দেশের সময়, বনগাঁ: শনিবারই ছিল শেষ প্রচার। আর এ দিন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের উপর হামলার অভিযোগ উঠল। জানা গিয়েছে, তরুণ এই বিজেপি প্রার্থীর মাথায় আঘাত লেগেছে। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল বনগাঁ হাসপাতালে।
গাইঘাটার হাঁসপুরে এ দিন প্রচারে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের সমর্থনে শনিবার সকালে কল্যাণীতে একটি রোড শো করার কথা ছিল দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের। সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঠাকুরনগরের বাড়ি থেকে কল্যাণী যাচ্ছিলেন শান্তনু। পথেই তাঁর গাড়িতে পুলিশের একটি গাড়ি মুখোমুখি এসে ধাক্কা মারে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, একটি পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়ি এসে ধাক্কা মারে তাঁর গাড়িতে। সেই সময়ে গাড়িতেই বসে ছিলেন প্রয়াত বড় মা বীণাপাণিদেবীর নাতি। পুলিসের গাড়ির সঙ্গে তাঁর গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কায় জখম প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। এদিন দুপুর ১২.১৫ মিনিট নাগাদ গাইঘাটা থানা এলাকার নবরূপরা–গাইঘাটা সড়কের উপর হাঁসপুরের কাছে পুলিসের স্টিকার লাগানো ওই গাড়িতে মুখোমুখি ধাক্কা মারে বনগাঁর বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি। প্রথম গাড়িতে শুধু চালকই ছিলেন। শান্তনু গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে–মুচড়ে যায়। চালকের পাশেই বসেছিলেন শান্তনু। দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন তিনি। তাঁকে বনগাঁর জীবনরতন ধর মহকুমা হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়।
দুর্ঘটনার পর বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা পুলিসের স্টিকার লাগানো গাড়িটি ভাঙচুর করে হাঁসপুরে এবং বনগাঁ বাটা মোড় এলাকার যশোর রোড এবং ঠাকুর নগরে রেল অবরোধ করে বিজেপি সমর্থকেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় র্যাফ নেমেছে। রয়েছে গাইঘাটা থানার বিশাল পুলিস বাহিনী। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
দুর্ঘটনার পর বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা পুলিসের স্টিকার লাগানো গাড়িটি ভাঙচুর করে হাঁসপুরে এবং বনগাঁ বাটা মোড় এলাকার যশোর রোড এবং ঠাকুর নগরে রেল অবরোধ করে বিজেপি সমর্থকেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় র্যাফ নেমেছে। রয়েছে গাইঘাটা থানার বিশাল পুলিস বাহিনী। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়ি চেপে এসে তৃণমূলের লোকজনই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তৃণমূল এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।এ রাজ্যের বিজেপি দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় সাংবাদিকদের জানান প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরকে প্রাণে মারার এটি একটি সড়যন্ত্র,নির্বাচন কমিশনকে গোটা বিষয়টি জানানো হবে।এ দিনের ঘটনাকে চক্রান্ত বলছে বিজেপি।
যদিও বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছেন না জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেছেন, ‘‘কিচ্ছু হয়নি, কোনও ধাক্কাই লাগেনি। সব নাটক।’’ শান্তনুকে কটাক্ষ করে জ্যোতিপ্রিয় আরও বলেছেন, ‘‘বুঝতে পেরেছে যে হেরে গিয়েছে। তাই এই সব নাটক সাজিয়েছে। নিজেই হাসপাতালে চলে গিয়েছে, মাথায় একটা লিকোপ্লাস্ট লাগিয়েছে।’’
এই কেন্দ্রে তৃণমূল-বিজেপি’র লড়াই শুধু নয়, ঠাকুরবাড়ির দুই সদস্যেরও লড়াই। তৃণমূলের প্রার্থী, গতবারের সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। যিনি আবার শান্তনুর জেঠিমা। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই কেন্দ্রে মতুয়া ভোট অন্যতম ফ্যাক্টর। এবং সেই ভোটের দখল নিতে মরিয়া দুই শিবির। বড়মা বীণাপাণিদেবীর মৃত্যুর পরই বিজেপি নেতৃত্ব একপ্রকার ঠিক করে ফেলে, শান্তনুকে প্রার্থী করা হবে। সেই রাজ্য নেতৃত্ব নাম পাঠায় কেন্দ্রে। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা তাতে সিলমোহরও দিয়ে দেন।
এদিন বিকালে দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ জেলার নেতা দেবদাস মন্ডল এবং কর্মী সমর্থকেরা দেখতে আসেন বনগাঁ হাসপাতালে৷কৈলাস বিজয়বর্গীয় চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন দীর্ঘক্ষণ তারপরই উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার প্রয়োজনে শান্তনু ঠাকুরকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল৷
উল্লেখ্য কিছুদিন আগেই শান্তনুকে নিয়ে অন্য জল্পনা দানা বাঁধে। ঠাকুরনগর থেকে কিছুটা দূরে বিজেপি-র প্রচারে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এসেছিলেন। কিন্তু মঞ্চে ছিলেন না শান্তনু। এর মাঝেই তৃণমূল রটিয়ে দেয়, বিজেপি-র সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না তাঁর। বাধ্য হয়ে পাশে চিকিৎসকদের বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করতে হয় শান্তনুকে। সেখানে তিনি বলেন, অসুস্থতার জন্য যোগীর সভায় যাননি তিনি। এর মধ্যে কোনও অন্য কারণ নেই। ভোটের একদিন আগে ফের এই ঘটনায় বনগাঁর নির্বাচনে উত্তাপ বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিকমহল।