দিদিকে ও সব রাজনীতিকদের যা বলতে চাই

0
747

সম্পাদকীয়ঃ—রাজ্যজুড়ে এখন তুমুল আলোচনা,”দিদিকে বলো” নিয়ে।সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে একটি ওয়েব সাইট খোলা হয়েছে,সেই ওয়েব সাইটটিরই নাম দিদিকে বলোএকটি ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে তাতে যে কেউ ফোন করে তার সমস্যার কথা দিদিকে ,মানে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে পারবেন।বলা হচ্ছে জনসংযোগ বাড়াতে এটা রাজ্যের শাসক দলের নতুন কৌশল।

কেউ কেউ বলছেন রাজ্যের শাসক দল লোকসভা ভোটের ফল ভাল না হওয়ায় একজন পেশাদার নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট নিয়োগ করেছেন।তাঁর নাম প্রশান্ত কিশোর ।তাঁরই পরামর্শে নাকি দিদির এই নতুন জনসংযোগ কৌশল।নির্বাচনে জয়লাভের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কৌশল করে ও করবে তা আমাদের সবার জানা।আমরা এটাও জানি ভোট এখন কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত এক সুচারু পেশাদার কর্মীদের সামনে নিয়ে আসে।সেই কর্মীরা ঠিক করে দেন কোন কথা বলতে হবে,আর কোন কথা বলা যাবে না।সাজানো কথা,গোছানো পোষাক,রঙবাহারি কম্পিউটার প্রজেকসন এসবই এখন ভোটের অঙ্গ।আমরা সাধারণ মানুষ দুর থেকে এ সব দেখবো,আর ঘোর লাগবে আমাদের চোখে,বিমুদ্ধতার ঘোর।

সেই ঘোর হয়তো ভুলিয়ে দেবে আমার ঘরের ছেলেটার দিনের পর দিন বেকার থাকার যন্ত্রনা,আমার মেয়েটার পয়সার অভাবে কলেজে না যেতে পারার হাহাকার।দিন আনা দিন খাওয়া যে মানুষগুলো এ রাজ্যের নানা প্রান্তে কোনক্রমে বেঁচে থাকার তুমুল আকাঙ্খাকে জাপটে ধরে দিন অতিক্রম করে যাচ্ছে তারা দেখবে শুধু কীভাবে ভোটে জেতা যায় তা বলে দিয়েই প্রশান্ত কিশোরের মত কেউ কেউ রাজ্য থেকে কয়েকশো কোটি টাকা নিয়ে চলে যাবে।জেতাবে কর্পোরেট ভোট নিয়ন্ত্রক প্রশান্ত কিশোর নয়,রাজনৈতিক নেতাদের জেতাবো আমরা,হাড় হাভাদে মানুষজন।

ঠায় রোদে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে,কখোন বা বিপক্ষ রাজনৈতিক দাদা দিদিদের মার খেয়েও।রক্ত ঝড়িয়ে গণতন্ত্র বাঁচাই আমরা,নামহীন,গোত্রহীন সাধারণ মানুষ.আর গণতন্ত্রের মধু খেয়ে যাবেন প্রশান্ত কিশোরদের মত নির্বাচনী কৌশল নির্মাতারা।তাও আবার একটা দুটো টাকা নয়,কোটি কোটি টাকা।আচ্ছা ভেবে দেখেছেন কী,এ রাজ্যে বন্যায় প্রতিবছর কত মানুষ তলিয়ে যায়,কত মানুষ ঘরহারা হয়,ডেঙ্গুতে কত কতজন মারা যায়?বলুন না এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে,মানুষের মৃত্যু আটকাতে কেন জরুরি ভিত্তিতে কোন কৌশল নির্ধারিত হয় না?কেন এগিযে এসেন না কোন কর্পোরেট স্ট্র্যাটেজিস্ট,প্রশান্ত কিশোরের মত?এই যে আমরা শুনি গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষই সব,এই যে আমাদের সব রঙধারি নেতাদের মানুষের প্রতি এত দরদ?ভোটে জিততে কত কৌশল,কত নীতি নির্ধারন অথচ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবন সংগ্রামে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন কেউ খবর রাখে না,কেউ তাদের পাশে গিয়ে দাঁডা়য় না।

ভোটের সময় কত প্রতিশ্রুতি ভোট শেষ হলেই সব ভুলে যাওয়া।তাই শুধু দিদি নয় সব রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীকেই আমাদের বলার একটু মানুষের হাত ধরুন,মানুষের পাশে থাকুন,মানুষ বড় কাঁদছে।মানুষকে এটা দেবো,ওটা দেবো বলে প্রলুব্ধ না করে একবার সাহস করে বলুন তো কিছু দিতে পারবো না তোমাদের,কিন্তু তোমাদের প্রতিদিনের যন্ত্রণা আর হাহাকার ভাগ করে নেবো।তোমাদের সঙ্গেই থাকবো।

হাঁ দিদিকে বলছি আর সেই সঙ্গে এরাজ্যের সব নেতা নেত্রীদের বলছি আমরা সেই নেতা চাই যার কিছু নেই,যে আমাদেরই মত রিক্ত-নিঃস্ব কিছু দিতে পারবে না আমাদের,কিন্তু আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের কষ্ট যন্ত্রনা ভাগ করে নেবে।আসুন কোটি কোটি টাকা দিয়ে গণতন্ত্র কেনার ছক ভেস্তে দিয়ে আমরা আমাদের নেতা তৈরি করি,যে থাকবে মাটির কাছাকাছি,মাটির কান্নাকে যে কর্পোরেটের আধুনিকতায় ঢেকে রাখবে না।আমাদের সেরকম নেতাই তৈরি করতে হবে,তারাই হবে আমাদের গণতন্ত্রের যথার্থ রক্ষাকবজ

Previous articleবাবা-মা’কে সুইসাইড নোট লিখে নদীতে ঝাঁপ দিল বনগাঁর এক কলেজছাত্র
Next articleমাথায় গামলা,বসে আছে দেড় বছরের শিশু, গভীর জল সাঁতরে পেরোলেন পুলিশ অফিসার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here