দেশের সময়, কলকাতা : গত সপ্তাহেই টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়েছে বনগাঁর তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্যকে। গ্রেফতারির সময় থেকেই উঠে আসছিল জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে তাঁর যোগের কথা। ইডির অফিসাররা নাকি বালুর একটি কাগজ দেখিয়েছিলেন শঙ্করকে। আর তারপরই গ্রেফতার। পরে আদালতে ইডি জানায়, এসএসকেএম-এ ভর্তি বালুর সঙ্গে তাঁর মেয়ের চিঠি চালাচালির কথা। সেই চিঠিতেই নাকি উল্লেখ রয়েছে শঙ্করের নাম।
বুধবার তিনি দাবি করলেন, ওই চিঠি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। উল্টে শঙ্কর ওরফে ‘ডাকু’র দাবি, কেউ বাঁচার জন্য তাঁর নামে কিছু করে থাকতে পারেন।
‘‘তা হলে আপনার নাম কেন লেখা হল চিঠিতে?’’ শঙ্করের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন উড়ে আসে। তিনি বলেন, ‘‘ভগবান জানে। কেউ বাঁচার জন্য হয়তো কিছু করতে পারে।’’
যদিও এর বেশি আর কোনও মন্তব্য করেননি শঙ্কর আঢ্য। বুধবার শিয়ালদহ বি আর সিং হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বনগাঁর দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্করকে। সেখান থেকে ইডি অফিসে নিয়ে ঢোকার সময়, এইটুকু জবাব দিয়েই ভিতরে চলে যান শঙ্কর আঢ্য। উল্লেখ্য, শঙ্করের গ্রেফতারির পর থেকে বার বার চর্চা হচ্ছিল বালুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা নিয়ে। যদিও সেই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন শঙ্কর। তাঁর বক্তব্য, যদি তিনি এতটাই ঘনিষ্ঠ হতেন জ্যোতিপ্রিয়র, তাহলে জ্যোতিপ্রিয় তাঁকে সরালেন কেন? আর এবার বালুর চিঠি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই আরও বিস্ফোরক শঙ্কর।
বনগাঁয় শঙ্করের বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার ব্যবসা রয়েছে। ইডির দাবি, অন্তত ৯০টি ফরেক্স সংস্থার মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে লেনদেন করেছেন শঙ্কর। তার মধ্যে অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা জ্যোতিপ্রিয়ের। মন্ত্রীর সঙ্গে ‘ডাকু’র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেও প্রমাণ পেয়েছে ইডি। বালুর ফোনের তথ্য ঘেঁটেও একাধিক বার তাঁর সঙ্গে শঙ্করের যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। মন্ত্রী নিজেও ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখে চিঠির কথা স্বীকার করে নেন। তবে শঙ্কর এ বিষয়ে সবটাই অস্বীকার করেছেন।
গত শুক্রবার রাতে শঙ্করকে তাঁর বনগাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ১৭ ঘণ্টা তল্লাশির পর গ্রেফতার করে ইডি। ওই দিনই সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতেও গিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা।
কিন্তু তাঁকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। উল্টে বাড়ির সামনে বিক্ষোভের মুখে পড়েন ইডি আধিকারিকেরা। বিক্ষুব্ধ জনতার মার খেয়ে তিন ইডি আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়। সেই শাহজাহান প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে শঙ্কর বুধবার জানান, তিনি শেখ শাহজাহান নামে কাউকে কোনও দিনই চেনেন না।
বুধবার শঙ্করকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল ইডি। সন্ধ্যায় সেখান থেকে ফেরার পথে গাড়ি থেকে নামার সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন শঙ্কর। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, মন্ত্রী বালুর চিঠিতে তাঁর নাম প্রসঙ্গে তিনি কী বলতে চান? উত্তরে শঙ্কর বলেন, ‘চিঠিতে নাম লিখে কি কিছু হয়? আমি কি কোনও ডিস্ট্রিবিউটর ?’