ঝালদা , দেশের সময :
কার্তিকী অমাবস্যায় দেশ যখন আলোর উৎসবে উত্তাল, তখন জঙ্গলমহলে এ এক অন্য উৎসবে আলো জ্বলে ভিন্ন স্নিগ্ধতায়। ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি যখন প্রতীক-বিস্মৃত পশুবলির উল্লাসে মত্ত, তখন সেই চোখ-ধাঁধানো আলোর আড়ালে ‘বাঁদনা পরব’ এক আশ্চর্য সবুজ দ্বীপখণ্ড। গবাদি পশুর প্রতি মমতায় আলোর এ উৎসব যেন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। দেখুন ভিডিও
পশ্চিম রাঢ়ের কৃষক সমাজের তিন থেকে পাঁচ দিনের এই লোকায়ত উৎসব চলে। নাম ‘বাঁদনা’ পরব, অর্থাৎ গো-বন্দনার উৎসব। তার নানা আচার, বিচিত্র আয়োজন। গোয়াল ঘর পরিচ্ছন্ন করা, নদী কিংবা বাঁধে নিয়ে গিয়ে গরুগুলিকে ভাল করে স্নান ও পরিচ্ছন্ন করানো, শিঙে ঘাড়ে তেল মাখানো, কপালে চালগুড়ি আর সিঁদুরের টিপ পরানো, শিং আর গলায় শালুক ফুলের মালা। সারা বছর সেবা করে যে গরু, তাকে তো কিছুটা ফিরিয়ে দিতেই হবে। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস রাতের অন্ধকারে শিবঠাকুর কখন তাঁর কপিলাকে দেখতে আসবেন কেউ জানে না ।
তাই তিন দিন ধরে ‘বাঁদনা’ পরব প্রচলিত। এই সময়টা নির্ধারিত থাকে গবাদি পশুর বিশ্রামের জন্য, আর তাদের সেবার জন্য। গরুকে প্রহার করা যায় না এই দিনগুলিতে। লাঠিগুলি দূরে দূরে ছুড়ে ফেলে দেয় গোপালকের দল।
পুরুলিয়ার ঝালদা থানার খাটঝুড়ি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা অম্বিকা মাহাতো , গোহালি মাহাতো ও খাড়িরাম মাহাতোরা জানালেন তিন দিনের উৎসবে প্রথম দিনের নাম ‘জাওয়ার’, দ্বিতীয় দিন ‘জাগর’, তৃতীয় দিন ‘গয়রা’। চতুর্থ আর পঞ্চম দিনেও তার রেশ থাকে কোথাও কোথাও। সে সব দিনে ‘গয়রা-গোঁসাই পূজা’, ‘চইখপুরা’, ‘গরু চুমা’, ‘গোঠ পূজা’, ‘গরু খুটা’, ‘কাঁড়া খুটা’— চলতে থাকে নানা লোকাচার।
সব গরু বিশ্রাম পায় এই সব দিনে, ভাল ভাল খাবার পায়। কচি ঘাস, খড়. লতাপাতা, খোলভুষি সব মজুত থাকে আগে থেকে। গরু-বাছুরের সঙ্গে এই সময়টায় আদরযত্ন পায় কাঁড়া-মোষ, ছাগল-ভেড়ারাও। খাটঝুড়ি গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী বাঁদনা পরব দেখতে জড়ো হন এলাকার প্রচুর সাধারণ মানুষ।
কার্তিকী অমাবস্যায় আলোর উৎসবের আড়ালে জঙ্গলমহলে ‘বাঁদনা পরব’ যেন এক এক আশ্চর্য সবুজ দ্বীপখণ্ড ।