বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বনগাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে জিহাদ হাওলাদারকে। তিনি পেশায় কসাই। শুক্রবার সকালে তাঁকে নিয়ে আদালতে গিয়েছে সিআইডি। জিহাদকে বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়েছে। সেখানে ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে চাইবেন গোয়েন্দারা।
ঢাকা ও কলকাতা বাংলাদেশের সাংসদ ‘খুন’-এ নয়া মোড়! আওয়ামী লিগের সাংসদ খুনের ঘটনায় এবার বাংলাদেশে গ্রেফতার এক রহস্যময়ী। ঢাকা মেট্রোপটিলন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন শিলাস্তি রহমান নামে এক মহিলা।
সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিমের খুনের ঘটনায় মূল চক্রী আখতারুজ্জামানের বান্ধবী হলেন শিলাস্তি রহমান। তাঁকে ‘হানিট্র্যাপ’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল সন্দেহ করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। পুলিশের সন্দেহ, বাংলাদেশের সাংসদ খুনের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকতে পারেন এই মহিলা।
সাংসদ খুনের তদন্তে বাংলাদেশের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের সিআইডিও জোরকদমে আসরে নেমেছে। এপার বাংলা, ওপার বাংলা… দুই প্রান্তের তদন্তকারী অফিসাররাও রহস্যভেদের জন্য তদন্ত শুরু করেছেন। সূত্রের খবর, সিআইডি প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে, সাংসদকে খুনের পর দেহাংশ কোথায় কোথায় ফেলা হয়েছিল, তা এই রহস্যময়ী মহিলা জানেন।
নিউটাউনের ফ্লাটে বাংলাদেশের সাংসদ খুনের তদন্তে ইতিমধ্যেই জিহাদ হাওলাদার নামে এক পেশাদার কসাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মুম্বইয়ে আশ্রয় নিয়েছিল এই ব্যক্তি। পুলিশ সূত্রে খবর, মূল চক্রী আখতারুজ্জামানই ওই ব্যক্তিকে দুমাস আগে মুম্বই থেকে কলকাতায় নিয়ে এসেছিল। ধৃত জিহাদ হাওলাদার পুলিশি জেরায় সে কথা স্বীকার করেছে। পুলিশকে দেওয়া জিহাদের বয়ান অনুযায়ী, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই সে ও আরও চার বাংলাদেশি মিলে সাংসদকে ওই ফ্ল্যাটে খুন করেছিল।
বাংলাদেশি সংসদ সদস্য আনওয়ারুল আজিমের ‘খুনের’ ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। ধৃতের নাম জিহাদ হাওলাদার। তাঁর বয়স ২৪ বছর। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, পেশায় কসাই জিহাদ আদতে বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধ ভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আজিমকে ‘খুনে’র প্রায় দু’মাস আগে অভিযুক্তেরা জিহাদকে মুম্বই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় আনওয়ারুলকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন জিহাদ।
ধৃতকে জেরা করার পর তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ সব কাজ করেছিলেন। জিহাদ ছাড়াও আরও চার জন বাংলাদেশি নাগরিক এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন।
আনওয়ারুলকে তাঁরা প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। মৃতের পরিচয় যাতে বোঝা না যায় তাই তাঁরা শরীরের হাড় এবং মাংস আলাদা করে ফেলেন। এর পর হাড় ও মাংস টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে সব কিছু পলিথিন ব্যাগে ভরে ফ্ল্যাটের বাইরে গিয়ে ফেলে দেন।
বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বনগাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে জিহাদ হাওলাদারকে। তিনি পেশায় কসাই। শুক্রবার সকালে তাঁকে নিয়ে আদালতে গিয়েছে সিআইডি। জিহাদকে বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়েছে। সেখানে ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে চাইবেন গোয়েন্দারা।
বারাসত আদালতে জিহাদকে হাজির করানো হলে তাঁকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকেরা। একটাই প্রশ্ন উড়ে আসতে থাকে চারদিক থেকে, ‘‘কেন মারলে?’’ জিহাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে তিনি আদালতে ঢুকে যান। কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি।
গোয়েন্দারা এখনও নিহত সাংসদের কোনও দেহাংশ খুঁজে পাননি। ফলে ধৃতদের জেরা করে যা তথ্য মিলেছে, তার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। এ ক্ষেত্রে, অভিযুক্তেরা কোনও ভাবে তদন্তকারীদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। সেই সূত্রেই জিহাদকে হেফাজতে প্রয়োজন। সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থেই তাঁকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চাওয়া হতে পারে।
সিআইডি সূত্রে খবর, হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য। শিলাস্তি রহমান নামের এক মহিলাকে সামনে রেখে তাঁকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউ টাউনের ওই আবাসনে। তার পর সেখানে তাঁকে খুন করা হয়। ধৃত জিহাদের বিরুদ্ধে খুনের জন্য অপহরণ, তথ্য নষ্ট করা, ভুল তথ্য দেওয়া, খুন এবং অপরাধের চক্রান্ত করার ধারা যোগ করা হয়েছে।
এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত, কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড, তা জানতে জিহাদকে হেফাজতে চাওয়া হতে পারে।
সাংসদ খুনের ঘটনায় সিআইডি ইতিমধ্যেই জুবের নামে আরও এক সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের এক জন জুবেরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কী কারণে সেই সাক্ষাৎ সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সাংসদ খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। খুনের কিনারা করতে সিআইডির একটি দল বৃহস্পতিবারই ঢাকা পৌঁছে গিয়েছে। সেখানেই ধৃতদের জেরা করবেন গোয়েন্দারা।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন আজিম। প্রথমে তিনি উঠেছিলেন বরাহনগরের এক বন্ধুর বাড়িতে। সেখান থেকে দু’দিন পর নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে নিখোঁজ ডায়েরি করেন ওই বন্ধু। উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যেরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে যোগাযোগ করা হয় ভারত সরকারের সঙ্গে। তার পর সংসদ সদস্যের খোঁজ শুরু হয়।
সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, আজিম কলকাতায় আসার অনেক আগেই এখানে চলে এসেছিলেন অভিযুক্তেরা। শহরে বসেই তাঁরা খুনের ছক কষেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। দুই অভিযুক্ত কলকাতার সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে ছিলেন গত ২ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত। উল্লেখ্য, ১২ তারিখ কলকাতায় আসেন আজিম। অর্থাৎ, তাঁর আসার অন্তত ১০ দিন আগে কলকাতায় এসে পড়েছিলেন ওই দুই অভিযুক্ত। তাঁরা হোটেল ছাড়েন আজিম আসার এক দিন পরেই। গোয়েন্দাদের অনুমান, এই ১০ দিন ধরে শহরে থেকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন অভিযুক্তেরা।
জানা গিয়েছে, বাংলাদেশি সাংসদকে খুন করার পর সেই ফ্ল্যাটেই রাতে মাংস রান্না করে খাওয়া হয়। তবে তা সাংসদের মাংস নয়। পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছে, দুই ধাপে সরানো হয় দেহাংশ। দেহ লোপাট করতে একটি সাদা রঙের গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল। ৩০ এপ্রিল অনলাইন রেন্টালের মাধ্যমে ওই গাড়িটি ভাড়া করা হয়েছিল।
সাংসদ খুনে এখনও পলাতক সিয়াম হোসেন ও মুস্তাফিজুর। বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসার পর একাধিক ভুয়ো নথির সিম কেনা হয়। সিআইডি-র হাতে ধৃত জিহাদ মুম্বাই থেকে আসার পর চিনার পার্ক এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল। শাহীন সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
সাংসদ খুনে শাহিন আড়াই কোটি টাকা অগ্রীম দিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় ধৃত জিহাদকে জেরা করতে কলকাতায় আসার সম্ভাবনা বাংলাদেশের পুলিশের।
পুলিশি তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, জিহাদ তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করছে। দেহ কোথায় ফেলেছে সে ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দিনভর একাধিক জায়গার কথা বলেছে। এখনও কোনও জায়গাতেই দেহের টুকরো মেলেনি। দেহাংশ যাতে না মেলে সেজন্যই তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে।
তাঁকে খুন করার জন্য ৫ কোটি টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছিল। খুনিদের আড়াই কোটি টাকা অগ্রিম-ও দেওয়া হয়েছিল। খুনের মাস্টার প্ল্যানে জড়িয়ে নারী চরিত্র। সন্দেহ তালিকায় রয়েছে আখতারুজ্জামানের বান্ধবী।
প্রসঙ্গত, ১২ মে সন্ধ্যায় চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গে আসেন আনোয়ারুল এবং এক পারিবারিক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। এরপর ১৩ তারিখ চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে বার হন। এরপর তাঁর গুটিকয়েক মেসেজ এলেও সেভাবে আর এই সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ১৮ মে বরানগর থানার দ্বারস্থ হন আনোয়ারুলের বন্ধু। তদন্তে নামে পুলিশ।