দেশের সময় , ওয়েবডেস্ক :বাংলায় রেশন সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে ইডি। তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই তারা গ্রেফতার করেছে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্যবসায়ী তথা চাল-গমের মিল মালিক বাকিবুর রহমান এবং বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকেও। রেশনকাণ্ডে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা সন্দেশখালির শাহজাহান শেখকেও খুঁজছে ইডি।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে ইডির হাতে উঠে এসেছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। তদন্তকারীদের দাবি, ১০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সেই দুর্নীতির টাকা পাঠানো হয়েছে বিদেশে। এদিকে দুর্নীতির তদন্ত যথাযথ হয়নি। উল্টে মূল এফআইআর রাজ্য পুলিশ নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। আর এই প্রেক্ষাপটেই রেশন দুর্নীতির তদন্ত রাজ্য পুলিশের থেকে সিবিআইকে হস্তান্তর করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছে ইডি। সোমবার ছিল সেই মামলার শুনানি।
রেশন দুর্নীতিতে মোট ৬ টি এফআইের মধ্যে ৫ টিতে চার্জশিট দিয়েছে রাজ্য পুলিশ। এদিন বালিগঞ্জ থানায় হওয়া ৬ নং এফআইআরের পুলিশি তদন্তে স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। আগামী ৫ মার্চ এই আবেদনের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিন ৬ টি এফআইএরের কেস ডায়েরি রাজ্য পুলিশকে জমা দিতে এদিন নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। রাজ্যের কোথায় কোথায় রেশন দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ হয়েছে সেবিষয়ে রাজ্য পুলিশকে আগামী শুনানিতে জানাতে হবে।
রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত ছ’টি এফআইআর ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পুলিশের কাছে দায়ের হওয়া সত্ত্বেও তারা এ ব্যাপারে কোনও রকম পদক্ষেপ করেনি বলে দাবি করেছে ইডি। হাই কোর্টকে ইডি বলেছিল, ‘‘রাজ্যের তরফে রেশন দুর্নীতির তদন্ত এগিয়েছে একতরফা ভাবে। কারণ, রেশন বণ্টন এবং ধান কেনার ক্ষেত্রে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মন্ত্রী জড়িত ছিলেন। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। উপযুক্ত নথি ও তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল তদন্ত।’’
সংশ্লিষ্ট মামলাটিতে এদিন ইডির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী বলেন, ”রেশন দুর্নীতির ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে ২ হাজার কোটি বাংলাদেশ হয়ে দুবাই গেছে। এই দুর্নীতির তদন্তে নেমে শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি তদন্তকারীরা। ”
ইডির পক্ষে এও বলা হয়, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা রেশন দুর্নীতিতে যুক্ত রয়েছেন। একাধিক হেভিওয়েটরা ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। রাজ্যের আরও কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম তদন্তে উঠে এসেছে। গত ডিসেম্বর মাসে চিঠি লিখে পুলিশের কাছে তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইডির অভিযোগ, সেই তদন্ত যথাযথ হয়নি। রেশন দুর্নীতির মূল এফআইআর নষ্ট করেছে রাজ্য পুলিশ। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটেই রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্ত সিবিআইকে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
অন্যদিকে, এদিন রাজ্য সরকারের তরফের আইনজীবী সওয়াল করেন, ”আমরা একটি এফআইআরে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছি। ৬ টির মধ্যে ৫ টি এফআইআরে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। অথচ এক এজেন্সি চাইছে আর এক এজেন্সিকে দিয়ে তদন্ত করাতে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।” দুপক্ষের সওয়াল জবাবের পর বিচারপতি জানান, রেশন দুর্নীতি মামলায় প্রয়োজনে নতুন করে তদন্ত হতে পরে। আদালতকে না জানিয়ে তদন্তে চার্জশিট দেওয়া যায় না।
এদিন রেশন দুর্নীতি মামলায় পুলিশি তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানান, রেশন দুর্নীতি মামলায় যদি এখনও পুলিশি তদন্ত চলে, তা হলে তা স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি, এই সংক্রান্ত নিম্ন আদালতের বিচারপ্রক্রিয়াও চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে আদালত।
সোমবার উচ্চ আদালতে রেশন দুর্নীতি মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সেনগুপ্তের এজলাসে।বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এদিন জানান, রেশন দুর্নীতি তদন্তে প্রয়োজনে নতুন করে তদন্ত হবে। যে তদন্ত গুলি এখনও চলছে সেগুলিতে হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া চার্জশিট দেওয়া যাবে না।
শুনানি চলাকালীন আগামী ৫ মার্চ পর্যন্ত রেশন দুর্নীতির মামলাগুলির উপর পুলিশি তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হল। পাশাপাশি, এই মামলায় রাজ্যের কাছে কেস ডায়েরিও তলব করেছে আদালত।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, ২০১৯ সালে বালিগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া এফআইআরের ভিত্তিতে রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা শুরু হয়েছিল। তবে এখনও যদি পুলিশ সেই মামলার তদন্ত চালিয়ে যায়, তা হলে আপাতত তা বন্ধ রাখতে হবে বলেই জানিয়ে দিল বিচারপতি সেনগুপ্তের বেঞ্চ।