
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থেকেই উত্তপ্ত ছিল নিয়ন্ত্রণরেখা(LoC)। রাত হলেই শুরু হয়ে যেত গোলা-গুলি বর্ষণ। উত্তেজনা বাড়তেই দিনভরও বিরাম থাকত না পাক হামলায়। অবশেষে গত কয়েকদিনের মধ্যে রবিবার প্রথম শান্তির রাত কাটাল সীমান্তে। পাক হামলায় কখন কী হয় ভেবে ভয়ে থাকা সীমান্ত পারের বাসিন্দাদের খানিকটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। সোমবারের সকালে সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, রবিবার রাতে নতুন করে আর কোনও ঘটনা ঘটেনি নিয়ন্ত্রণরেখা বা সীমান্তবর্তী এলাকায়। ‘গত কয়েক দিনে প্রথম শান্ত রাত’ বলে রবিবারের রাতকে উল্লেখ করছে সেনা।
শনিবার সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেন দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্স’ (DGMO)। দুই দেশ রাজি হওয়ার পরও তার কয়েক ঘণ্টা কাটতে কাটতেই সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান। হামলার পাল্টা প্রত্যাঘাত চালায় ভারতও। আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় পাক গোলার আঘাতে শহিদ হয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর চার জওয়ান। এর পরই কড়া হুঁশিয়ারি দেয় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী।

শনিবার রাত এবং রবিবার ভোরবেলা জুড়ে পাক ড্রোন বারবার অনুপ্রবেশ করে নিয়ন্ত্রণ রেখায়। ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই-এর কথায়, পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ ‘হতাশাজনক কিন্তু প্রত্যাশিত’। একইসঙ্গে এর পর কড়া ভাষায় সেনার তরফে জানানো হয়, রবিবার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ভারত। এই রাতে কী হয়, তা দেখে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সেনাকে আঘাতের প্রত্যাঘাতে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুমতি দেন। তাঁর কথায়, ‘ওপার থেকে গুলি আসলে, এ পার থেকে গোলা যাবে।’ এর পরই রাতে পাক সেনার তরফে আর কোনও সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ রেখায় লক্ষ্য করা যায়নি। তবে বাড়মেঢ়-এর আকাশে ড্রোন দেখা গিয়েছে বলে রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন সেখানকার ডিজি বলে সূত্রের খবর।
শনিবারের পর আজ সোমবার, দুপুর ১২টা নাগাদ দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন স্তরে (DGMO ) বৈঠকে বসবেন। ভারতের পক্ষে বৈঠকে থাকবেন DGMO রাজীব ঘাই। বৈঠকে পাকিস্তানের পক্ষে থাকবেন পাক DGMO কাসিফ আবদুল্লাহ। মার্কিন বিদেশসচিবের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্তরে দু’দেশের কথা বলার প্রস্তাব আসলেও ভারত সাফ জানায় কথা হবে DGMO পর্যায়ে। তাতে সম্মতি জানায় পাকিস্তান।

এদিকে, ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সোমবারের বৈঠকে পাকিস্তানকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হবে, ফের শান্তি ভঙ্গ করলে এবার সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে অভিযান চালাতে বাধ্য হবে ভারত। শনিবার ভারতের অভিযানে পাকিস্তানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার ইসলামাবাদের কর্তারা লড়াই থামিয়ে শান্তি পতাকা ওড়ানোর রাস্তা খোঁজা শুরু করেন। তাহলে কেন শনিবার রাতেই পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি ভঙ্গ করল সে প্রশ্নের জবাব চাওয়া হবে সোমবারের বৈঠকে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সংঘর্ষ বিরতি বজায় থাকলেও সতর্কতা শিথিল করা হবে না এখনই। নয়াদিল্লি মনে করছে, অভ্যন্তরীণ কারণেই পাকিস্তানের পক্ষে বিরতি বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। সে দেশে সেনা বাহিনীর একাংশ সংঘর্ষ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। ফলে যে কোনও সময় বড় ধরনের হামলা হতে পারে ধরে নিয়ে সতক অবস্থান বজায় রাখবে ভারত। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিকে কেন্দ্র সরাসরি এই ব্যাপারে নজরদারি চালাবে।
এদিকে, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে পাকিস্তানের প্রস্তাবে ভারত সায় দিয়েছে সোমবার তা আরও স্পষ্ট করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার বিরোধী দলগুলির তরফে এই ব্যাপারে গুচ্ছ প্রশ্ন তোলা হয়। বিশেষ করে আমেরিকার মধ্যস্থতা নিয়ে আপত্তি তুলেছে কংগ্রেস-সহ একাধিক দল। তাদের বক্তব্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংঘর্ষ বিরতি সংক্রান্ত ঘোষণা করায় বিশ্বের কাছে ভারতের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়্গেরা দাবি জানিয়েছেন, সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করুন।

যদিও নয়াদিল্লির কর্তারা একান্তে বলছেন, বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। সংঘর্ষ বিরতি চেয়ে আলোচনা, মধ্যস্থতার জন্য কোনও আইন, নিয়ম মানার ব্যাপার নেই। এই ব্যাপারে কারও এক্তিয়ার অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমেরিকা তাদের মতো করে চেষ্টা চালিয়েছে। আরও অনেক দেশ এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। কিন্তু ভারত রাজি হয়েছে পাকিস্তানের তরফে অনুরোধ আসার পর। তৃতীয় কোনও দেশের চাপ বা হস্তক্ষেপের কারণে ভারত রাজি হয়েছে, বিষয়টি মোটেই এমন নয়।