মন্ত্রীর প্রশ্রয়ে বেড়েছে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের সম্পত্তির পরিমাণ। কলকাতা ও দুবাইয়ে তাঁর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ আগেই পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। এ বার রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলাতেও ১০১টি সম্পত্তির হদিশ মিলল বাকিবুরের। এমনটাইই জানা যাচ্ছে ইডি সূত্রে :
দেশের সময় , কলকাতা: প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে ইডি-র চার্জশিটে রেশন দুর্নীতি মামলায় বাকিবুর রহমানের শ্যালক অভিষেক বিশ্বাসের নামও উঠে এল। চার্জশিটের ১৩৯ নম্বর পাতায় ইডি উল্লেখ করেছে, বাকিবুর রহমানের শ্যালক অভিষেক বিশ্বাসকে বন দফতরে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকই। ইডি-র দাবি বালুর সুপারিশেই চাকরি হয়েছিল অভিষেকের। বালুর নিয়ন্ত্রণে থাকা কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর টাকা যায় অভিষেকের কাছে। সেই টাকা পরবর্তীতে অন্যত্র সরিয়ে দেন বাকিবুরের শ্যালক। তারই ‘পুরস্কার’স্বরূপ চাকরি। চার্জশিটে এটাই উল্লেখ করেছে ইডি।
রেশন দুর্নীতিতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে বিশাল আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। ইডি চার্জশিটে সে বিষয়টি উল্লেখও করেছে। মঙ্গলবার বালু বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম চার্জশিট জমা দেয় ইডি। চার্জশিটে ১২ জনের নাম রয়েছে। তাতে বাকিবুরের নাম জ্বলজ্বল করছে। ১০টি কোম্পানির উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটি বাকিবুর রহমানের এবং বাকি পাঁচটি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নামে নথিভুক্ত।
রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে বাকিবুরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে ইডি। ইডি-র দাবি, বাকিবুরের স্ত্রী ও শ্যালকের অ্যাকাউন্টেও কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
বাকিবুরের শ্যালক অভিষেক বিশ্বাস এবং স্ত্রী জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারীদের জানিয়েছিলেন, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছিলেন বাকিবুরই। আর সেই বক্তব্যের সারবত্তা খুঁজে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের থেকে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন বাকিবুর রহমানের শ্যালকও। বালুকে ধরেই চাকরি বাগিয়েছিলেন তিনি। অন্তত চার্জশিটে তেমনই উল্লেখ করেছেন তদন্তকারীরা। বালুর ১০ টি কোম্পানির মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে সেই টাকা ঘুরপথে অন্যত্র সরিয়েছিলেন বাকিবুরের শ্যালক। সেটি চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় থেকেই বেড়েছে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের সম্পত্তির পরিমাণ। কলকাতা ও দুবাইয়ে তাঁর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ আগেই পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। এ বার রাজ্যের কিছু জেলাতেও ১০১টি সম্পত্তির হদিশ মিলল বাকিবুরের। অন্তত তেমনই জানা যাচ্ছে ইডি সূত্রে।
মঙ্গলবারই রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার বাকিবুর রহমান এবং মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। তাতে বলা হয়েছে, মন্ত্রীর আনুকূল্যেই সরকারি তহবিলের ৪৫০ কোটি টাকা গিয়েছে বাকিবুরের কাছে। বাকিবুরের সংস্থার অডিটরকেই উদ্ধৃত করে ইডি জানিয়েছিল, বাকিবুর তাঁর সংস্থার ৫০ কর্মীর নামে ভুয়ো কৃষক হিসেবে অ্যাকাউন্ট খোলেন।
সেই অ্যাকাউন্টগুলিতে ধান কেনার নামে ৪৫০.৩১ কোটি টাকার ফান্ড রিলিজ করা হয়। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এসেনসিয়াল কমোডিটি সাপ্লাই কর্পোরেশন লিমিটেড’ ওই ফান্ড দিয়েছিল। চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, এই সংস্থার মাথায় রয়েছেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ই। কিন্তু এত অর্থ নিয়ে কী করেছিলেন বাকিবুর। ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে সেই প্রশ্নের উত্তর।
মূলত উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়া জেলাতেই সেই সব সম্পত্তির সিংহভাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা, বারাসত এবং বাদুরিয়ায় বাকিবুরের সম্পত্তির হদিশ মিলেছে।
নদিয়ার বিভিন্ন গ্রামেও বাকিবুর এবং তাঁর আত্মীয় স্বজনের নামে সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছি বলে জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে। ইডির গোয়েন্দাদের ধারণা, এই সম্পত্তি বালুর আশকারাতেই তিলে তিলে বাড়িয়েছেন বাকিবুর।
কলকাতা নগর দায়রা আদালতে বাকিবুরদের বিরুদ্ধে চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে বেআইনি ভাবে রেশনের চাল আটা খোলা বাজারে বিক্রি এবং কমদামে ভুয়ো চাষী সাজিয়ে খাদ্যশস্য কেনা-সহ বিভিন্ন উপায়ে বছরের পর বছর এই দুর্নীতি চালিয়েছেন ব্যবসায়ী বাকিবুর। আর তাতে প্রশ্রয় দিয়ে গিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। যার ফলে দু’জনেই আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন।
ইডি সূত্রে খবর নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় বাকিবুরের ওই ১০১টি সম্পত্তির মূল্য ৯ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও কলকাতায় বাকিবুরের কোটি কোটি টাকার বাড়ি, আবাসন, রেস্তরাঁ, বারের হদিশ পেয়েছে ইডি। এমনকি দুবাইয়েও বাকিবুরের সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে ইডির তদন্তে।