দেশের সময় , কলকাতা : হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে আদালত কক্ষ থেকে সবে বেরিয়েছিলেন বিচারক। তখনও এজলাসেই বসে ছিলেন আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ চার জন অভিযুক্ত।
তাঁদের ঘিরে তৈরি করা রয়েছে কড়া নিরাপত্তার বলয়। রয়েছেন পুলিশকর্মী, রয়েছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। এর মাঝেই সন্দীপকে ‘ধিক্কার’ দেন এক মহিলা। ক্রমে স্লোগান উঠতে শুরু করে, ‘চোর চোর’, ‘ফাঁসি চাই’।
এর পর উড়ে আসে হুমকি। শেষ পর্যন্ত আদালত কক্ষে ফিরে আসেন বিচারক। হাত জোড় করে চুপ করার অনুরোধ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইরে মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। শেষ পর্যন্ত কড়া প্রহরায় আদালত থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয় সন্দীপদের।
বিচারকের নির্দেশের পর মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে সশরীরে হাজির করানো হয় সন্দীপ-সহ চার জনকে। আরজি কর হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সন্দীপ, সুমন হাজরা, বিপ্লব সিংহ এবং আফসর আলিকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে সেই নির্দেশ দিয়ে এজলাস থেকে বিচারক বেরিয়ে যেতেই শুরু হয় স্লোগান। আদালত কক্ষে উপস্থিত লোকজন চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই’। কেউ বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিন সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতেই চাইল না সিবিআই। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হল সন্দীপ-সহ ধৃত চারজনকে।
মঙ্গলবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছিল সন্দীপ ঘোষ সহ চার অভিযুক্তকে। এখানেই সিবিআই দাবি করেন, আরজি কর কাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের যে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে তা থেকে তথ্য় পেতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। অর্থাৎ এই সময়টায় তাকে জেল হেফাজতে রাখা যেতে পারে। সিবিআইয়ের আইনজীবীরা কোর্টে জানান, ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আবার তাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হতে পারে।
আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ আরও চারজন। মঙ্গলবারই সিবিআই তাঁদের ভার্চুয়াল শুনানি করতে চেয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত নির্দেশ দেয়, সন্দীপ ঘোষ সহ বাকিদের সশরীরেই আদালতে পেশ করতে হবে। কোনও ভার্চুয়াল শুনানি হবে না।
তারপরেই বিশেষ সিবিআই আদালতে পেশ করা হয় সন্দীপ ঘোষ, বিপ্লব সিনহা, আফসার আলি এবং সুমন হাজরাকে। আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি সন্দীপের বিরুদ্ধে চিকিৎসার জৈব বর্জ্য দুর্নীতি, সরকারি টাকা নয়ছয়, নির্মাণের জন্য আইন ভেঙে ঠিকাদার নিয়োগ-সহ একাধিক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন।
এর আগে যেদিন আদালতে হাজির করানো হয়েছিল সন্দীপ ঘোষকে, সেদিন চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল আদালত চত্বরে। সন্দীপকে উদ্দেশ করে ‘চোর-চোর’ স্লোগান ওঠে। গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, আদালত থেকে তাঁকে বের করে আনার সময়েই এক বিক্ষোভকারী সন্দীপকে চড় মারেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই তাঁদের সকলের ভার্চুয়াল শুনানির আবেদন করেছিল সিবিআই। প্রথমে মৌখিক এবং পরে লিখিতভাবেও আবেদন করা হয়। কিন্তু সেই আর্জি মানেনি আদালত।