Mother ‘মা’ : দেবাশিস রায়

0
199
দেবাশিস রায় (চিত্র সাদবাদিক) ।

মাঝে মাঝেই মনে হয় দীর্ঘ চিত্রসাংবাদিকতার জীবনে প্রচুর ঘটনা রয়েছে যা আমার পরে আর কেউই জানতে পারবেনা,আমার তোলা সংবাদ চিত্র হয়তো বহু মানুষ দেখেছেন কিন্তু তার পেছনের গল্পগুলো প্রায় কেউই জানেন না,যেমন সাংবাদিক বা চিত্রসাংবাদিকরা কতো রকম পরিস্থিতির সম্মুখিন হন অথবা কতরকম দৃশ্য তাদের চোখে পরে,তারই একটা ঘটনা বলবো ।

একবার আলিপুর আদালতে গিয়েছি একটা খুনের মামলায়,খুনটা এরকম যে একজন লরিচালক এক ট্রফিক পুলিশকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছেন । মামলাটা অনেকদিন ধরেই চলছে,তার আজ সাজা ঘোষনার দিন । আলিপুর আদালতে খানিকটা ঘুরঘুর করতেই পেয়ে গেলাম সেই আসামীকে!

তাকে তখন আদালতে তোলার পুলিশি তোরজোর চলছে,আমার সঙ্গে রয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকার এক সাংবাদিক শমিক ঘোষ,অত্যন্ত মানবিক এবং হৃদয়বান ছেলে!যাই হোক শমিক ব্যস্ত হয়ে গেলো সংবাদ সংগ্রহের কাজে আর আমি সংবাদ চিত্র সংগ্রহের তাগিদে ।

সেই লরি চালককে যখন লকআপ থেকে কোমড়ে দড়ি পরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে (দড়ি অবশ্য আদালতে পেশের আগের মুহূর্তে খুলে দেওয়া হয়) তখন লক্ষ করলাম আদালতের পথের ধারে এক বেশ অল্প বয়সি মহিলা এবং গোটা চার শিশু বসে বসে মহিলাকে আকড়ে ধরে কাঁদছে! ততক্ষনে আমার ছবি তোলাও হয়ে গিয়েছে,কৌতুহল বশত মহিলার কাছে এগিয়ে গিয়ে পথের ধারে বসে একান্তে জিজ্ঞেস করি তার কান্নার কারন ।

ঘটনাটা ছিলো এরকম যে যাকে খুনের অপরাধে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে তিনি লড়িচালক হলেও কেমিষ্ট্রি নিয়ে এম এ করেছেন কিন্তু পেশা হিসাবে লড়ি চালনা বেছে নিয়েছিলেন,আর প্রতিদিন সকালে গাড়ি নিয়ে বের হলেই সেই পুলিশ কর্মী পয়সা নিতেন,এমনি বেশ কিছুদিন চলতেই সেদিন হয়তোবা তার মেজাজ ঠিক ছিলনা, লড়ি চালিয়ে বেরহতে গিয়ে সেই পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয় । মহিলা আরও জানান এই শিশুরাও তার স্বামীর আগের পক্ষের সন্তান কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার এই মহিলা শিশুগুলোকে এমন ভাবে মায়ের ভালবাসা দিয়ে আকরে রেখেছে যে মাকে কাদতে দেখলেই শিশুগুলোও মাকে জড়িয়ে ধরে ততোধিক জোরে কান্নাকাটি করছে,দেখলাম এই হলো সহজাত মাতৃত্ব,নিজের গর্ভে ধারন না করেও কিভাবে এক প্রকৃত মা হয়ে ওঠা যায়!

এরই মধ্যে আসামীকে কোমড়ে দরি দিয়ে ফের আদালত থেকে ঐ মহিলা ও শিশুদের পাশ দিয়েই জেলের গাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,সহকর্মী শমিক এসে খবর দিলো যাবজ্জীবন করাদন্ড সাজা হয়েছে,হাউহাউ করে কাদতে থাকা মা ও আকরে থাকা সন্তানদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম থাকেন কোথায়? বললেন ডায়মন্ড হারবার লাইনে,খাওয়া তো দুর ফেরারও পয়সা নেই,আগামী দিনে কি হবে জানেননা,এরই মধ্যে জেলের গাড়ি এসে আসামীকে নিয়ে চলে গেলো মা আর সন্তানদের দিকে একরাশ ধুলো উড়িয়ে,পথের ধারে পরে রইলো এক অসহায় মা আর সন্তানদের শুধুই আর্তনাদ!

প্রায় জোর করেই আমি আর শমিক মিলে তাদের বাড়ি ফেরার সামান্য কিছু ওনার হাতে দিতেই কিছুতেই রাজি হননা,এতই আত্মমর্যাদা বোধ,যাই হোক অনেক বোঝাতে রাজি হলেন। দীর্ঘ বছর পর আজ তারা কেমন আছেন জানিনা,ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা তাদের মঙ্গল হয়েছিলতো?

Previous articleSandip Ghosh: পরিবারে অনটন!মামলা লড়ার টাকাও নেই হাতে,হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন সন্দীপ ঘোষ
Next articleSealdah ESI Hospital শিয়ালদা ইএসআই হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, স্থানান্তর করা হয় খোলা আকাশের নীচে থাকা রোগীদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here