পরিমল দে, বসিরহাট: মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ। উত্তর২৪পরগনার বসিরহাটের মাটিয়া থানার খোলাপোতার জনবহুল চৌরাস্তার মোড়ে৷একটি মোটরবাইক এসে থামে দোকানের সামনে। তাতে সওয়ার বছর আড়াইয়ের ছেলে কোলে মা। তার সঙ্গী আরও দুজন। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবকের সঙ্গে বচসা শুরু হয় তাদের। যাতায়াতের ফাঁকে দাঁড়িয়েও পড়েন দুয়েকজন। হঠাৎই ধারালো একটি ছুরি নিয়ে ওই যুবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তরুণী। এলোপাথাড়ি কোপে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ওই যুবক। এই দৃশ্য দেখে তখন হতচকিত মানুষ।
এরপরেই তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই তরুণী, এবং মোটর সাইকেলে থাকা আরও দুই যুবককে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিসের হাতে তুলে দেয় । ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশের বড়কর্তারাও। তখনও সাধারণ মানুষের মতোই পুলিশও হাতড়াচ্ছে খুন হওয়া যুবক ও অভিযুক্তদের পরিচয়। জনরোষ থেকে বাঁচিয়ে কোনওরকমে অভিযুক্তদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
কী কারণে আড়াই বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে এমন নৃশংস হত্যায় সামিল হতে পারেন মা, জানতে অভিযুক্তদের জেরা শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, বসিরহাটের ঝুড়ুলি গ্রামে বাড়ি অভিযুক্ত তরুণীর। তার স্বামী কলকাতার হোটেলে কাজ করেন। পাঁচ বছরের ও আড়াই বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে ঝুড়ুলি গ্রামে থাকতেন ওই বধূ। খুন হয়ে যাওয়া যুবক আসিফ গাজি (৩৪) বাংলাদেশের নাগরিক। ঝুরুলি গ্রাম লাগোয়া মেছো ভেড়ি এলাকাতেই সে থাকত বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগেই স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিয়ে আসিফ ওই বধূকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
মারুফার শাশুড়ি দাবি করেন, “সেই ঘটনার পর থেকেই প্রায় পাগল হয়ে গেছিল আমার বৌমা। ধর্ষণের পরেই বারবার আসিফ আমার বৌমাকে হুমকি দিত, কাউকে জানালেই খুন করা হবে তার স্বামী ও দুই ছেলেকে। আজ আমার ছেলে বাড়ি আসার পর আসিফকে ডেকে পাঠায়। আসিফ পাল্টা তাদের খোলাপোতায় যেতে বলে। ওখানে এই ঘটনা ঘটে যায়৷
তিনি আরও জানান, আমার বৌমা শুধু বলত আমার সবাইকে মারলে আমার বেঁচে থেকে কী লাভ? ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেব। মুখে বললেও এমন ঘটনা যে সত্যিই ঘটিয়ে ফেলবে ভাবতে পারিনি।
বসিরহাটের এসডিপিও অশেষ মৌর্য ঘটনাস্থলে জানান, খুনের কথা স্বীকার করেছে ওই মহিলা। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷