঁটলে বড়সোল তার ঢেউ তুলে স্বশব্দে আছড়ে পড়বে তার বন্ধুকে স্বাগত জানাতে৷ ক্রমশ: ক্ষয়িষ্ণু এই দ্বীপের বর্তমান মানুষের সংখ্যা এখন ২০ – ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে৷ এরমধ্যে অনেকের বাড়ি, গ্রাম চলে গেছে বটতলার গর্ভে। তবু টিকে আছে যতটুকু তা এই দ্বীপের রূপ। জনমানবহীন চরের দু-এক মাইল দূরত্বে মাঝে মাঝে আধখাওয়া শুকনো ডালপাতাহীন এক এক টা খেজুর, নারকেল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে তাদের অস্তিত্বের৷ পাড় বরাবর হাঁটলে দেখা যায় এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভগ্নপ্রায় মাটির বাড়ি খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা, মাছ ধরার জাল আর পলিথিন গোটা চালে বিছানো, বাড়িগুলো একটু উঁচু বেদি করে বানানো৷ জোয়ারের সময় নদী কখন যে ঘরের ভিতর ঢুকে আসবে, সব ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে সেই ভয়ে দিন গুজরান হয় সাবিরাবিবি, নাসির কিংবা আসিফদের৷
এমন একটা দ্বীপে শূন্য ধুধু বালি চড়ে নোঙ্গর করা একটা ফাঁকা নৌকোর ওপর বসে বটতলা নদীর ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে সময় কেটে যায় অনেকটা। সঙ্গী কখনো স্থানীয় দুএকটা সারমেয়৷ এই চর বরাবর হাঁটলেই দেখা যায় নদী কোথায় ভাঙ্গন ধরিয়েছে বাঁধে৷
বিকেলের সূর্যাস্তের আলো যেন সোনা গলিয়ে ছড়িয়ে দেয় নদী তটে৷ রাতের অন্ধকারে অসংখ্য নক্ষত্র খচিত আকাশে স্বপ্নের জাল বোনে চাঁদের বুড়ি। ক্যাম্পের ভিতর ক্যাম্প ফায়ারের গনগনে আগুনে নেমে আসে মোহময়ী সন্ধ্যা।
স্থানীয় মানুষ কৃষি কাজ প্রায় বন্ধ করেছে নোনা জল ঢুকে চাষের জমি খেয়ে নিয়েছে বলে৷ বেশিরভাগ মানুষই এখানে মৎস্যজীবি। অনেকে জমি বেচে চলে গেছে অন্য শহরে। আবার গ্রামের কিছু মানুষ যারা যায়নি তারাই যুক্ত হয়েছে স্থানীয় ট্যুরিজমে৷ গত কয়েকবছর ধরে ভগ্নপ্রায় এই দ্বীপ কে ঘিরে তৈরী হয়েছে ইকোট্যুরিজম; যার সাথে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় মানুষ; নির্ভেজাল প্রকৃতির বুকে তাই দুএকদিন অনায়াসেই কাটিয়ে দেয়া যায় নিশ্চিন্তে এই দ্বীপে।
থাকার জন্য বেশকিছু টেন্ট, বিলাসবহুল টেন্ট, বাঁশ ও মাটির ঘর দিয়ে তৈরী হয়েছে বেশ কিছু রিসর্ট৷
কলকাতা থেকে এই দ্বীপের দূরত্ব মাত্র ১২০ কিলোমিটার। কিন্তু গাড়ি নিয়ে এখানে সরাসরি আশা যায় না। তার চেয়ে ট্রেনে নামখানা এসে, সেখান থেকে টোটো কিংবা গাড়িতে আস্তে হবে হুজ্জুতি ঘাট। স্থানীয় মানুষের সাথে যন্ত্র চালিত নৌকোয় চেনাই নদী পেরিয়ে ট্রেকার কিংবা আবার টোটো করে যেতে হবে মৌসুনি দ্বীপ।
টোটো সোজাসুজি নদীর তীরে ক্যাম্পে পৌঁছে দেবে৷ ক্যাম্পগুলোতে থাকা খাওয়া সবরকম ব্যবস্থাই রয়েছে, তবে আগে থেকে বুক করে যাওয়াই ভালো৷ একেকটি ঋতুতে মৌসুনি একেকরকম রূপ ধারণ করে৷ তাই একটু এডভেঞ্চারপ্রিয় হলে যে কোনো সময়েই চলে আশা যায় মৌসুনি দ্বীপ। Best Resort-.
Sand castles Beach Camp -9330246505
ছবি – অর্পিতা দে।