দেশের সময় :অভীক, বিরূপাক্ষদের মেন্টর জলপাইগুড়ির ডাঃ সুশান্ত রায়কে ছেঁটে ফেলল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাধিক কারণ দেখিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুশান্ত রায়ের আইএমএ’র বঙ্গীয় শাখার সদস্যপদ খারিজ করে দেওয়া হল। সুশান্তকে ছেঁটে ফেলার পিছনে আইএমএ’র তরফে যে কারণগুলি দেখানো হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম আরজিকরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সিবিআইয়ের স্ক্যানারে আছেন।
ঘটনার পর তিনি আরজিকরে হাজির হয়ে তথ্য প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করেছিলেন এমন অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আইএমএ’র বঙ্গীয় শাখা অভিযোগ তুলেছে, তিলোত্তমার খুন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে যখন রাজ্য জুড়ে চিকিৎসকরা প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হয়েছেন, তখন আইএমএ’র জলপাইগুড়ি শাখা রাস্তায় নেমে কোনও আন্দোলন করেনি। উল্লেখ্য, আইএমএ’র জলপাইগুড়ি শাখার সম্পাদক পদে ছিলেন সুশান্ত রায়।
যদিও আইএমএ’র বঙ্গীয় শাখার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই জলপাইগুড়ি ব্রাঞ্চের সম্পাদকের পদও হাতছাড়া হয়ে গেল স্বাস্থ্য দফতরের উত্তরবঙ্গের এই প্রাক্তন ওএসডি’র। সুশান্ত রায়কে সাসপেন্ড করার পিছনে আইএমএ’র তরফে আরও যে বিস্ফোরক অভিযোগ আনা হয়েছে, তা হল তিনি প্রকাশ্যেই আরজিকরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সমর্থন করেছেন। অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসদের মতো ডাক্তারদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে থ্রেট সিন্ডিকেট চালাচ্ছিলেন।
পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক জায়গা থেকে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আসছিল। তিনি আইএমএ’র নিয়মকানুনও মানছিলেন না। হাওড়ায় আইএমএ’র সভা বানচালের চেষ্টা করেন জুলাইয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে শোকজ করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি আইএমএ বঙ্গীয় শাখা। আইএমএ’র রাজ্য শাখার সম্পাদক রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন বলেছেন, ডাঃ সুশান্ত রায়কে সংগঠনের বঙ্গীয় শাখার সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ডাঃ দিলীপকুমার দত্ত বলেন, সুশান্ত রায় থ্রেট সিন্ডিকেটের মাথা ছিলেন। আইএমএ দখল করার চেষ্টায় বাহিনী গড়ছিলেন। নানারকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তিনি। তাঁর সদস্যপদ খারিজ করে দিল্লিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যদিও আইএমএ’র বঙ্গীয় শাখা তাঁকে এভাবে সাসপেন্ড করতে পারেন না বলে পাল্টা তোপ দেগেছেন সুশান্ত রায়। তাঁর দাবি, রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের সহ সভাপতি তিনি। মেডিকেল কাউন্সিলে তাঁদের প্যানেল জেতার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়। শান্তনু সেন তাঁকে অনেক আগেই শেষ দেখে ছাড়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সুশান্ত রায়ের দাবি, আইএমএ’র স্টেট কাউন্সিলের নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। তিনি যাতে কথা বলতে না পারেন, সেকারণেই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হল।
আসলে উত্তরবঙ্গ থেকে যাতে কেউ আইএমএ’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বডি স্টেট কাউন্সিলে কথা বলতে না পারেন, সেকারণেই তাঁকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলছিল। আইএমএ’র স্টেট কাউন্সিলের মিটিংয়ের চিঠি পর্যন্ত পেতেন না তিনি। অভীক, বিরূপাক্ষদের নিয়ে থ্রেট সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ প্রসঙ্গে সুশান্ত রায়ের বক্তব্য, আমি কোনও সিন্ডিকেট গড়িনি। অভীক আমাকে জেঠু বলে ডাকে। অনেকেই আমাকে জেঠু বলে।
এর বেশি কিছু নয়। তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পর আরজিকরে গিয়ে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে ডাঃ সুশান্ত রায়ের বক্তব্য, ‘‘৯ আগস্ট আমি সকালে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে মেডিকেল কাউন্সিলে মিটিংয়ে বসি। দুপুর দু’টো নাগাদ আরজিকরের ঘটনার খবর পাই। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে মেডিকেল কাউন্সিলের পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে আরজিকরে যাই। ওই তরুণী চিকিৎসক যেহেতু মেডিকেল কাউন্সিলের একজন সদস্য ছিলেন, ফলে ঘটনাস্থলে যাওয়া কর্তব্য মনে করি। বিকেল চারটে নাগাদ আমি আরজিকরে যাই। তখন অবশ্য মৃতদেহ নিয়ে গিয়েছে। আমি সেমিনার হলেও গিয়েছিলাম। কিন্তু কর্ডনের বাইরে ছিলাম। একেবারে পিছনে দাঁড়িয়েছিলাম। আর তখন ঘটনাস্থলে স্বাস্থ্য সচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, আরজিকরের অধ্যক্ষ অনেকেই ছিলেন।’’ তথ্যপ্রমাণ নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে সুশান্ত রায়ের মন্তব্য, এসবই মিথ্যে রটনা। আমার ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।