কলেজের গন্ডি পেরোনো সদ্য এক তরুণী।মনে রয়েছে এক অদম্য ইচ্ছা নিজের শিল্পসত্তাকে প্রকাশ করার, কিন্তু তথাকথিত ব্যবসায়িক শিক্ষা পদ্ধতিতে না গিয়ে সে বেছে নিলো হাতে কলমে শিখে কাজ শেখার পদ্ধতিকেই৷ শুরু হলো ইনিভার্সিটির পড়াশোনার মাঝে হাতে কলমে কাজ শেখার পদ্ধতি।
নিজের শিল্পসত্তাকে সঙ্গে করে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে, তৈরী করে ফেললেন বেশকিছু তথ্যচিত্র৷ ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে এগিয়ে যাওয়া এই মানুষটি হলেন চিত্রপরিচালক ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী।ছবি তৈরির ক্ষেত্রে তাকে সবথেকে বেশি অনুপ্রেরণা যোগায় চিত্রবাণী। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে হাতে কলমে কাজ শেখার পরে চিত্রবাণীতেই ছবি তৈরির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হয় তার প্রথম অনুশীলন৷ এর পর আর থেমে থাকেন নি ইন্দ্রাণী।
স্বতন্ত্রভাবে স্বল্প দৈর্ঘের ছোট ছবি, বেশকিছু তথ্যচিত্র পরিচালনারনার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেছেন৷ এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সুন্দরবনের ডাইনি সন্দেহে একটি মেয়ের গল্প ‘দ্য উইচ’, ইন্দ্রানীর নিজের পরিবারেই অসুস্থ শয্যাশায়ী দিদিমাকে নিয়ে তৈরী ‘ডেসটিনি’ যা তাকে প্রথম জার্মানি নিয়ে যায়; ভারতের পুনা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, মুম্বাই ফিল্ম ফেস্টিভাল, কেরালা ফিল্ম ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ইত্যাদিতে প্রদর্শিত হয় তার তৈরী তথ্যচিত্রগুলি৷
এরইমধ্যে তিনি তৈরী করে ফেলেছেন সরকারি অনূমোদন প্রাপ্ত বেশকিছু স্বল্প দৈর্ঘের ছবি ও তথ্যচিত্রও৷ কিন্তু এই সমস্ত কাজের মধ্যে ইন্দ্রানীর বিশেষ উল্লেখযোগ্য কাজটি হলো ‘লাদাখ চলে রিকশাওয়ালা’।
‘লাদাখ চলে রিকশাওয়ালা’ এক আপনভোলা রিকশাচালকের গল্প যে তার রিকশা নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্ন দেখে আর পৌঁছেও যায় সেখানে৷ এমন এক আপনভোলা রিকশা চালক সত্যেনের সাথে ইন্দ্রানীর পরিচয় হয় তারই পাড়ায়৷ রিকশাযাত্রী ইন্দ্রাণীকে একদিন সে শোনায় তার রিকশা নিয়ে পরিবারসহ কাশ্মীর যাওয়ার অভিজ্ঞতা।
সেইসাথে জানায় এরপর সে যেতে চলেছে লাদাখ। এক সামান্য রিকশা চালকের স্বপ্নের চ্যালেঞ্জ এর ইন্দ্রানীরকেও এক চ্যালেঞ্জের সামনে দাড় করিয়ে দেয়; তিনি ঠিক করেন সত্যেনের রিকশা নিয়ে লাদাখ যাওয়ার সমস্ত অভিজ্ঞতা তিনি রেকর্ড করবেন৷
তাই সেই মুহূর্তেই নিজের সমস্ত টিম নিয়ে এই যাত্রার সঙ্গী হওয়া ছিল কার্যত দুষ্কর, কিন্তু ইন্দ্রানীর কাছেও চ্যালেঞ্জ এই ছবি তিনি রেকর্ড করবেনই৷ নিজের হ্যান্ডিক্যাম সত্যেনকে দিয়ে শুরু হলো তার প্রশিক্ষণ।
এরপর নির্ধারিত দিনে নিজের হ্যান্ডিক্যামটি সত্যেনকে দিয়ে তাকে শুভবিদায় জানালেন সবাই আর কলকাতায় বসে ইন্দ্রাণী ও তার টিম যোগাযোগ রাখলেন তার সাথে৷ বিহার ঝাড়খন্ড যখন সত্যেন পৌছালো তখন সে ইন্দ্রানীদের জানালো তার ক্যামেরাটি খারাপ হয়ে গেছে৷ তখন কলকাতা থেকে একজন গিয়ে সেই ক্যামেরা সত্যেন এর কাছ থেকে এনে সরিয়ে আবার সত্যেনকে সেটি পৌঁছে দেয় সে যখন হরিদ্বারে৷
এরপর তারা ক্রমাগত যোগাযোগ রেখে চলে সত্যেন এর সঙ্গে৷ যোগাযোগ আবার বিচ্ছিন্ন হয় সে যখন কার্গিল পৌঁছায়৷ এদিকে ইন্দ্রাণীরাও ভাবেন সত্যেন না হয় তার যাত্রার অভিজ্ঞতা ক্যামেরা বন্দি করতে করতে চলেছে কিন্তু সেই বিশালাকায় পর্বতশ্রেণীর রুক্ষ উপত্যকার মাঝে ক্ষুদ্র সত্যেন তার রিকশা নিয়ে চলেছে স্বপ্ন পূরণে লাদাখে, সেই দৃশ্য কি কিভাবে ক্যামেরাবন্দি হয় সম্ভব!
ইন্দ্রানীও তার টিম নিয়ে পৌঁছালেন লাদাখ। সত্যেন্যের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সেখানে স্থানীয় মানুষজনকে জিজ্ঞাসা করে তারা এগোতে থাকলেন৷ লাদাখের পাহাড়ি শহরে দেখা হলো সত্যেনের সঙ্গে ইন্দ্রানীর৷
যারা দুজনেই নিজেদের অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে ভর করে সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে সফল হয়েছেন নিজেদের স্বপ্ন পূরণে৷
শুরু হলো ইন্দ্রানীর চোখে এক দুর্গম প্রকৃতির মাঝে ক্ষুদ্র রিকশাচালকের স্বপ্নকে দৃশ্যবন্দী করা৷
কোলকাতায় ফিরে এবার ইন্দ্রানীর শুরু হলো পোস্টপ্রোডাকশনের কাজ৷ সত্যেনের সেইসব মুহূর্তকে একসাথে করে তৈরী হলো এক অনবদ্য তথ্যচিত্র ‘লাদাখ চলে রিকশা ওয়ালা‘৷ এই তথ্যচিত্রটি যে শুধুমাত্র দেশবিদেশের বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়েছে কিংবা ইন্দ্রাণীকে এনে দিয়েছে জাতীয় পুরস্কার তাই নয়, ইন্দ্রাণীকে পৌঁছে দিয়েছে এমন সব মানুষের কাছে যারা প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চলেছেন তাদের জীবনকে যা দেখে তারা অনুপ্রেরণা পেয়েছেন দুরারোগ্য ব্যাধিকেও জয় করার, জীবনকেও জয় করার।
আর এখানেই একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে বেশি সাফল্য পেয়েছেনা ইন্দ্রাণী৷ লাইভ দেখুন-