দেশের সময় ,কলকাতা:রেশন দুর্নীতি-কাণ্ডে ইডির মামলায় প্রথম জামিন। ধৃত অন্যতম তিন অভিযুক্তর জামিন মঞ্জুর করেছে ইডির বিশেষ আদালত। এরা হলেন, চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান, বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য এবং ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস। তিনজনেই রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
মঙ্গলবার ৫০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে তিন জনের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে ইডির বিশেষ আদালত।
গত বছর দুর্গাপুজোর সময়ে প্রায় ৫০ ঘণ্টা অভিযানের পরে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন বাকিবুর। তারপরে এই মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শঙ্কর আঢ্য, বিশ্বজিৎ দাসরা ধাপে ধাপে গ্রেপ্তার হন। সে দিক থেকে প্রায় ১০ মাস পরে এই মামলার মূল অভিযুক্ত বাকিবুর-সহ তিনজন জামিন পেয়ে যাওয়ায় বাকিদের জামিন পাওয়ার পথও প্রশস্ত হলো বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের একাংশ।
ফলে এই মামলার তদন্তে ইডি বেশ অস্বস্তিতে পড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে তদন্তকারী এজেন্সি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কি না, সে দিকেও নজর রয়েছে আইনজীবী মহলের।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রেশনের মালপত্র চুরি এবং আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ আনা হলেও ইডি তাঁদের বিরুদ্ধে চুরির কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি বলে দাবি করেছেন বাকিবুর রহমানদের আইনজীবী জাকির হোসেন। পাশাপাশি শঙ্কর আঢ্য ও বিশ্বজিৎ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তাঁরা রেশন দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
কিন্তু ইডি তাদের তদন্তে এর সপক্ষেও কোনও জোরালো প্রমাণ দিতে পারেনি বলে দাবি আইনজীবীদের। এমনকী রেশন দুর্নীতির টাকা যে তাদের কাছে গিয়েছে, তার কোনও প্রমাণ নেই বলে তাঁদের দাবি।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এসএসকেএম হাসপাতালে থাকাকালীন তাঁর মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া একটি চিরকুটের সূত্র ধরে ইডি বিশ্বজিৎ ও শঙ্করের বাড়িতে হানা দেয়। আইনজীবীদের একাংশের দাবি, পরে ওই চিরকুটকে আর ইডি প্রামাণ্য নথি হিসেবে আদালতে দেখাতে পারেনি। সেটাও জামিনের ক্ষেত্রে একটা বড় যুক্তি বলে দাবি আইনজীবীদের। এই মামলায় ইডির তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছিল আদালত।
প্রসঙ্গত,একই অভিযোগে জেলবন্দি রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। স্বভাবতই, তিনজনের জামিন মঞ্জুর হতে বিভিন্ন মহল থেকে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তবে কি এরপরে একই যুক্তিতে জামিন পেতে পারেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও?
রেশন দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের অক্টোবরে চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুরকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সেই সূত্রেই ইডির স্ক্য়ানারে ধরা পড়েন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা তদানীন্তন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
রেশন দুর্নীতি মামলায় আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি ইডির আধিকারিকদের। সেই দুর্নীতির তদন্তে নেমেই গত বছরের ২৭ অক্টোবর মাঝরাতে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বাড়িতে প্রায় ২১ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ৩টে নাগাদ তৎকালীন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
হাসপাতালে থাকাকালীন জ্যোতিপ্রিয় নিজের মেয়েকে একটি চিঠি লিখেছিলেন বলে ইডি সূত্রের দাবি। সেই চিঠির সূত্র ধরেই রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্তকারীদের নজরে আসেন জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা তথা বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর। গত ৬ জানুয়ারি শঙ্করকে গ্রেফতার করে ইডি। এরপরই আর এক ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসকে হেফাজতে নেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার ব্যক্তিগত বন্ডে এই তিনজনকেই জামিন দিয়েছে ই়ডির বিশেষ আদালত।
শারীরিকভাবে নানা রোগে আক্রান্ত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। অতীতে একাধিকবার জামিনের আবেদনও জানিয়েছিলেন বালু। এদিন আদালত একই মামলায় তিনজনের জামিন মঞ্জুর করার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, এরপর কি জ্যোতিপ্রির পালা?
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, সম্প্রতি একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মৌখিক পর্যবেক্ষণে নিম্ন আদালতগুলি জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়ে গা বাঁচানোর চেষ্টা করে দায় এড়ায় বলে মন্তব্য করেছিলেন। এ দিন রেশন মামলায় ইডির বিশেষ আদালত তিন অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করার পরে শীর্ষ আদালতের এই মন্তব্য নিয়েও জল্পনা রয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে।