Income Tax in Union Budget 2025 সরস্বতী পুজোয় ‘লক্ষ্মী’ নির্মলা ,১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর শূন্য , সঞ্চয়ে কি টান পড়বে মধ্যবিত্তের?

0
14
পার্থ সারথি নন্দী , দেশের সময়

স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ হাজার। সেই সঙ্গে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে আয়কর শূন্য। সুতরাং যাঁরা বেতনভুক কর্মী, তাঁদের জন্য বছরে ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ে ইনকাম ট্যাক্স ছাড়। অর্থাৎ, নতুন কর কাঠামোয় তাঁদের আয়কর বাবদ এক টাকাও দিতে হবে না। এমন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাজেটে দেশের তামাম মধ্যবিত্তের মন জয়ের চেষ্টা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বলা ভাল, মন জয় করলেনও বটে। এবারের বাজেটকে বিজেপি মধ্যবিত্তের ড্রিম বাজেট বলে প্রচার শুরু করেছে। মোটের উপর প্রতিক্রিয়ায় মধ্যবিত্ত মানুষও কর ছাড়ের বিষয়টিতে খুশি।

আগামী সপ্তাহে নতুন আয়কর বিল পেশ। অনেকেই বলছেন, সরস্বতী পুজোয় ‘লক্ষ্মী’ হলেন নির্মলা। কিন্তু মধ্যবিত্তের এই কর ছাড় দিয়েই কি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব? সেই প্রশ্নও কিন্তু উঠছে। অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন, এতদিন কর ছাড় পাওয়ার জন্য চাকরিজীবী মধ্যবিত্তদের একটা বড় অংশ সঞ্চয় করতেন। আর ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে এই সঞ্চয়ের প্রবণতা রয়েছে বলেই তাঁরা বেঁচে গেলেন। কিন্তু এখন ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগারে আয়কর দিতে না হলে মধ্যবিত্তের মধ্যে কি একইরকমভাবে সঞ্চয়ের মানসিকতা থাকবে? কারণ, হাতে টাকা থাকলে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সাধারণভাবে কেনাকাটার দিকেই ঝুঁকবে। সেক্ষেত্রে সঞ্চয়ে টান পড়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ কোনওভাবে অসুরক্ষিত হয়ে পড়বে না তো?

যদিও এমনটা মানতে নারাজ অর্থনীতিবিদদের সবাই। তাঁদের বক্তব্য, এবারের বাজেটে একটাই লক্ষ্য ছিল, বাজারে চাহিদা তৈরি করা। কারণ, দেখা যাচ্ছিল, দেশে বহু জিনিস তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তা বিক্রি হচ্ছে না। কারণ, একটা বড় অংশের মানুষের হাতে পয়সা থাকছে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই মধ্যবিত্তের আয়করে নজিরবিহীন এই ছাড় দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁদের হাতে টাকা থাকে এবং তাঁরা বাজারে কেনাকাটা করেন। এতে বাজারে চাহিদা তৈরি হবে। চাঙ্গা হবে অর্থনীতি।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের কথায়, মধ্যবিত্তের হাতে টাকা থাকলে তাঁরা শুধু কেনাকাটা করবেন, সঞ্চয় করবেন না। এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। যাঁদের সঞ্চয় করার তাঁরা ঠিকই সেটা করবেন। তাঁর মতে, আয়করে ছাড় মেলায় মধ্যবিত্ত এখন আরও বেশি করে স্টক মার্কেটে অর্থাৎ শেয়ার বাজারে লগ্নি করবেন। আর যত বেশি কেনাকাটা হবে, জিনিসপত্র বেশি বিক্রি হবে, সেখান থেকে সরকারের জিএসটি বাবদ রেভিনিউ আর্ন হবে। যদিও তাঁর ওই মন্তব্য নিয়ে অর্থনীতিবিদদের অনেকের বক্তব্য, স্টক মার্কেটে লগ্নি করা মোটেই সঞ্চয় নয়। এটা ইনভেস্টমেন্ট। আর ওভার ভ্যালু হয়ে গিয়ে যে কোনও সময় ক্র্যাশ করে যেতে পারে শেয়ার বাজার।

একইভাবে অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, ভারতবর্ষে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে প্রচুর অর্থ রয়েছে। যারা মূলত বড় বড় কর্পোরেট সেক্টরের মালিক। ফলে বাজেটে কর্পোরেট সেক্টরে আয়কর নিয়ে কী থাকে, সেদিকে নজর ছিল। কিন্তু দেখা গেল, সেখানে যা ছিল, সেটাই থেকে গেল। তাহলে লাভ কী হল? সরকার তো কর্পোরেট সেক্টরের আয়করের কাঠামো পরিবর্তন করে সেখান থেকে রেভিনিউ আদায় বাড়াতে পারত। কিন্তু সেপথে হাঁটল না তাঁরা। তাছাড়া এই যে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর শূন্য বলা হচ্ছে, ভারতবর্ষের কত শতাংশ মানুষ বছরে ১২ লক্ষ টাকা আয় করেন?

কর্মসংস্থান নিয়ে আদৌও কি কোনও দিশা দেখা গেল এবারের বাজেটে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে বাড়তি ঋণ দেওয়ার ঘোষণা ছাড়া কর্মসংস্থান তৈরিতে সেভাবে কোনও দিশা নেই বাজেটে। এক্সপোর্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। নতুবা ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। এর আগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, বছরে এক কোটি বেকার যুবকের চাকরি। তা কী হল, সেবিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই বাজেটে। যে হারে নতুন ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখন দেশের অন্যতম বড় সমস্যা কর্মসংস্থান। নির্মলা সীতারামন যখন বাজেট পেশ করছেন, তখন ইলন মাস্ক ঘোষণা করছেন, আগামী মানুষ যে কাজ করতে পারে, কিছুদিনের মধ্যে তার সবটাই করতে পারবে এআই। সেক্ষেত্রে স্পষ্ট, কাজের ক্ষেত্র আরও সঙ্কুচিত হবে। মানুষ কাজ হারাবেন। নতুনরা কাজ পাবেন না। এসব নিয়ে কোনও দিশা নেই বাজেটে। ২০১৯ সালে দেখা গিয়েছিল, আমাদের দেশে বেকারত্ন সর্বকালীন রেকর্ড ছুঁয়েছে।

২০২৪ সালে এসে দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। বেকারত্ন খানিকটা কমেছে। কিন্তু কোথায় কমেছে? যতটুকু যা কাজ জুটেছে সবই আন স্কিলড সেক্টরে এবং রুরাল অর্থাৎ গ্রামীণ বলয়ে। উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে সবক্ষেত্রেই দেখা যায়, মানুষজন কৃষিকাজ ছেড়ে শিল্প কলকারখানায় কাজে ঢোকেন। অথচ আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে কাজ করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এতে স্পষ্ট, অন্য কোনও কাজ না পেয়ে মানুষ চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আয়কর ছাড় নিয়ে লাফালাফি করা হচ্ছে। অথচ মানুষের আয় কতটা কমেছে, তা কেন তুলে ধরা হচ্ছে না?

কৃষক যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান, সেজন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে একটি কথাও বলা হয়নি বাজেটে। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বাজেটে আমজনতার জন্য কিছু নেই। বিহারে ভোট রয়েছে, সেকারণে বাজেটে ঢেলে দেওয়া হয়েছে সে রাজ্যকে। একই বক্তব্য অন্যান্য বিরোধীরও। যদিও বিজেপির দাবি, প্রতি বছরই কোথাও না কোথাও ভোট থাকে। ফলে প্রতিবারই একই কথা বলে থাকে বিরোধীরা। আসলে এবার যে বাজেট হয়েছে, মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখে যেভাবে আয়করে সংস্কার করা হয়েছে, তা করে দেখানোর মতো ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র নরেন্দ্র মোদির, নির্মলা সীতারামনের। বিরোধীরা কে, কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না। বাজেট নিয়ে গোটা দেশের মানুষ খুশি।

বছরের শেষে বিহারে ভোট। এদিন সকালে যখন বিহারের মধুবনী প্রিন্টের শাড়ি পরে বাজেট পেশ করতে আসেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, তখনই কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছিল। এরপর যখন বিহারের জন্য একের পর এক ঘোষণা করতে থাকেন তিনি, তখন স্পষ্ট হয়ে যায় অর্থমন্ত্রীর মধুবনি প্রিন্টের শাড়ি পরে বাজেট পেশ করতে আসার বিষয়টি মোটেই কাকতালীয় নয়।

বাজেটে বলা হয়েছে, দেশে ১২০টি বিমানবন্দর হবে। এর মধ্যে তিনটি তৈরি হবে বিহারে। এছাড়া বিহারে গঠিত হবে মাখনা বোর্ড। সেরাজ্যের জন্য রয়েছে আরও নানা প্রকল্প। অথচ পশ্চিমবঙ্গের ঝুলি সেই শূন্য। অসমে ইউরিয়া প্ল্যান্ট তৈরির কথা বলা হয়েছে। বাজেটে নির্মলা জানিয়েছেন, ক্যান্সার, জটিল রোগের ৩৬টি ওষুধে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে শুল্ক। ছ’টি জীবনদায়ী ওষুধে প্রত্যাহার করা হবে ৫ শতাংশ শুল্ক। আগামী পাঁচ বছরে দেশে মেডিকেল কলেজে আসন বৃদ্ধি পাবে ৭৫ হাজার। আগামী এক বছরে মেডিকেল কলেজে ১০ হাজার আসন বৃদ্ধি পাবে।

প্রতিটি জেলা হাসপাতালে তৈরি হবে ক্যানসার সেন্টার। আগামী তিন বছরে তৈরি হবে ২ হাজার ক্যানসার সেন্টার। দেশে তৈরি হবে ৫টি নতুন আইআইটি। আইআইটির ক্ষেত্রে আসন বৃদ্ধি পাবে ৬ হাজার। কর্মসংস্থান বাড়াতে জোর দেওয়া হবে পর্যটনে। উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, টি ট্যুরিজমে একটা ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

এখন ট্যুরিজমের প্রসারে যে প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে, তাতে টি ট্যুরিজমকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সেটাই দেখার। বাজেটে বলা হয়েছে, পেনশনের ক্ষেত্রে কেওয়াইসি সরলীকরণে জোর দেওয়া হবে। বিমা ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ করা যাবে। শিক্ষায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরি হবে সেন্টার ফর এক্সিলেন্স। তিনটি এক্সিলেন্স সেন্টার তৈরিতে বরাদ্দ করা হবে ৫০০ কোটি টাকা। পাঁচ লক্ষ এসসি, এসটি মহিলার জন্য চালু হবে নতুন প্রকল্প। প্রতিটি মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে ব্রডব্যান্ড চালু হবে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ঋণ বেড়ে হবে ৫ লক্ষ টাকা। এলইডি, এলসিডি লাইট, মোবাইলের দাম কমবে। দাম কমবে সারের। প্রবীণদের জন্য ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে আয়করে। ডেলিভারি বয়দের জন্য চালু হবে স্বাস্থ্যবিমা। জোর দেওয়া হবে দেশে জাহাজ তৈরিতে। জোর পাবে প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি যোজনা। জোর দেওয়া হবে পরমাণু শক্তিতে। পিপিপি মডেলে তৈরি হবে রাস্তা। শহরের উন্নয়নে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকা।

Previous articleBudget 2025 ‘এটা জনতার বাজেট’, বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
Next articleAbhishek Banerjee- Budget 2025 এটা দেশের বাজেট নয়, বিহারের বাজেট : অভিষেক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here