রমন ভৌমিক ,দিল্লি : রাত পেরোলেই আরও একটি স্বাধীনতা দিবসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দেশ। প্রতি বছরই এই সময়ে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে। ফলে, নির্বিঘ্নে স্বাধীনতা দিবস পালন করতে কোনও রকম ত্রুটি রাখা হয় না কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে।চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
ইতিমধ্যেই দিল্লিতে স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি পর্ব একেবারে তুঙ্গে ৷
আগামিকাল, মঙ্গলবার ১৫ অগস্ট চিরাচরিত প্রথা মেনে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । জানা গেছে, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানী শহরকে।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যাতে নিরাপত্তায় কোনও ঘাটতি না থাকে, তার জন্য ১০ হাজারেরও বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে লাল কেল্লার চারপাশে। বসানো হয়েছে ১০০০ ফেসিয়াল রেকগনিশন ক্য়ামেরা , অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম । দুই বছর পর এই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে কোনও কোভিডবিধি থাকছে না।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সুমন নাল্লা বলেন, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পেয়ে গর্বিত দিল্লি পুলিশ। মোট ১০ হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন গোটা দিল্লি শহর থেকে শুরু করে লালকেল্লা এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার রাস্তায়।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লির নিরাপত্তা ব্য়বস্থা নিয়ে পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (আইন-শৃঙ্খলা) দীপেন্দ্র পাঠক জানান, সম্প্রতিই হরিয়ানার নুহ ও মণিপুরে যে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তা মাথায় রেখে আরও কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এবার প্রযুক্তির ব্যবহার করছে দিল্লি পুলিশ।
প্রায় ১ হাজার ফেসিয়াল রেকগনিশন ক্য়ামেরা ও ভিডিয়ো অ্যানালিটিক সিস্টেম বসানো হয়েছে। লালকেল্লায় বসানো হয়েছে অ্য়ান্টি-ড্রোন সিস্টেম। সন্ত্রাসবাদী হামলা রুখতে এয়ার ডিফেন্স গান, স্নাইপার, এলিট সোয়াট কম্যান্ডো ও শার্পশুটার মোতায়েন থাকবে লালকেল্লার বিভিন্ন অংশে। লালকেল্লার সামনে জ্ঞান পথ থেকে গোটা চত্বর ফুলের সাজে ও জি-২০ পোস্টারে সাজিয়ে তোলা হবে।
এ বছরের অনুষ্ঠানগুলিতে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে ১,৮০০ মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে থাকছেন দেশের ৬৬০টিরও বেশি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান, কৃষি উৎপাদক সংস্থা ও সংগঠনের ২৫০ জন কৃষক প্রতিনিধি এবং ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি কর্মসূচি’ তথা ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা’র ৫০ জন অংশগ্রহণকারী। নতুন সংসদ ভবন সহ কেন্দ্রীয় বড় বড় প্রকল্প রূপায়ণের সঙ্গে যুক্ত ৫০ জন শ্রমিকও উপস্থিত থাকবেন বিশেষ অতিথি রূপে। ৫০ জন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির ৫০ জন শিক্ষক ও সেবাকর্মী এবং মৎস্যজীবীদের প্রতিনিধিরাও আমন্ত্রিত এই অনুষ্ঠানে।
ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল, ইন্ডিয়া গেট, বিজয় চক, নয়াদিল্লি রেল স্টেশন, প্রগতি ময়দান, রাজঘাট, জামা মসজিদ মেট্রো স্টেশন, রাজীব চক মেট্রো স্টেশন, দিল্লি গেট মেট্রো স্টেশন, আইটিও মেট্রো গেট, নওবতখানা এবং শীষগঞ্জ গুরুদ্বার সহ ১২টি বিভিন্ন স্থানে সেলফি পয়েন্টেরও ব্যবস্থা থাকছে। এই সেলফি পয়েন্টগুলি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচির আদলে তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লালকেল্লায় অভ্যর্থনা জানাবেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী শ্রী অজয় ভাট এবং প্রতিরক্ষা সচিব শ্রী গিরিধর আরামেন। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানাবেন ভারতের তিন বাহিনী এবং দিল্লি পুলিশ বাহিনী। প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার দেবেন দেশের সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও দিল্লি পুলিশের একজন করে অফিসার এবং ২৫ জন করে সেনা-কর্মী।
অন্যদিকে, ভারতীয় নৌ-বাহিনীর পক্ষ থেকে একজন আধিকারিক ও ২৪ জন সেনা-কর্মী থাকবেন বিশেষ টিমটিতে। প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানোর প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবে ভারতীয় সেনাবাহিনী। গার্ড অফ অনার অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন মেজর বিকাশ সাঙ্গোয়ান। ভারতীয় সেনা, বিমান ও নৌ-বাহিনীর পক্ষ থেকে আবার পৃথক পৃথকভাবে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলির পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন যথাক্রমে মেজর ইন্দ্রজিৎ সচিন, এম ভি রাহুল রমন এবং স্কোয়াড্রন লিডার আকাশ গঙ্ঘাস। দিল্লি পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্ব তথা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন অ্যাডিশনাল ডিসিপি সন্ধ্যা স্বামী।