“শান্তি সভ্যতার গুণ। যুদ্ধ তার অপরাধ।”…. ভিক্টর হুগো

0
11
অশোক মজুমদার।

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানা হলো….প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধ হলো…..পরিনামে সিন্ধুর জল আটকে দেওয়া হলো।

স্বাভাবিক। সবকিছুরই একটা সীমা থাকে। পাকিস্তান স্বাধীনতার পর থেকে ইচ্ছেখুশি আমাদের উপর হামলা চালিয়ে আসছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কে যদি নিত্যদিনের অত্যাচার সহ্য করতে হয় তাহলে ধৈর্য একদিন ভাঙবেই। ফলে জল বন্ধ করার সিদ্ধান্তটা সার্বিক দৃষ্টিতে ঠিক হয়েছে…..বেশ হয়েছে।

কিন্তু দেশবিরোধীর মত শোনালেও আমার প্রশ্ন এই ঠিকটা ঠিক কাদের হলো ?

পাকিস্তান রাষ্ট্রের হর্তা কর্তা বিধাতা যারা স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের উপর বারেবার আঘাত হানে তারা কি সিন্ধুর জল না বইবার ফলে কোনোরকম মুশকিলে পরলো ?

নাকি সিন্ধুর জলের উপর নির্ভর করে যারা চাষবাস, ক্ষেতি খামার করে দিনান্তে একটু ডালভাত খেয়ে বেঁচে থাকে পাকিস্তানের সাধারণ সেই গরীব মানুষগুলো বিপদে পরলো ?

এই হাতে না মেরে ভাতে মারার কৌশলের সঙ্গে খুব মিল পাচ্ছি ইজরায়েল দেশটার নিয়ন্ত্রকদের। যারা বলছে গাজা ভূখণ্ডের সব শিশুকে মেরে না ফেলা অবধি আমরা থামবো না। আহা কি অসাধারণ মনের সাধ!! এরাও মানুষ কিন্তু!!

আসলে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্যেই রাষ্ট্রপ্রধানরা যুদ্ধ পরিচালনা করে। সেটা পাকিস্তানের গরীব মানুষ হোক কিংবা গাজার শিশু বিষয়টা তো সেই একই দাঁড়ালো তাইনা ? কিন্তু এর থামা কোথায় ? ইজরায়েল থামবে কবে ? ভারতবর্ষ থামবে কোথায় ?

আমি একজন খুবই সামান্য মানুষ। সাংবাদিকতাতেও তো দেশের ভিতরেই আটকে রইলাম। যদি ইলন মাস্ক এর সঙ্গে একটু যোগাযোগ থাকতো বলতাম, ‘কয়েক হাজার ডলার দেবেন ? আমি এক লরি বা যা দেবেন আমি পার্লে জি বিস্কুটটা নিয়ে গাজায় যেতে চাই। জানেন তো ওখানে দশ টাকার বিস্কুটটা 2400 টাকায় বিক্রি হচ্ছে!!”

এই গ্লুকোজ দেওয়া বিস্কুটটা আমার বাবাও আনতো। আমিও এটা খেতে খুব ভালোবাসতাম। এখন পাওয়া যায় কি জানিনা। কিন্তু বাড়িতে আমি নানারকমের বিস্কুট কিনে আনি। আমার ছেলেরা খুব বিস্কুট খায়। এইযে বাচ্চাটিকে 2400 টাকায় বিস্কুট কিনে দেওয়া মা বাবাটি আমি লিখে দিচ্ছি তাদের দুদিন না খেয়েই থাকতে হবে। ক্ষুদাতুর শিশু কি করে জানবে সে কেন কি করে কার শত্রু হয়ে গেল!!

ইলন মাস্ক সাহেব আপনাদের পররাষ্ট্র নীতি কি করে কি করেনা আমি জানিনা বা বুঝিনা। কিন্ত দেবেন মাত্র তো কয়েক হাজার ডলার ?? আমি মাত্র দুদিন গাজায় গিয়ে যে কজনকে পারি পার্লে জি বিস্কুট দিয়ে চলে আসবো। আমি জানি তাতে যুদ্ধর কিছু ক্ষতি হবে না।

কিন্তু ওইটুকু পেয়ে শিশুগুলো যে খুশি হবে তাতেই আমাকে এক অপার্থিব জগতে পৌঁছে দেবে। আমি ঈশ্বর মানলে বলতাম ঐশ্বরিক অনুভূতি আমাকে ঘিরে ধরবে।

কিন্তু এসব স্বপ্নীল ব্যাপার তো হবার নয়। তাই এই যুদ্ধ যুদ্ধ যুদ্ধ!! কিন্তু কার সাথে কার যুদ্ধ ? গরিবের সাথে দেশের। দেশের সাথে গরিবের। গরিবের সাথে বড়লোকের। এর বাইরে কোনোদিন যুদ্ধ হয়েছে ? কথাতেই তো আছে “রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।”

ছোটো থেকেই শুনি চীন রাশিয়া আমেরিকা সব একে অপরের শত্রু। কই এদের কাওকে লড়তে একবারও দেখিনি। কিন্তু সবকটাই গরিব তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে সর্বদা লড়াইয়ের ইন্ধন জোগাতে ব্যস্ত। ফলে এই গরীব নিধন যুদ্ধকে আমি কি ভাবে সমর্থন করতে পারি ?

হ্যাঁ আমি যুদ্ধের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ কোনোদিনই সমাজে অন্যায়ের ইতি টানতে পারেনি। আবার এটাও ঠিক যে কেউ যদি আমার বাড়িতে বোমা মারে তাহলে তার ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। কিন্তু সেটা নিতে গিয়ে আমি যদি দেখি অসংখ্য লোক এর ভিকটিম হচ্ছে তাহলে আমি কি করবো ?

শিক্ষা আমি দিতেই পারি। কিন্তু কতক্ষন দিতে পারি। যতক্ষণ না কেউ স্বীকার করেছে ‘আমি মোবাইল চুরি করেছি কিংবা খুন করেছি’ ততক্ষণ অবধি আমরা মেরে যেতেই পারি…. মেরে যেতেই পারি….ঝুলিয়ে দিতেই পারি…..বড়ো অপরাধী হলে ইলেকট্রিক শক দিতে পারি!!

আমার মনে হয় শিক্ষা দেওয়াটা একটা জায়গায় শেষ হতে হয়। ছোটবেলায় ইস্কুলে যখন ছড়ির ঘা দিত মাষ্টারমশাই….কই কখনোই তো দুয়ের বেশি কখনও ওঠেনি। আচ্ছা ধরুন ওই হাতে যদি উনি ত্রিশটা বেত মারতেন!! কি হত ?

শিক্ষা তো সেটাই যাতে ভবিষ্যতে একই অন্যায় করার আগে ভাবতে হয়। এইযে কয়েকদিন আগে বিধানসভায় আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পাক অধিকৃত কাশ্মীর উদ্ধার হল না কেন ?” …..প্রশ্ন তুলেছেন। খুব সঙ্গত প্রশ্ন এটা। পেহেলগাঁওতে হামলার পর থেকে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও একই কথা বলে যাচ্ছেন। গোটা দেশও এটাই চাইছিলো পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করে পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক যে, আমাদের সভ্যতাকে দুর্বলতা ভাবাটা ওদের বোকামি।

কিন্তু ওই কয়েকটি এয়ার স্ট্রাইক করেই এবারের মত শিক্ষা দেওয়ায় ইতি টানা হয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের নামে শিক্ষা দেবার যে ছেলেখেলাটি হলো তাতে পাকিস্থান কি শিক্ষা পেলো আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। আপনারা পেরেছেন ?

বরং জল বন্ধ হয়ে পাকিস্তানের গ্রাম খামারে কাজ করে দিন কাটায় যারা, যাদের সঙ্গে যুদ্ধের দুর দুর অবধি সম্পর্ক নেই প্রথমে তারাই খেতি শুকিয়ে টাকা পয়সার অভাবে মারা যাবে। আর মসনদে যারা বসে আছে তাদের কিছু হবে না। তারা চিরটাকালই এভাবেই দিব্য থাকেন। এইটাকে শিক্ষা বলার মত অমানুষ আমি হতে পারবো না।

জল বন্ধে পাকিস্তানের গরীব মানুষ আর মৃত্যুর সমন নিয়ে বাঁচা গাজার সব শিশুদের অপরাধটা কি ? আপনারাই বলুন না এর সমাধান কি ? আমি সত্যিই কনফিউজড এই দয়ামায়াহীন যুদ্ধের মিথ্যা খেলায়। এইভাবে মানবতাবিরোধী হওয়াটা কি খুব প্রয়োজন এটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। ঠিক এগুলোই ভাবছি আমি। কারণ কিছু করার নেই আমার। শুধু অসহায় ভাবনাগুলোকে এরকম করে লিখতে পারি।

ইজরায়েল তার নির্দিষ্ঠ পন্থা থেকে গাজায় যে জিনিস করছে, বিশ্বের কোণে কোণেও তো এরকমই অন্যায়ের কত কত আয়োজন। কে করবে এর সমাধান ? আদৌ কি সমাধান সম্ভব?

সারা পৃথিবীর বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে অনু পরমাণুর সঙ্গে আমাদের তো মানবতাবোধের যোগাযোগ যা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই আমি কি ভাবছি সেটা এই সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে বলা ছাড়া সত্যিই আমার কোনো উপায় নেই।

আমার ক্ষুদ্র ভাবনায় একটা ফেল করা ছেলে এটুকুই করতে পারে। আমি আজ যে কথা লিখলাম বললাম বিশ্বশান্তির জন্য আমাদের সবাইকেই তাই ভাবতে হবে। কারণ ভারতবর্ষ গান্ধীর দেশ। রামকৃষ্ণের দেশ। আমাদের রাষ্ট্রনেতারা বুদ্ধি রাখেন। দেশ দশের চিন্তা করেন। কারণ মানবতা শুধুমাত্র একটা দেশ না। গোটা বিশ্ব ব্রহ্মান্ড জুড়েই ছড়িয়ে পরুক বিশ্বমানবতাবোধ। পৃথিবীর দুর্বল লোক, দুর্বল মানুষ ভাষা খুঁজে পাক একটাই আকাশের নিচে মিলেমিশে বাঁচার।।

কিন্তু এসব কিছুই হবার নয়। তাই সেই কলেজ লাইফের একদম শেষ পাতায় চরম হতাশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও নিষ্ফল সময়ের ব্যাখ্যা ওয়েটিং ফর গডোর একটি সংলাপ খুব মনে পরে, “আমাদের কিচ্ছু করার নেই!!”…..এই বাস্তবতাই কঠিন সত্য হয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হিমালয় সমান উচ্চতা নিয়ে।

Previous articleVijay Rupani Death আমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার তিন দিন পর বিজয় রূপাণীর দেহ শনাক্ত! গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ডিএনএ পরীক্ষায় মিলল চূড়ান্ত প্রমাণ
Next articleHyderabad-bound flight returns to Frankfurt মাঝ আকাশে হুমকি ফোন! টেক অফের ২ ঘণ্টা পর বিমানবন্দরে ফিরল হায়দরাবাদগামী বিমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here