WB Madhyamik Result: প্রথম দশে সমাদৃতা ও বিদিশার সাফল্যে উচ্ছ্বাস বনগাঁয়: দেখুন ভিডিও

0
516

অর্পিতা বনিক – রিয়া দাস : বনগাঁ: বেশ কয়েক বছর পর অভাবনীয় সাফল্য। সাফল্য বললে একটু ভুল হবে। এবারের মাধ্যমিকে জোড়া সাফল্য যোগ হল বনগাঁর মুকুটে। আর এই সাফল্যের মূল কাণ্ডারী বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। একই স্কুল থেকে দু’জন ছাত্রী জায়গা করে নিল মাধ্যমিকের মেধা তালিকায়। একজন চতুর্থ, অন্যজন ষষ্ঠ। প্রথমজন সমাদৃতা সেন। অপরজন বিদিশা কুণ্ডু। এই দুই কৃতী ছাত্রীর কৃতিত্বে এখন উচ্ছ্বসিত সীমান্ত শহর বনগাঁর মানুষ।

সেই সঙ্গে গর্বের সীমা নেই কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের। বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠও কাউন্সিলারদের সঙ্গে নিয়ে কৃতীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁদের এগিয়ে চলার পথে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। দেখুন ভিডিও

সমাদৃতার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৯। বাড়ি বনগাঁর কোড়ারবাগান এলাকায়। ছোট থেকেই সে পড়াশোনায় মনোযোগী। বাবা উদয় সেন, মা শম্পাদেবী দ’জনেই শিক্ষক। উদয়বাবু নিউ বনগাঁ বয়েজ স্কুলের শিক্ষক। শম্পাদেবী হাবড়া গার্লসের শিক্ষিকা। মেয়ের সাফল্যে খুশি তাঁরা। বাড়িতে ভিড় লেগেই রয়েছে। বহু মানুষ এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছেন সমাদৃতাকে। রেজাল্ট নিয়ে কেমন আশা ছিল, সমাদৃতার কথায়, পরীক্ষার ফল ভাল হবে জানতাম। তবে চতুর্থ হব, এতটা ভাবিনি। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সে। তার কথায়, গতে বাঁধা ছকে পড়াশোনা করে লাভ নেই। পড়াশোনাকে ভালবাসতে হবে। আমার পড়ার কোনও টাইম ছিল না। ঘড়ি ধরে পড়তাম না। যখনই ইচ্ছা করত, পড়তে বসতাম। মা শম্পাদেবীও জানিয়েছেন, মেয়েকে কখনও পড়তে বসার কথা বলতে হত না। সে নিজে থেকেই পড়তে বসত। পড়ার পাশাপাশি গান গাইতে ও গিটার বাজানোর শখ রয়েছে সমাদৃতার। সমাদৃতার কথায়, নিয়মিত পড়াশোনা করতাম। তবে প্রতিদিনই যে সাত-আট ঘণ্টা পড়তাম এমনটা নয়। কোনও কোনওদিন তিন-চার ঘণ্টাও পড়েছি। পড়াটা শেষ করাই আমার কাছে মূল বিষয় ছিল। সেটা শেষ হতে যত সময় লাগত। আপাতত সায়েন্স নিয়ে পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করাই টার্গেট। ভাবী পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তার বার্তা, বাইরে থেকে কেউ চাপিয়ে দিলে হবে না। নিজেকেই সংকল্প করতে হবে যে, আমার পড়াটা আমাকেই শেষ করতে হবে। নিজেই একটা নকশা তৈরি করতে হবে। এগতে হবে সেই মতো। তা হলেই যা চাও তাই হবে।

মেয়েকে নিয়ে কী ভাবনা? বাবা জানালেন, মেয়ে কী করবে তা নিয়ে ওর ভাবনাচিন্তার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার ইচ্ছা ছিল, ও ডাক্তারি পড়বে। কিন্তু মেয়ের ইচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা। সমাদৃতার বিষয় ভিত্তিক নম্বর বাংলায় ৯৮, ইংরেজিতে ৯৮, ইতিহাসে ৯৪, ভূগোলে ৯০, জীবন বিজ্ঞানে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০ ও অঙ্কে ১০০।

অন্যদিকে, বনগাঁ রেলবাজারের বাসিন্দা বিদিশা কুণ্ডু। বাবা কিশোরকুমার কুণ্ডু মাটিয়া হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ, মা ববি মিত্র গাড়াপোঁতা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা তার। কিশোরবাবুর কথায়, জানতাম মেয়ে ভাল রেজাল্ট করবে। আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। এটা আমার জীবনে অন্যতম বড় প্রাপ্তি। টিভিতে নিজের নাম ঘোষণার পর আনন্দে কেঁদে ফেলে বিদিশা। সে জানিয়েছে, অবসরে গল্পের বই পড়ে, ছবি এঁকে সময় কাটে তার। গান গাইতে ভালবাসে। তার প্রিয় লেখক রাস্কিন বন্ড। দেখুন ভিডিও

বিদিশা অঙ্ক ও ভৌত বিজ্ঞানে একশোর মধ্যে ১০০ পেয়েছে। জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, বাংলা ও ইংরেজিতে পেয়েছে ৯৮, ভূগোল ও ইতিহাসে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৬। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা করে গৃহশিক্ষক ছিল। সঙ্গে বাবা ভূগোল দেখিয়ে দিতেন। নিজের রেজাল্ট নিয়ে খুশি হলেও মনের কোণে একটা আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে। বিদিশার কথায়, ভূগোল ও জীবন বিজ্ঞানে ১০০ নম্বর আশা করেছিলাম। সেখানে নম্বর অনেকটাই কমে গিয়েছে।

সমাদৃতা ও বিদিশা দু’জনেই নিজের স্কুল থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চায়। বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার ১৬০ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। প্রত্যেকেই পাশ করেছে। এই স্কুলের শিক্ষিকা পদ্মাবতী মণ্ডল বলেন, আমিও কুমুদিনী স্কুলের ছাত্রী ছিলাম। এখন সেই স্কুলে শিক্ষকতা করি। ছাত্রীদের সাফল্যে আজ খুব গর্ব হচ্ছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শম্পা বক্সি জানিয়েছেন, এটা আমাদের কাছে সত্যিই গর্বের বিষয়। আমরা চাই, ওরা আগামীতে আরও ভাল রেজাল্ট করুক। ওদের সঙ্গে স্কুলের বাকি ছাত্রীদেরও সাফল্য কামনা করি।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে প্রথম ও মাধ্যমিকে তৃতীয় হয়েছে টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র অর্ক মণ্ডল। বাড়ি বসিরহাটের ময়লাখোলা এলাকায়। পড়াশোনার পাশাপাশি গল্পের বই পড়ার শখ তার। গানবাজনা ভালবাসে। ছবি আঁকে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার শখ। বাবা কিরণচন্দ্র মণ্ডল মনিহরি দোকান চালান। মা অপর্ণা মণ্ডল গৃহবধূ। তাঁরা সবসময় অর্ককে পড়াশোনায় উৎসাহ জুগিয়েছেন। তবে সাফল্যের পিছনে মিশনের মহারাজ ও গৃহশিক্ষকদের অবদানের কথা জানাতেও ভোলেনি অর্ক। মিশনের প্রধান শিক্ষক স্বামী পূর্ণাময়ানন্দ বলেন, অর্ক মেধাবী ছাত্র। তার মধ্যে শ্রদ্ধা ভক্তিও রয়েছে। জীবনে ও অনেক বড় হবে। এই কামনা করি। অর্ক জানিয়েছে, ভাল ফল করার জন্য একই বিষয়ের একাধিক বই পড়েছি। তবে খুব বেশিক্ষণ পড়িনি কোনওদিনই। দিনে ৬-৭ ঘণ্টা পড়তাম। উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপা দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সৌম্যদীপ মল্লিকও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সে। সায়েন্স অলিম্পিয়াডে রাজ্যে একবার চতুর্থ হয়েছিল সে। বাবা সন্দীপবাবু রসায়ণের শিক্ষক। তাঁর কথায়, ছোট থেকেই বইমুখী করিয়েছিলাম ছেলেকে। কীভাবে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেতে হয়, সেই পদ্ধতি শিখিয়েছিলাম। টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ছাত্র তন্ময় ঘোষ মাধ্যমিকে দশম হয়েছে। বাড়ি টাকি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় তন্ময়। পড়াশোনার পাশাপাশি সে গান, কবিতা আবৃত্তি ও ছবি আঁকতে ভালবাসে।
মাধ্যমিকে সপ্তম হয়েছে বসিরহাট পূর্ণচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুচেতনা রায়। বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যাপনা করার ইচ্ছে তার। নাচ, গান ও ছবি আঁকায় পারদর্শী। ছিপ দিয়ে পুকুরে মাছ ধরতে ভীষণ ভালবাসে। বাব তিমিরবরণ রায়, মা শুভ্রা সাহা রায়। শুভ্রাদেবী জানান, মাধ্যমিকের আগে মেয়ে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পড়েছে। তবে আরও একটু বেশি নম্বর আশা করেছিল সুচেতনা।
অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্র তনয় টিকাদার দশম হয়েছে মাধ্যমিকে। ভবিষ্যতে আইএএস হতে চায় সে।

Previous articleDebdutta Majhi ranks 1st position in Madhyamik 2023: ৭০ বছরের খরা কাটিয়ে কাটোয়া থেকে মাধ্যমিকে প্রথম দেবদত্তা,মেধা তালিকায় পূর্ব বর্ধমানের ১৭ জন
Next articleAbhishek Banerjee at CBI office Live : প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর নিজাম থেকে বেরোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here